মেটাভার্স কি (Metaverse) কিভাবে কাজ করবে মেটাভার্স

মেটাভার্স কি (Metaverse) কিভাবে কাজ করবে মেটাভার্স

বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত শব্দটি হলো মেটাভার্স (Metaverse)। তবে ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গ তার প্রতিষ্ঠান, ফেসবুকের নাম পরিবর্তন করে মেটা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে মেটাভার্স প্রযুক্তি নিয়ে বেশি আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়।

ধারনা  করা হচ্ছে এই মেটাভার্স প্রযুক্তিই হবে ইন্টারনেটের সফলতা। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আজকে আমরা কি নিয়ে কথা বলবো।

হ্যাঁ, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মেটারভার্স সম্পর্কে জানবো। মেটাভার্স কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে কথা বলবো। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় আসা যাক।

মেটাভার্স কি

মেটাভার্স কি

মেটাভার্স কি?

মেটাভার্স হলো একটা ভার্চুয়াল জগত যেখানে বাস্তব পৃথিবীর মতোই পরিবেশ থাকবে। সবাই সবার সাথে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ, মিটিং, শপিং ইত্যাদি করতে পারবে। এই ভার্চুয়াল জগতে মানুষের প্রতিকৃতি বা অ্যাভাটার তৈরি করা যাবে যেটা হবে তার বাস্তব চেহারার মতো অনেকটা।

এটা হবে একটা ত্রিমাত্রিক বা থ্রি-ডি জগত, যেখানে মানুষ পৃথিবীর মতোই নানারকম কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবে। এই শব্দটার পেছনে একটা রহস্য লুকায়িত আছে। আচ্ছা বলুন তো, মেটাভার্স শব্দটা সর্বপ্রথম কত সালে প্রচলিত হয়? জানেন কি ?

মেটাভার্স শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন বিখ্যাত আমেরিকান লেখক নিল স্টিফেনসন (Neal Stephenson), ১৯৯২ সালে তার লেখা “Snow Crash” নামক সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।

২০১৭ সালে এই লেখক ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেওয়া একটি ইন্টারভিউতে জানান, তিনি সর্বপ্রথম মেটাভার্স শব্দটি ব্যবহার করেন এবং এর অর্থ হলো কোথাও শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও উপস্থিত থাকা। পরবর্তীতে এটি প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

গুগল আর্থ এর প্রতিষ্ঠাতা ব্রিয়ান ম্যাকলেনডন বলেন, “মেটাভার্স ধব্দের ধারনা থেকেই তার মাথায় গুগল আর্থ তৈরির পরিকল্পনা আসে”।

সহজ ভাষায় মেটাভার্সকে সঙ্গায়িত করতে গেলে, মেটাভার্স হলো একটা ভার্চুয়াল জগত যেটা ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে তৈরি হবে এবং সেখানে আপনি সব করতে পারবে।

চাইলে অনলাইন শপিংয়ের সময় পছন্দের পোশাকটার ভার্চুয়াল ভার্সনটা পরে ট্রায়াল দিতে পারবেন, বন্ধুরা একসাথে না থেকে মেটাভার্সের মাধ্যমে একত্রে মিলিত হয়ে আড্ডা দিতে পারবেন।

এখানে মূলত আপনার মতো দেখতে সাদৃশ একটা অবতর তৈরি হবে, বাস্তবে আপনি হাটলে ভার্চুয়াল সেই অবতরটাও হাটবে এবং আপনি যেরকম অঙ্গভঙ্গি ও আচরন করবেন সেটাও আপনার মতো কার্যক্রম করবে। এবার আসুন জেনে, নেই এই মেটাভার্স প্রযুক্তি আসলে কিভাবে কাজ করবে।।

মেটাভার্স কিভাবে কাজ করে?

স্নো ক্রাশ নামক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে লেখক স্টিফেনসন যেমনটা বর্ণা করেছিলেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বাস্তবে তেমনটাই করতে চলেছেন। এখানে থ্রি-ডি অ্যানিমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাস্তবের মতোই একটা থি-ডি জগত তৈরি করা হবে।

আর যারা এই মেটাভার্স ব্যবহার করবে তাদের সকলের জন্য একটি করে ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার তৈরি হয়ে যাবে, সেটার চেহারা ও আকৃতি হবে ঠিক বাস্তবের মতো হবে। এখানে ব্যবহার করা হবে ভিআর বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি টেকনোলোজি।

অনেকেরই হয়তো মনে হতে পারে যে, ভিআর এবং মেটাভার্স কি তাহলে একই টেকনোলোজি। তাদের দ্বিধাদ্বন্দ দূর করতে উত্তরে বলবো, না। মেটাভার্সে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হলেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির চেয়ে মাটাভার্স হবে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ।

আরো পড়ুন: এসইও কি SEO এসইও বাংলা টিউটোরিয়াল পর্ব-১

একটা ফিচার বাটন ফোন ও একটা স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মধ্যে তুলনা করে বিষয়টি বুঝানো যেতে পারে। এখানে ভিআর হলো ফিচার বাটন ফোন, আর মেটাভার্স হলো অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট ফোন। ভিআরের চেয়ে এই মেটাভার্স টেকনোলজি কয়েক শত গুন চৌকশ ও উন্নত হবে।

ব্যবহারকারী বিশেষ ধরনের হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে ও চশমা পরিধান করবে, সেই সাথে হাতে বিশেষ ধরনের গ্লাভসও থাকবে। আর এগুলো বিভিন্ন সেন্সরের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ক ও শারীরিক সিগন্যাল পরিমাপ করতে সক্ষম।

একজন যখন মেটাভার্সের জগতে প্রবেশ করবে তখন সে এগুলো পরিধান করবে এবং সে যেমন আচরন ও অঙ্গভঙ্গি করবে তার অবতরটাও ভার্চুয়াল জগতে তেমনটাই করবে।

ধারনা করা হচ্ছে, অনলাইন কেনাকাটা ও অফিস ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপ্লব সাধিত হবে এই প্রযুক্তি। পণ্য কেনাকাটায় ক্রেতা বাসায় বসেই অনলাইনের মাধ্যমে তার কাঙ্খিত পোশাকের ভার্চুয়াল ভার্সন দিয়ে ট্রায়াল করে দেখতে পারবে তাকে সেটাতে কেমন দেখাচ্ছে।

আবার অফিসগামী কর্মীদের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি বেশ সুবিধা দিবে। এখন যেমন ভিডিও কলে যোগাযোগ করে বাসায় থেকে অফিস করা যায়, কিন্তু তখন শুধু ভিডিও কলের মাধ্যমে অফিস করার বিষয়টা সিমাবদ্ধ থাকবে না। সব কলিগরা এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় একত্রে মিলিত হতে পারবে, সামনাসামনি দেখা করত পারবে।

মেটাভার্সের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

মেটাভার্স নিয়ে সবেমাত্র পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছে ফেসবুক, গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, স্ন্যাপ, সনি, রোবলক্স সহ এপিকের মতো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।

গত ২৮ অক্টোবর তারিখে ফেসবুক তাদের কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে মেটা রাখে। এখন ফেসবুকের বর্তমান নাম মেটা ইনকর্পোরেট। ফেসবুক আশা করছে, মেটাভার্সের জগতে তাদের প্রতিষ্ঠানই হবে সবচেয়ে বড় সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।

মেটাভার্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগত তৈরি করা কোনো একটা কোম্পানির পক্ষে সম্ভব না, ফেসবুক এর পেরেন্ট কোম্পানি “মেটা” নিজেই একটা টুইটার পোস্ট এ জানিয়েছিলো। মেটাভার্সকে বাস্তবে রূপ দেওয়া ও একে আরো অনেকদূর এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকগুলো কোম্পানির সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

এখনো আমরা এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় প্রবেশ করিনি, সবেমাত্র এর দারপ্রান্তে পৌছেছি। ধারনা করা হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ হতে এখনো ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগবে। তবে মেটাভার্সের ভবিষ্যৎ ভালো।

এর মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সকল কাজই করতে পারবো ইন্টারনেটে। এর উন্নয়ন আমাদেরকে ইন্টারনেটের প্রকৃত স্বাদ নিতে সাহায্য করবে। মেটাভার্সের সাথে সাথে এনএফটি বা (নন ফানজিবল টোকেন) এর চাহিদাও বৃদ্ধি পেতে পারে। সেটা নিয়ে আমরা আরেকদিন আলোচনা করবো।

শেষ বার্তা

যেহেতু এটা আমাদের জন্য একটা নতুন ও ভিন্ন ধরনের টেকনোলোজি এবং এ নিয়ে একটা হাইপ উঠলেও সেভাবে কাজ শুরু হয়নি।

তাই মেটাভার্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর সময় এখনো আসেনি। ভবিষ্যতে মেটাভার্স কি এই সম্পর্কে আরো তথ্য যুক্ত করবো আমাদের ব্লগে। এরপরে আপনারা কোন বিষয়ে লেখা চান সেটা আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।।

2 Comments

    • Admin June 20, 2022

Leave a Reply