মানিকগঞ্জ এর হাজারী গুড় তৈরির প্রক্রিয়া ও ইতিহাস
খেজুরের গুড় khejur gur এই শব্দটির সাথে সকলেই কম বেশি সুপরিচিত।খেজুরের গুড়ের স্বাদ গ্রহন করেনি এমন কাউকে খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বাংলার আদিকাল থেকে এপর্যন্ত গাছিরা খেজুর গাছ থেকে যে রস পাওয়া যায় তা সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করে চলেছেন, এখনও করছেন। খেজুরের গুড় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাতে পাওয়া গেলেও বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি লোভনীয় হাজাড়ি গুড়ের দেখা মিলে একমাত্র মানিকগঞ্জ জেলায়।
হাজারী গুড় মূলত তৈরি হয় মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার সিকদারপাড়ায় । একটা সময় ঐ গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার এই গুড় তৈরির সাথে যুক্ত ছিলেন। কালের বিবর্তনে তা আজ অনেকটাই কমে আসছে। এখন কিছু সংখক পরিবার এই পেশার সাথে সম্পৃক্ততা ধরে রেখেছেন । এছাড়া শিবালয়, ঘিওর, হরিরামপুরেও দেখা মিলে খেজুর গুড়ের। অঞ্চল ভেদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই লোভনীয় খেজুরের গুড় khejur gur পাওয়া যায়।
বহুকাল আগে থেকে এই গুড় মানুষের খুব প্রিয় একটি খাবার। তবে বিশেষ করে মানিকগঞ্জ জেলার বিশেষ প্রক্রিয়ায় খেজুরের রস থেকে তৈরি হয় হাজারী গুড় যা বেশ সুপরিচিত। আজ আপনাদের সামনে বিখ্যাত এই হাজারী গুড় নিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
হাজারী গুড় এর ইতিহাস ( History of Hajari gur )
ইতিহাস বলতে গেলে অনেক কিছুই সামনে আসে তবে সবথেকে গ্রহন যোগ্য ইতিহাস বলার চেষ্টা করবো তাহলে চলুন এবার এর পেছনের কিছু আশ্চর্যজনক অবাক করা ইতিহাস জেনে নেই। পুরোনো ইতিহাসে জানা গেছে রানী এলিজাবেথ ভারতবর্ষ সফর কালে রানির খাবার টেবিলে দেয়া হয়েছিলো হাজারী গুড়। রানী কৌতূহলবশত হাতে নিয়ে চাপ দিতেই ভেঙ্গে হাজার টুকরা হয়ে যায় এবং এই গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে যান রানি। আরো জেনে খুশি হবেন যে রানী খুশি হয়ে হাজাড়ি পরিবারকে একটি হাজাড়ি নামক সিল উপহার দেন,যা এখনো ব্যাবহার করা হয় গুড়ে সিল মহর দেয়ার জন্য এবং এর প্রচলন এখনও চলমান রয়েছে।যা এখন থেকে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য। আর সেই থেকে এর নাম হয় হাজারি গুড় ।
হাজারী গুড় তৈরির প্রক্রিয়া
উপকরন – হাজারী গুড় এর একমাত্র উপকরন খেজুরের রস।
গ্রাম বাংলার গাছি ভাইয়েরা শীতকালে মাটির তৈরি হাঁড়ি আগের দিন বিকালে বা সন্ধ্যাবেলা বেঁধে রেখে আসেন খেজুর গাছে এবং সারারাত দীর্ঘ অপেক্ষার পর হাড়ি ভর্তি রসগুলো ভোরবেলা পাখির কলকাকলীতে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন তাদের নিজ বাড়িতে, পরিষ্কার ছাঁকনি দিয়ে তা ছেঁকে নেওয়া হয়।
রস জ্বাল করার জন্য যে চুলা ব্যবহার করা হয় তাকে আঞ্চলিক ভাষায় বাইন বলে। সেই চুলোর ৪ টি থেকে ৮ টি মুখ থাকে, মানে একসাথে ৪ থেকে ৮ টি হাড়িতে রস জ্বাল করা যায়। জ্বাল করার সময় মাঝে মাঝে ওই গরম রসের উপর আরেকটি পাত্র থেকে কাঁচা রস মিশিয়ে জ্বাল করা হয় এটা একটি বিশেষ প্রক্রিয়া এটাই মূলত অরিজিনাল হাজারী গুড় বানানোর নিয়ম। উল্লেখ্য কেউ কেউ আবার টিনের পাত্রে রস জ্বাল করেও হাজারী গুড় বানিয়ে থাকেন।
বিশেষ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় জ্বাল দেওয়া হয় উচ্চ তাপমাত্রায়। উল্লেখযোগ্য যে ১৫-২০ কেজি রস জ্বাল দিয়ে ঘনত্ব বাড়ানো হয় এবং রসের রং পরিবর্তন হয়। বিশেষত্ব হচ্ছে এতগুলো রস জ্বাল দিয়ে মাত্র ৫-৭ কেজি গুড় বানানো হয়।
রস জ্বাল দেয়া হয়ে গেলে তাকে একটি মাটির পাত্রে রেখে কাঠের হাতল দিয়ে অনবরত নাড়তে থাকে। নাড়তে নাড়তে একসময় ঐ রস ঘন হয়ে আসে ও রঙের পরিবর্তন হয়ে সাদা কালার ধারণ করে এবং গুড় তৈরীর জন্য প্রস্তুত হয় । তারপর সেই ঘন রস কে ছোট ছোট পাত্রে রেখে বাজার জাত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়। সবশেষে হাজারী লিখা সিলমোহর লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়।
হাজাড়ি গুড়ের রঙ সাদা, হাতে নিয়ে সামান্য চাপেই ভেঙে যায়। সেই সঙ্গে এর পাগল করা সুগন্ধ তো রয়েছেই। যখন শীতের সকাল শুরু হয়,তখন গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে, বিশেষ করে যে সব বাড়িতে হাজাড়ি গুড় প্রস্তুত করা হয় সেখান থেকে ভেসে আসে হাজারী গুড় এর সুগন্ধ। চারিদিকে যেন শুরু হয় হাজাড়ি উৎসব, চিরচেনা মনে হয় যার স্বাদ এবং গন্ধের সাথে বাংলার প্রতিটি মানুষ সুপরিচিত। অনেকেই দেখতে ভিড় করে গুড় প্রস্তুতের সময়।
পিঠা পায়েসে খেজুর গুড় khejur gur
হাজাড়ির স্বাদ,গন্ধ,ভালোবাসা শেষ হওয়ার নয়।বাংলার এক বিশেষ আয়োজন মানিকগঞ্জ জেলার মানিকদের তরফ থেকে। যা যুগ যুগ ধরে চলমান থাকবে আশা রাখছি এবং এর চিরচেনা স্বাদ মুগ্ধ করবে প্রতিটি মানুষকে। যখন শীত চলে আসে তখন থেকে যেন এর আগমন শুরু হয়। গ্রাম বাংলায় যেন শুরু হয় রস এবং গুড় খাওয়ার উৎসব। শুধু তাই নয় হাজাড়ি গুড় থেকে বিভিন্ন পিঠা,পায়েসের আয়োজনে মেতে উঠে বংলার মানুষেরা। শীত মৌসুমে বিয়ে বাড়ি,অফিস পার্টি,বনভোজন,পারিবারিক আয়োজন,জন্মদিনে হজাড়ি গুড় দিয়ে বানানো হয় বাহারি খাবার, যেমন ভেজানো পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটি শাপটা পিঠা ইত্যাদি।
খেজুর গুড়ের উপকারিতা – khejur gur benefits
এখন আসি এর উপকার নিয়ে,আমাদের দেশের প্রচলন অনুযায়ী শুভ কাজ,ভালো কিছুর উদ্যোগ মানেই মিষ্টি মুখ,ঠিক তেমনি হাজাড়ি গুড় শীতকালে মিষ্টির বিশেষ ভূমিকা পালন করে।এছাড়া পায়েসে যদি চিনির পরিবর্তে হাজাড়ি গুড় দিয়ে দেওয়া হয় এর স্বাদ,গন্ধই যেন ভিন্ন হয়ে যায়।এছাড়া খেজুর গুড়ে khejur gur রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব পূরন করে। এতে নানা সমস্যা থেকে সুস্থ থাকা যায়। অনেকে চিনির পরিবর্তে গুড় খেয়ে থাকেন কারন গুড় রক্তে সহজেই মিশে গ্লুকোজের পরিমান বৃদ্ধি করে না। হজমে সহযোগিতা করে এই খেজুর গুড় khejur gur.
হাজারী গুড়ের দাম – khejur gur price
হাজারী গুড় এর দাম যদিও একটু বেশি তবে যেখানে তৈরি হয় সেখান থেকে আনতে পারলে দাম একটু কম পরে, তবুও দামের রেঞ্জ একটু বলে রাখি ১০০০ বা ১২০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত এর দাম হয়ে থাকে। সরাসরি যারা তৈরি করেন তাদের কাছ থেকে আনতে পারলে ১০০০ -১২০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাবে। সেখানে যেতে হলে মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে ঝিটকার বাসে উঠলেই সেখানে যাওয়া যাবে। মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দুরুত্বে অবস্থিত এই গ্রাম।
যারা অনেক দূরে থাকেন তাদের অনেকেরই হয়তো মানিকগঞ্জ গিয়ে গিয়ে এই সুস্বাদু খেজুর গুড় khejur gur নেয়া সম্ভব না, অনেকের ইচ্ছে আছে কিন্তু যেতে পারছেন না, তাই আপনারা কিভাবে ঘরে বসেই পেতে পারেন আমরা এ বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করবো। শীত আশা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন আর আমাদের সাথেই থাকুন। আর কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না । ধন্যবাদ সবাইকে ।।
Visitor Rating: 5 Stars
🌹💖🌹💖🌹💖🌹💖
মানিকগঞ্জ এর হাজারী গুড়
তৈরির প্রক্রিয়া ও ইতিহাস
তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ
🌹💖🌹ভাই 💖🌹💖
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্ট করার জন্য, আশা করি আমাদের সাথেই থাকবেন
Very good info. Lucky me I ran across your site by chance (stumbleupon).
I’ve book-marked it for later!
I’m extremely impressed with your writing skills as well as with the format to your blog.
Is that this a paid subject or did you customize it yourself?
Either way stay up the nice quality writing, it is rare to look a nice weblog like this one these days.