NFT কি এন এফ টি বা নন ফানজিবল টোকেন

NFT কি এন এফ টি বা নন ফানজিবল টোকেন

বর্তমানের নেট দুনিয়ার অনেক বেশি পরিচিত এবং সদ্য শোনা একটি শব্দ হলো এনএফটি (NFT- Non Fungible Token) বা নন ফানজিবল টোকেন। কিন্তু আমরা কি জানি এনএফটি বা নন ফানজিবল টোকেন কি? (What is NFT), এটা দিয়ে কি করে? বা এর কাজ কি? কেনইবা এটির এতো বহুল ব্যবহার?

এনএফটি (NFT) বা নন ফানজিবল টোকেন কি?

NFT কি বা নন ফানজিবল টোকেন হচ্ছে বিশেষ এক  টোকেন এবং এটি ভবিষ্যৎ জগতে প্রবেশে একটি প্লাটফর্মও বটে। ভবিষ্যত জগত নতুন প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রনে চলে যাবে। এই জগত বর্তমানের মত থাকবেনা। সবার হাতের নাগালে থাকবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তি। সেই জগতে প্রবেশের ১ম ধাপ কিংবা সেই ভবিষ্যৎ জগতে প্রবেশের দার উন্মোচন করছে এই এনএফটি।

এনএফটি বা NFT এর ব্যবহার

আমরা আমাদের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য যেমন কোন প্রোপার্টি বা সম্পত্তি কিনে থাকি। তেমনি এনএফটি বা নন ফানজিবল টোকেন এর মাধ্যমে ডিজিটাল আর্ট এর মত প্রোপার্টি বা সম্পত্তি কেনা হয়। তবে এখানে পার্থক্য হচ্ছে রিয়েল প্রোপার্টি ধরা, ছোঁয়া যায় কিন্তু এনএফটি ধরা, ছোঁয়া যায় না।

আর আমরা সাধারণত রিয়েল প্রোপার্টি টাকার বিনিময়ে কিনি কিন্তু এনএফটি ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে কিনি। তবে প্রচলিত মুদ্রা দিয়েও এনএফটি কেনা যায়। একে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিনিময় প্রথা বলা যেতে পারে।

NFT কি

NFT কি

এই NFT ব্যবহার করে একজন একটি প্রপার্টি কিনে পরবর্তীতে তা বিক্রিও করতে পারেন। এই নন ফানজিবল টোকেনগুলো আপনি ধরতে পারবেন না বা ছুঁতে পারবেন না। শুধ মাত্র ডিজিটাল মাধ্যমেই এটির ব্যবহার হয়ে থাকে।

NFT ব্যবহার করে কি করা হয়?

এনএফটি হলো ডিজিটাল সম্পত্তি। এই ডিজিটাল সম্পত্তিটি ব্লক চেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে যাচাই করা হয়। সাধারণত এটি ফানজিবল নয় এমন সম্পত্তি বিনিময়ে ব্যবহার করা হয়। ফানজিবল নয় বলতে পরিবর্তনশীল নয় এরুপ বস্তুকে বুঝানো হয়। সকল সম্পত্তি বিনিময় যোগ্য নয়।

কিছু সম্পত্তি এমন যা মাস্টারপিস বা মাত্র এক পিস। তাই এই সকল জিনিস ক্রয় বিক্রয় বা বিনিময়ের ক্ষেত্রে নন ফানজিবল টোকেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই তালিকায় আরও কিছু পণ্য রয়েছে যেমন ডিজিটাল আর্ট, মিউজিক, ডোমেইন, গেমস, ফিল্ম, কার্টুন এবং অন্যান্য জিনিস।

আরো পড়ুন : মেটাভার্স কি 

NFT কবে এবং কার হাত ধরে এসে ছিল?

এনএফটি খুব একটা পুরাতন নয়। ২০১৪ সালেই প্রথম এটি বা এর কথা প্রকাশ পায়। কেভিন মাকয় এবং অনিল দাশ এর জনক। আর সামনে আসে কেভিন মাকয় এর স্ত্রী মিসেস মাকয় এর বানানো এক  ভিডিওর মাধ্যমে।

কেভিন মাকয়, মিসেস মাকয় এর ভিডিও টি ব্লক চেইনে রেজিস্টার করে এবং তা অনিল দাস এর নিকত $৪ ডলারে বিক্রি করে। এই পুর কাজ টি হয়েছিল লাইভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এবং এরই সাথে এনএফটি সকলের সামনে আসে।

এর প্রথম প্রোজেক্ট কি? এবং তা কবে আসে?

এনএফটি এর প্রথম প্রোজেক্ট হলো “এথেরিয়া“। এটি ২০১৫ সালে লন্ডন এ প্রকাশ করা হয়। এথেরিয়া প্রকাশের ৩মাস পর এর প্রথম ডেভলপার মিটিং হয়।

এনএফটি (NFT) মার্কেটপ্লেস কি?

এনএফটি দ্বারা ডিজিটাল সম্পত্তি কেনা বা বিক্রি করার জায়গাটি হলো এর মার্কেটপ্লেস। এ মার্কেটপ্লেস গুলোতে ডিজিটাল মাধ্যমে কেনা বেচা হয়ে থাকে। অনেকটা নিলামের মতো  হয়ে থাকে। কাস্টমাররা সাধারনত ক্রিপ্টোকারেন্সি এর মাধ্যমে বিড করে।

এবং সভাবতই যে সবচেয়ে বেশি মূল্যে বিট করে সে-ই ওই ডিজিটাল সম্পত্তির মালিকানা পেয়ে যায়। বিক্রিত কিছু জিনিসকে মাস্টরপিস ও বলা হয়ে থাকে। ৫ টি এনএফটি মার্কেটপ্লেস নিম্নরূপঃ

  • ওপেনসি (OpenSea)
  • রেরিবল (Rarible)
  • মিণ্টেবল (Mintable)
  • ফাউন্ডেশন (Foundation)
  • এনএফটি গেটওয়ে (NFT Gateway)

এছাড়াও আরও অনেক মার্কেট প্লেস আছে, যেখানে এনএফটি ক্রয় বিক্রয় করে থাকে।

কোন কোন ক্ষেত্রে NFT ব্যবহৃত হয়ে থাকে?

এই টোকেনগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমনঃ

  • ডিজিটাল আর্টঃ ডিজিটাল আর্ট এনএফটি এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং ব্যবহৃত। অনেকে আবার এটিকে কেবল ডিজিটাল আর্ট এর ক্ষেত্র ব্যবহৃত হয় বলে মনে করে। কিন্তু তা ভুল, এটি ডিজিটাল আর্ট ও ডিজিটাল আর্ট এর মত অন্যান্য ডিজিটাল সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ও ব্যবহৃত হয়। তবে হাই প্রোফাইল নিলামে ডিজিটাল আর্ট এর দাম প্রশংসনীয়ভাবে জনগনের আকর্ষণকে এর দিকে কেন্দ্রিভুত করে। যার কারনে এই নন ফানজিবল টোকেন ডিজিটাল আর্ট এর ক্ষেত্রে বরাবরই সুপরিচিত।

আরো পড়ুন : কম্পিউটার কি ও কত প্রকার 

  • গেমসঃ ব্লক চেইন গেমস সাধারনভাবে এনএফটি গেমস বলে পরিচিত। এর আরেকটি নাম আছে, তা হল ক্রিপ্টো গেমস। এ ধরনের ভিডিও গেমস ব্লক চেইন প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি ওপর নির্ভরশীল। এ গেমসটি খেলার ক্ষেত্রে ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহৃত হয়। যা মূলত নন ফানজিবল টোকেন।
  • এই ক্রিপ্টো কারেন্সি বা নন ফানজিবল টোকেন টি ব্যবহারের পূর্বে ক্রয় করতে হয়। সাধারনত এই টোকেন গুলো খেলোয়াররা কিনে থাকে, বিক্রি করে থাকে কিংবা শেয়ার করে থাকে।
  • এই প্রতিটি কাজ করার জন্য একটি ফী প্রযোজ্য হয়। যা মূলত প্রতিটা ট্রাঞ্জিকশনে কেটে নেওয়া হয়। অনেক সময় এই কেনা, বেচা ও শেয়ার করার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের উপার্জিত হয়। যা কিনা জীবন ধারনে সহজেই ব্যবহৃত হয়।
  • মিউজিকঃ নন ফানজিবল টোকেন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি তেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে বেশ সফলতার সাথেই। আর দিন দিন বেরেই চলেছে এর বিস্তার। ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী মিউসিক এর ক্ষেত্রে এনএফটি প্রায় $২১ মিলিয়ন জেনারেট করতে পেরেছে।
  • ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি 3LAU তার কালেকশনের ৩৩ টি এন এফ টি $১১.৭ মিলিয়ন এ বিক্রি করে। একই বছর ৩রা মার্চ “কিংস অব লিওন” নামের একটি আমেরিকান ব্যান্ড এই নন ফানজিবল টোকেন কে প্রমোট করে এবং এর বিস্তার আরও ছড়িয়ে দেয়।
  • ফিল্মঃ এনএফটি বা নন ফানজিবল টোকেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তেও নিজের ছাপ ফেলছে। আপনি ভাবতে পারেন ফিল্ম এর ক্ষেত্রে NFT এর আবার কি ব্যবহার হতে পারে? ফিল্ম তো সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যে কেউ টিকিট কিনে ফিল্ম দেখতে পারে। আর এতেই ফিল্ম মেকারদের ব্যবসা হয়। হ্যাঁ, ব্যপারটা এমনই।

কিন্তু এই ব্যপারটিকে আরও অর্থ বহুল করেছে এনএফটি। ২০১৮ সালের মে মাসে “সেঞ্চুরি-বক্স” কিছু লিমিটেড টোকেন বা টিকিট এর ব্যবস্থা করে থাকে এনএফটি এর মাধ্যমে। এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে প্রথম এনএফটি নিলামে মোশন পিকচার বা ডকুমেন্টরী যুক্ত হয়। এভাবে ধীরে ধীরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এর আরও অনেক প্রোজেক্ট যুক্ত হচ্ছে এনএফটিএর সাথে।

  • অন্যান্যঃ

মিউজিক, গেমস, ফিল্ম, ডিজিটাল আর্ট এর বাহিরেও NFT বা নন ফানজিবল টোকেন এর অনেক ব্যবহার রয়েছে। আমরা যে প্রতিনিয়ত মীমই গুলো দেখে থাকি ইন্টারনেট কিংবা সোশ্যাল সাইট গুলোতে সে সব কিছুই NFT এর আওতাভুক্ত হচ্ছে। উদাহরন সরূপ বলা যায়, বহুল ব্যবহৃত DOGE ইমেইজ। এছাড়াও রয়েছে SHIBA INU, CHARLIE BIT MY FINGER, NAYAN CAT এর মত ইমেইজ। এগুলোরও এখন মালিকানা রয়েছে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।

এনএফটি (NFT) কিভাবে এতো জনপ্রিয়তা পায়?

এই টোকেনের ব্যবহার ২০১৪ সাল থেকে হলেও এটি এখন পর্যন্ত ওতটা বিস্তার পায়নি। তবে বর্তমানে এর যা পরিচিতি আছে তাই বা কম কিসে। আর ইদানিং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এটি ২০১৭ সালে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ২০১৪ সালে মার্কেটে আসার পরও ২০১৭ তে ব্যপ্তি পাওয়ার পিছে কিছু কারন রয়েছে। যেমন ২০১৭ সালে অনলাইন গেমস ক্রিপ্টো ক্রিটি এর বিড়ালটির এনএফটি বিক্রি করা হয়। যা মানুষ কে কিছুটা চমকে দিয়া ছিল।

এবং তখন এর ওতটা চল না থাকায় জনগনের মাঝে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে এর মার্কেট বাড়তে থাকে এবং বেড়ে $২৫০ মিলিয়নে পৌছায়। আর তখনিই এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এবং ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ইনভেস্ট হয়। অঙ্কের খাতায় যা $২০০ মিলিয়ন। এবং পরবর্তীতে এর মুনাফা অনেক বেশি হয়। এভাবেই এন এফ টি বা নন ফানজিবল টোকেন জনপ্রিয়তা পায়।

আরো পড়ুন : অফ পেজ এস ই ও কি 

NFT কি কপি রাইট আইনকে লঙ্ঘন করে?

NFT বা নন ফানজিবল টোকেন যেহেতু ডিজিটাল রাইটস দিয়ে থাকে। তাই অনেকে ভাবতেই পারেন যে এটি দিয়ে ক্রয়কৃত সম্পত্তি কপি রাইট মামলায় পরতে পারে।কিনতু তা নয়। এতে কোন কপি রাইট মামলাধীন হবেনা।

পাশাপাশি আরেকটি বিষয় উঠে আসে যে এই ডিজিটাল কপি টি অনেকে সময় অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারও হতে পারে। কিন্তু এর মালিক তো অন্য কেউ। সেক্ষেত্রে এর দ্বারা প্রযোজিত বস্তুটি অর্থ উপার্জনের খাতে ব্যবহার করা যাবে না।

পাশাপাশি মূল জিনিসের অনেক কপি হতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে এটি তার এয়ন্টিক দাম কম হবেনা বরং বাড়বে। বরঞ্চ মূল জিনিস টি মূলই থেকে যাবে। তাই এর সম্পত্তির কপিরাইট হয়না বা কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করেনা।

NFT কি অর্থপাচার বা কালো টাকা ব্যবহারের মাধ্যম?

এনএফটি দ্বারা ব্লক চেইনের মাধ্যমে ডিজিটাল বা ঐতিহ্যবাহী আর্ট গুলো বিক্রি হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে অর্থ পাচারের মতো কাজ খুব সহজেই হতে পারে। এ নিয়ে নিলাম কর্তৃপক্ষ প্রয়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

চীনের People’s Bank of China” এবং আমেরিকার  “United States Treasury” জানায় এই নন ফানজিবল টোকেন এর ব্যবহারে ডিজিটাল আর্ট ক্রয় বিক্রয়ে অর্থ পাচারের মত ঝুঁকি রয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে অর্থ পাচার বা কালোটাকা ব্যবহারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম করছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি কতটা লাভ জনক হতে পারে?

এনএফটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকটাই প্রভাব ফেলতে পারে।  ডিজিটাল ভাবে এটি ব্যবহারে কোনো সম্পত্তি কিনে পরবর্তীতে তা বেশি টোকেনের বিনিময়ে বিক্রি করতে পারলে অবশ্যই এটি লাভজনক হবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত বেকার এর অভাব নাই। যদি কিনা এই বিষয় টিকে চাকরি সমাজের মাঝে দক্ষতার সাথে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তবে তা নতুন কাজের সংস্থান করতে পারে। পাশাপাশি বহুল চাহিদা সম্পন্ন ডিজিটাল আর্ট ক্ষেত্রে যদি শিক্ষিত যুব সমাজ কে প্রবেশ করানো যায়। তবে কোনো আর্ট কিনে নয় বরং নিজের ডিজিটাল আর্ট বিক্রি করেই অনেক লাভবান হওয়া যাবে।

NFT কি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ?

এনএফটি বা নন ফানজিবল টোকেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ নয়। তবে এটি ক্রয় বিক্রয়ে ব্যবহৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। এটির মূল কারণ হলো বাংলাদেশের আইন। আইন অনুযায়ী কোন প্রকার ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অনলাইন কারেন্সি “বাংলাদেশ ব্যাংক” গ্রহণ করবে না। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে এটি বয়ে আনতে পারে দেশ ও জাতির উপকার।

আমাদের এই আলোচনায় আপনারা আশা করি মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছেন যে NFT কি।  আপনাদের আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন আমরা উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।

No Responses

  1. Anonymous March 15, 2022

Leave a Reply