রানী মৌমাছির কাজ কি এবং মৌমাছির উপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম, মৌমাছি বা মধুমক্ষিকা হলো মানুষের মতোই একপ্রকার সামাজিক প্রাণি, যারা দলবদ্ধভাবে বাস করে এবং অত্যন্ত পরিশ্রমী। এজন্য প্রাচীনকাল থেকেই এদেরকে সামাজিক পতঙ্গ হিসেবে ডাকা হয়। এদের মধ্যে নেই কোনো পারস্পরিক কলহ-বিবাদ।

মৌমাছি একটি পরিবেশ বান্ধব প্রাণি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে, ফুল-ফল তৈরিতে এদের প্রত্যক্ষ অবদান দেখা যায়। এছাড়াও, এদের তৈরি অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার হলো মধু, যা অনেক ধরণের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পন্ন।

মৌমাছি পরিবারের মধ্যে একটি অন্যতম সদস্য হলো রানী মৌমাছি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা তুলে ধরব রানী মৌমাছির কাজ কি এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে।

রানী মৌমাছির কাজ কি
রানী মৌমাছির কাজ কি

মৌমাছির উপকারিতা

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মৌমাছি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য সে সম্পর্কে আগেই কিছুটা ধারণা দিয়েছি। মৌমাছির কথা উঠলেই প্রথমে যে ভাবনাটি মাথায় আসে তা হলো- গাছে গাছে ঘুরে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা। আর এই ঘটনাটি আমাদের পরিবেশের জন্য একটি অন্যতম নিয়ামত।

মৌমাছি গাছে গাছে ঘুরে এক গাছ থেকে মধু সংগ্রহ করে অন্য গাছের ফুলে বসে। যার ফলে, মৌমাছির পায়ে ও বুকে যে পরাগ লেগে থাকে সেটা অন্যগাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডের সাথে মিশে পরাগায়ন ঘটে।

এর ফলে, গাছে ফুল থেকে ফল হয়, সেই ফল আমরা ও অন্যান্য পশুপাখি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। আবার সেই ফলের বীজ হতে উদ্ভিদ জন্ম নেয়। এভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য টিকে থাকে। তাছাড়া, মৌমাছি মাধ্যমে পরাগায়ন হলে ফল উৎপাদনের হার বেড়ে যায়।

আরো পড়ুন: আসল জাফরান চেনার উপায় ও জাফরানের উপকারিতা

মৌমাছির মধুর চাক আমাদের গ্রামীণ সমাজের এক অতিপরিচিত নাম। এই মধুর চাক থেকে পাওয়া যায় পুষ্টি গুণাগুণ সম্পন্ন মধু, যা বিভিন্ন রোগ ব্যাধি নিরাময় করে থাকে।

মধুর উপকারিতার জন্য একে বলা হয় সকল রোগের মহা ঔষধ। মধু খেলে শরীরের দূর্বলতা কমে, অম্লত্ব দূর হয়, তারুণ্য  বজায় থাকে, ফুসফুসজনিত রোগ নিরাময় হয়।

এছাড়া মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ক্ষুধা ও খাবারে রুচি বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, দাঁতের মাড়ি শক্ত সহ অসংখ্য বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে।

মৌমাছিকে বর্তমানে আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করে তাদের বাসযোগ্য আশ্রয় দিয়ে মধু চাষ করছি, যা আমাদের কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছে এবং বেকারত্ব কমে আসছে। গ্রামের যুবকেরা স্বনির্ভর হচ্ছে। 

পাশাপাশি, মধু বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে,  আমাদের জাতীয় আয় বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশে আমাদের দেশের সুন্দরবনের মধু রপ্তানি হচ্ছে।  আর এই মূল্যবান মধুই আসে মৌমাছির মাধ্যমে।

এসব দেখে বোঝা যায়, মৌমাছি আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি প্রাণি, যার গুণাগুণ শুরু করলে শেষ করা যাবে না।

মৌমাছি সম্পর্কে ৫টি বাক্য

  • রানী মৌমাছি একসাথে সর্বোচ্চ ২৫০০ ডিম পাড়তে পারে।
  • মৌমাছিরা মানুষের মুখ দেখলে সেই মুখ তাদের স্মৃতিশক্তিতে গেঁথে যায়, পরবর্তীতে আবার সেই মানুষের মুখ দেখার সাথে সাথে চিনে ফেলে।
  • শ্রমিক মৌমাছিরা সবাই মেয়ে মৌমাছি।
  • একটি মধু সংগ্রহকারী উড়ন্ত মৌমাছির কাছে ভো ভো শব্দ হয় কারণ ওই মাছিটি সেকেন্ডে ২০০ বার পাখা ঝাপটায়।
  • ভারতীয় জাতের মৌমাছিকে বশে আনা যায়।

রানী মৌমাছির কাজ কি?

একটি মৌমাছির চাকে শুধু একটিই রানী মৌমাছি থাকে, যার অন্যতম কাজ হচ্ছে ডিম পারা এবং বংশ বৃদ্ধি করা। এছাড়া রানী মৌমাছির আর বিশেষ কোনো কাজ নেই।

রানী মৌমাছি পুরো জীবনকালে শুধু একবারই একাধিক পুরুষ মৌমাছির সাথে মিলিত হয় এবং পর্যাপ্ত শুক্রাণু জমা করে রাখে শরীরের শুক্রাধাণীতে। এই মৌমাছি সবচেয়ে বড় আকৃতির হয়ে থাকে। রানী মৌমাছি নিজের ইচ্ছেতেই নিষিক্ত এবং অনিষিক্ত দুই ধরনের ডিম-ই পারে। রানী মৌমাছি একসাথে সর্বোচ্চ ৫০টি পুরুষ মৌমাছির সাথে মিলন করতে পারে।

আরো পড়ুন: কালোজিরার উপকারিতা ও কালোজিরা তেলের ব্যবহার বিধি

শ্রমিক মৌমাছির লালা থেকে উৎপন্ন একধরনের রয়াল জেলী বা রাজসুধা যা রানী মৌমাছিকে খাওয়ানো হয়। এ জেলী খাওয়ানোর কারণে পরবর্তীতে রানীর ডিম পারা এবং প্রজনন ক্ষমতা তৈরি হয়। একটি মৌ কলোনিতে রানী মৌমাছির ভূমিকা অবর্ণনীয়।

মৌমাছি কতদিন বাঁচে?

মৌমাছি ঠিক কতদিন বাঁচে এটা নির্ভর করে মৌমাছির প্রজাতি এবং শ্রেণির উপর। একটি মৌ কলোনিতে সাধারণত তিন শ্রেণির মৌমাছি থাকে।

১. রানী মৌমাছি: রানী মৌমাছি শুধু ডিম পারে এবং বংশ বৃদ্ধি করে, যেটি সর্বোচ্চ ৩-৫ বছর অব্দি বাঁচে।

২. পুরুষ মৌমাছি : পুরুষ মৌমাছি শুধু রানীর সাথে মিলিত হয় এবং আহার-বিশ্রামে মত্ত থাকে। এরা সাধারণত অলস প্রকৃতির হয়। এদের হুল থাকে না। এদের আয়ুষ্কাল সাধারণ দেড় থেকে দুই মাস হয়ে থাকে।

৩. শ্রমিক মৌমাছি: এরা অত্যন্ত কর্মঠ, পরিশ্রমী হয়ে থাকে। এরা রানী ও পুরুষ মৌমাছিকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে মৌচাক তৈরি, পরিষ্কার-পরিচর্যা, বিপদ আপদ থেকে রক্ষা এবং বাচ্চা মৌমাছিদের দেখাশোনা করে। এরা আকারে ছোট হয়। এরা প্রহরীর মতো কাজ করে। এদের জীবনকাল দেড় থেকে দুই মাস হয়ে থাকে।

কালোজিরা ফুলের মধুর উপকারিতা

মৌমাছি অনেক ধরণের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। সেগুলোর মধ্যে খুব পরিচিত মধুগুলো হলো লিচু ফুলের মধু, সরিষা ফুলের মধু এবং কালোজিরা ফুলের মধু। সাধারণত সব মধুই ভালো যদি তা খাঁটি হয়। তবে কালোজিরার মধু এদের মধ্যে অন্যতম।

অন্যান্য সব মধু থেকে কালোজিরা ফুলের মধুর উপকারিতা নজরকাড়া এবং অনেক ঔষধি গুণাবলি সম্পন্ন। আমরা সবাই ঠান্ডা, হাঁচি-কাশি, শরীর ব্যাথাসহ অসংখ্য রোগের জন্য কালোজিরা খেয়ে থাকি। ঠিক একই কারণে মধুও খেয়ে থাকি।

কালোজিরা ফুলের মধুর উপকারিতা

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে মধু এবং কালোজিরা একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ। ঠিক তখনই মধুটিই যদি হয় কালোজিরা ফুলের, তাহলে কালোজিরা এবং মধুর সমন্বয়ে শরীরে তৈরি হয় এক শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

যা আমাদের শরীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে, এলার্জি, হাঁপানি বা ফুসফুসজনিত রোগ নিরাময় করে, শরীরে দূর্বলতা কাটিয়ে শক্তি যোগায়, ফ্যাট কমিয়ে দেয়, শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

কালোজিরা ফুলের মধুর এক অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট হলো দেখতে কালচে রঙের এবং খেতে খেজুর গুড়ের মতো স্বাদ। এটি সাধারণত জমতে দেখা যায় না তবে ঘনত্ব বেশি হলে জমে।

খাঁটি মধু কোথায় পাওয়া যাবে?

আজকাল হরহামেশাই আমাদের চারপাশে মধু পাওয়া যায় কিন্তু আসলে তা কতখানি খাঁটি এটা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। প্রতারণার এই যুগে অনেকে খাঁটি মধু হিসেবে দাবি করলেও আসলে সবার মধু খাঁটি নয়।

খাঁটি মধু পেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে খাঁটি এবং ভেজাল মধুর মধ্যে পার্থক্য করতে শিখতে হবে নইতো আপনি সহজেই প্রতারিত হবেন। 

এছাড়াও, খাঁটি মধু আপনি দুভাবে সহজেই পেতে পারেন।

  • সরাসরি চাক ভাঙার সময় উপস্থিত থেকে মৌয়ালদের কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারেন।
  • বিশ্বস্ত কারোর কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারেন।

এছাড়াও, বিভিন্ন সুপার শপ বা অনলাইন শপে মধু বিক্রি হয়ে থাকে। আপনি কাস্টমারদের রিভিউ দেখে খুব সতর্কতার সাথে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে পারেন। অনলাইনে অসংখ্য দোকানের মধ্যে পরিচিত দোকান খাঁটি মধু ডট কম থেকে বিচক্ষণতার সাথে নিতে পারেন।

ইতিকথা

প্রাচীনকাল থেকেই মৌমাছি আমাদের পরিবেশ ঠিক রাখছে। মানুষের অস্তিত্ব ঠিক রাখার জন্য মৌমাছির অবদান অন্যতম।

আমরা মধু সংগ্রহ করার সময় অনেক মৌমাছি মেরে ফেলি, যেটা আমাদের বিরুপ পরিবেশের দিকে ঠেলছে। তাই এবিষয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

আজকে আমাদের লেখার মাধ্যমে আপনাদের সামনে রানী মৌমাছির কাজ কি এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরলাম। আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

Leave a Reply