ই-সিম কি e sim এবং এর সুবিধা অসুবিধা

প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আমুল পরিবর্তন আমাদেরকে বিস্মিত করছে, বদলে দিচ্ছে পুরো বিশ্বকে এবং সেই সাথে মানুষের জীবনধারাকে। দিন দিন প্রযুক্তিগুলো আকারে ছোট এবং শক্তিশালী হয়ে উঠছে আর সাথে ব্যবহারকারীদেরকে দিচ্ছে বিভিন্ন সুবিধা। সিম (SIM) বা Subscriber Identity Module হচ্ছে সেরকমই বিপ্লবকারী প্রযুক্তি। যুগের ধারাবাহিকতায় এই প্রযুক্তিতে এসেছে নানান পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সুযোগ-সুবিধা। আজকের এই পোস্টে আমরা ই-সিম সম্পর্কে জানবো। ই-সিম কি, ই-সিম কিভাবে কাজ করে এবং ই-সিমের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় আসা যাক।

ই-সিম কি
ই-সিম কি

ই-সিম কি?

আসুন প্রথমেই জেনে নিই, এই বহুল আলোচিত ই-সিম আসলে কি। ই-সিম (eSIM) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Embedded SIM। এটাকে ডিজিটাল সিম কার্ডও বলা চলে। এটা ফোনের ভেতর এম্বেড করা থাকে এবং ফোনের মাদারবোর্ডের ভেতরে ফোন তৈরি করার সময় লাগিয়ে দেওয়া হয়। ই-সিমের সুবিধা নেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ই-সিম সাপোর্টেড স্মার্টফোন ও মোবাইল অপারেটর থেকে সেবা নেওয়া লাগবে।

বিশ্বে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে ই-সিমের যাত্রা শুরু হয়। এটা স্বাভাবিক ন্যানো সিমের তুলনায় আয়তনে প্রায় ৩ গুন ছোট। মূলত স্মার্টফোনগুলোকে আরো ছোট, স্লিম ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই ই-সিম কার্ডের যাত্রা শুরু হয়। যেহেতু সাধারণ ন্যানো সিম বা মাইক্রো সিমের মতো ফোনে বারবার সিম কার্ড ইনসার্ট করার প্রয়োজন পড়ে না, তাই এটা ব্যবহার করা বেশ ঝামেলা মুক্ত।

শুধুমাত্র একটা কিউআর (QR) কোড স্ক্যান করেই ব্যবহার করা যাবে এটি। যেসকল ফোনে ই-সিম সাপোর্ট করে সেগুলো কিউআর কোড স্ক্যান করে আপনার ই-সিমের নাম্বার ব্যবহার করতে পারবেন। চলুন একটা উদাহরণের মাধ্যমে পুরো বিষয়টা বুঝে নেওয়া যাক।

মনে করুন, আপনি যেই স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেন সেটা ই-সিম সাপোর্ট করে। আর আপনার ৪টি ই-সিম কার্ড রয়েছে, সেগুলো হলো গ্রামীণফোন, বাংলালিং, এয়ারটেল ও রবি। আপনার ফোনে সর্বোচ্চ দুইটা ই-সিম সাপোর্ট করবে। এখন আপনি চাইলে যেকোনো সময় ফোনের সিম অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন।

যদি গ্রামীণফোন ব্যবহার করতে চান তাহলে গ্রামীণফোন ই-সিম grameenphone e sim কেনার সময় আপনাকে যে কিউআর কোড সম্বলিত একটা কাগজ দেওয়া হয়েছিলো সেটা স্ক্যান করে প্রয়োজনীয় ধাপসমূহ সম্পন্ন করলেই গ্রামীণফোনে নেটওয়ার্ক সেবা পেয়ে যাবে। আবার যদি চান গ্রামীণফোন সিমটা সরিয়ে রবি সিম robi e sim ব্যবহার করবে তাহলে একই নিয়মে রবি ই-সিমের কিউআর কোড স্ক্যান করে সেটা মুহূর্তের মধ্যেই ফোনে ইনসার্ট করতে পারবেন। এজন্য বারবার ইজেক্টর দিয়ে চেম্বার খুলে ইনসার্ট করার প্রয়োজন নেই।
আচ্ছা আপনাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে কখনো যে, সর্বপ্রথম তৈরি সিম কার্ডটি আকারে দেখতে কেমন ছিলো?

সিম বিপ্লব

আসুন এই পর্যায়ে সিম বিপ্লব SIM Revolution সম্পর্কে জেনে নিই। সর্বপ্রথম ১৯৯১ সালে সিম কার্ডের যাত্রা শুরু হয়, আর এটা প্রথম তৈরি হয়েছিলো জার্মানিতে। সে সময় যেই সিমগুলো ব্যবহার করা হতো সেগুলো আকারে ছিলো বর্তমান ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের সমান। এগুলোকে বলা হতো ফুল সাইজ সিম (Full Size SIM)।

এরপর টানা ৫ বছরের ব্যবধানে ১৯৯৬ সালে মিনি-সিম (Mini SIM) নামে একধরনের সিম বাজারে আসে। যেটা ফুল সাইজ সিমের তুলনায় আকারে অনেক ছোট এবং ব্যবহার করা অনেক সহজ। এটার দৈর্ঘ্য ছিলো ২৫মি.মি, প্রস্থ্য ১৫ মি.মি এবং পুরুত্ব ০.৭৬ মি.মি। এখনকার ফিচার ফোনগুলোতে যে সিম ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো মিনি সিম। তখনকার স্মার্টফোনগুলোতেও এই মিনি সিমের ব্যবহারের প্রচলন ছিলো।

আগেকার স্মার্টফোনগুলোর পুরুত্ব বেশ মোটা ছিলো। এবং ফোনগুলোকে কিভাবে আরো চিকন ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায় সেই ভাবনা থেকেই উদ্ভব হয় মাইক্রো সিমের। বিশ্বে ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম মাইক্রো সিম চালু হয়। উপরের ছবিতে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন, মাইক্রো সিম মিনি সিমের তুলনায় কতটা ছোট।

এরপর ২০১২ সালে বাজারে আসে ন্যানো সিম যা ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিমের দুনিয়ায় সবচেয়ে ছোট সিম কার্ড হিসেবে পরিচিত ছিলো। কিন্তু ২০১৬ সালে ই-সিম প্রযুক্তি আসার পর থেকে এটি ন্যানো সিমের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এটিই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও ছোট সিম কার্ড প্রযুক্তি। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০২২ সালের ৭ই মার্চ গ্রামীণফোণ কোম্পানি ই-সিম চালু করে।

আরো পড়ুন : ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি

ই-সিমের সুবিধাসমূহ

কোনো প্রযুক্তি যখন নতুন রূপ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় তখন তার বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা আমাদের চোখে পড়ে। ই-সিমেরও কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা শুধু ই-সিম কার্ডের সুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো এবং পরবর্তী পর্যায়ে অসুবিধা সম্পর্কে জানাবো। ই-সিমের সুবিধাগুলো হলোঃ

• এই সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর আকার অনেক ছোট। আমরা এতদিন জানতাম, ন্যানো সিম সবচেয়ে আয়তনে সবচেয়ে ছোট। কিন্তু ন্যানো সিমের চেয়ে ই-সিম আয়তনে প্রায় তিন গুণ ছোট। তাই এটি ব্যবহার করলে ফোন পুরুত্ব অনেক কমিয়ে এটাকে আরো ছোট ও মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা সম্ভব।

• একটি ই-সিমের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫টি পর্যন্ত ভার্চুয়াল সিম কার্ড সেভ করা যায়। অর্থাৎ একটি ই-সিমে ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ৫টি সিম কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ করে সেটাকে সুবিধামতো পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারবেন। যেই সুবিধাটি স্বাভাবিক প্লাস্টিকের সিম কার্ডে পাওয়া যেত না।

• ই-সিম পরিবেশ বান্ধব। প্রতিবছর প্রায় মিলিয়ন মিলিয়ন প্লাস্টিকের সিম কার্ড তৈরি হয়, এবং যখন এগুলো নষ্ট হয়ে যায় তখন এগুলোকে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। প্লাস্টিকের সিম কার্ডে এমন কিছু পদার্থ থাকে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ। যেহেতু ই-সিমের ফলে স্বাভাবিক সিম কার্ডের ব্যবহার কমে যাচ্ছে তাই এর ফলে পরিবেশ দুষিত হওয়া থেকে বাঁচবে।

• এই ডিজিটাল সিম ব্যবহারের ফলে আপনাকে অতিরিক্ত প্লাস্টিকের সিম কার্ড বা ইজেক্টর পিন বহন করতে হবে না। আমাদের অনেক সময় দেখা যায়, ফোনে দুইটির বেশি সিম ব্যবহার করা যায় না কিন্তু দুইয়ের অধিক সিম কার্ড ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। সে সময় আমরা অতিরিক্ত সিম কার্ড ও ইজেক্টর পিন নিজের সাথে মানিব্যাগে বয়ে বেড়ায় এবং একটি সিম খুলে অন্যটি ব্যবহার করি।

ই-সিমে যেহতু সর্বোচ্চ ৫টি পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন নম্বর ব্যবহার করার সুযোগ আছে এবং শুধুমাত্র সিমের কিউআর কোড সাথে থাকলেই তা ব্যবহার করা যায়। তাই এই সিমগুলো তুলনামূলক ব্যবহার উপযোগী।

e sim
e sim

ই-সিমের e sim অসুবিধাসমূহ

সব প্রযুক্তিরই সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা থাকে। সেরকম এই সিমেও কয়েকটি অসুবিধা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সিমের অসুবিধাগুলো হলো নিম্নরূপঃ
• ই-সিম একটি ফোন থেকে অন্য ফোনে স্থানান্তর করাটা কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে অনেকের জন্যই। কোনো ফোনে প্রথমবারের মতো একটি ই-সিম ব্যবহার করতে হলে বেশ কয়েকটা ধাপ অতিক্রম করতে হয়, যেটা কিছুটা সময় সাপেক্ষ হতে পারে অনেকের জন্যই।

• এছাড়াও আপনি একটি ডিভাইস থেকে একটি eSIM সহজেই সরাতে বা স্থানান্তর করতে পারবেন না। যদি আপনার গতিবিধি ট্র্যাক করা নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ থাকে তাহলে এটি একটি খারাপ দিক হিসাবে দেখা যেতে পারে। তবে এটি একটি সুবিধাও হতে পারে, কারণ এর অর্থ ফোন চুরি হওয়ার চোর সেই ফোনের অবস্থান সহজে লুকাতে পারে না। এতে খুব সহজেই আপনার হারানো ফোনটি খুঁজে পেতে পারবেন।

আরো পড়ুন : NFT কি এন এফ টি বা নন ফানজিবল টোকেন

কোন ফোনে ই-সিম  e sim ব্যবহার করা যাবে?

২০১৬ সালে সর্বপ্রথম eSIM চালু হলেও এখনো পর্যন্ত এই সিম এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। সব ফোনে ই-সিম ব্যবহার করা যায় না, শুধুমাত্র অ্যাপল, স্যামসং ও পিক্সেলের কয়েকটা ফোনে এখন ইসিম ব্যবহার করা যায়। তবে ধারণা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে যত ফোন আসবে সবগুলোতে এই সিমের ব্যবস্থা থাকবে। বাংলাদেশের কোন ফোনগুলোতে ই-সিম ব্যবহার করা যায় তার একটা তালিকা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

Apple iPhone

• iPhone 13, 13 Pro, 13 Pro Max, 13 Mini
• iPhone 12, 12 Pro, 12 Pro Max, 12 Mini
• iPhone SE
• iPhone 11, 11 Pro, 11 Pro Max
• iPhone XS, XS Max
• iPhone XR
• iPad Pro 12.9‑inch (4th generation)
• iPad Pro 12.9‑inch (3rd generation)
• iPad Pro 11‑inch (2nd generation)
• iPad Pro 11‑inch (1st generation)
• iPad Air (4th generation)
• iPad Air (3rd generation)
• iPad (8th generation)
• iPad (7th generation)
• iPad mini (5th generation)

Samsung

• Samsung Galaxy S22 5G, Ultra 5G, S22+ *(official version will support eSIM by April 01, 2022)
• Samsung Fold LTE model
• Samsung Galaxy Z Fold3 5G
• Samsung Galaxy Z Flip 5G
• Samsung Galaxy Z Flip
• Samsung Galaxy Z Fold2 5G
• Samsung Galaxy Fold
• Samsung Galaxy S21+ 5G *(coming soon)
• Samsung Galaxy S21 Ultra 5G *(coming soon)
• Samsung Galaxy Note 20 FE 5G *(coming soon)
• Samsung Galaxy Note 20 FE *(coming soon)
• Samsung Galaxy Note 20, 20+, 20 Ultra, Ultra 5G *(coming soon)
• Samsung Galaxy S20, S20+, S20 Ultra *(coming soon)

Google Pixel

• Google Pixel 6 Pro
• Google Pixel 6
• Google Pixel 5a 5G
• Google Pixel 5
• Google Pixel 4a
• Google Pixel 4
• Google Pixel 3 & 3XL (Limited support)
• Google Pixel 2

Leave a Reply