কম্পিউটার কি কত প্রকার ও কম্পিউটার পরিচিতি

মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে আগুন আর ছাপাখানার পরই কম্পিউটারকে স্থান দিলে ভূল হবে না। হাতের মোবাইল কিংবা ক্যালকুলেটর, সব কিছুকেই কম্পিউটার বলা যায়।

আমরা যতই ইনফরমেশন আর টেকনোলজির উপর নির্ভরশীল হচ্ছি, ততই কম্পিউটারের উপর আমাদের নির্ভশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের ভিশন ২০২১ অনুসারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে। তাই আমাদের দ্রুত কম্পিউটার সমন্ধে জেনে নেওয়া উচিত। আজ আমরা জানবো কম্পিউটার কি, কত প্রকার ও কম্পিউটার কি কি কাজে ব্যবহার হয়। তাহলে চলুন শুরু করা জাক।

কম্পিউটার কি
কম্পিউটার কি

১। কম্পিউটার কি?
২। কম্পিউটার কত প্রকার
৩। প্রথম কম্পিউটার
৪। আধুনিক কম্পিউটার
৫। ২য় প্রজন্মের কম্পিউটার
৬। ৩য় প্রজন্মের কম্পিউটার
৭। ৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটার
৮। ৫ম প্রজন্মের কম্পিউটার
৯। ওয়ার্কস্টেশন
১০। মিনি কম্পিউটার
১১। মেইনফ্রেম কম্পিউটার
১২। সুপার কম্পিউটার

কম্পিউটার কি

কম্পিউটার বলতে বোঝায় গণকযন্ত্রকে। এমন যন্ত্র, যা খুব দ্রুত আর সঠিকভাবে আগে থেকে সাজানো নির্দেশ ( অ্যালগরিদম) অনুসারে তথ্য বিশ্লেষন করতে পারে। বর্তমানে কম্পিউটার আরো অনেক কাজ করতে পারলেও, মূল কাজ কিন্তু একই আছে।

চার্লস ব্যাবেজের বানানো কম্পিউটারের পর মানুষ দেখেছিল যন্ত্রটির অপার সম্ভাবনা। কম্পিউটারের উন্নয়নে এগিয়ে আসেন এড্যা ল্যাভলেসের মত অসামান্য গুণধর ব্যক্তিও। আর বর্তমানে সারা বিশ্বে হাজার হাজার গবেষক কাজ করে চলছেন কম্পিউটারের উন্নয়নে।

কম্পিউটার সিস্টেম বলতে আমরা হার্ডওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, কম্পিউটার কিবোর্ড মাউসের মত পেরিফেরাল যন্ত্রাংশ সব জিনিস একইসাথে বোঝাই।

একটি কম্পিউটার আলাদাভাবে কিংবা অনেক কম্পিউটার একসাথে কাজ করতে পারে। অনেকগুলো কম্পিউটার একসাথে সংযুক্ত হয়ে কোনো কাজ করলে আমরা তাকে বলব কম্পিউটার ক্লাস্টার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।

আরো পড়ুন: ওয়েব হোস্টিং কি

কম্পিউটার কত প্রকার

প্রথমদিকের কম্পিউটারগুলো ছিল কেবল গণ্নার কাজ করার জন্য। অ্যাাবাকাস দেখতে কম্পিউটারের মত না দেখালেও, তাকেও একটা কম্পিউটার বলা চলে। তারপর মানুব সভ্যতার ক্রমান্বতির সাথে সাথে শিল্প বিপ্লব হল।

কলকারখানায় উৎপাদনের হিসাব রাখার জন্য দরকার পড়ল আরো নিখুত আর দ্রুত হিসাব করতে পারে এমন যন্ত্রের। প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জননী। তাই জন্ম নিল এনালগ কম্পিউটারের।

তারপর ভ্যাকুয়াম টিউব আর সেমিকন্ডাকটরের আবিষ্কারের পরে শুরু হল কম্পিউটারে বিপ্লব। ধীরে ধীরে আমরা কম্পিউটারগুলো নিয়ে জানব।

প্রথম কম্পিউটার

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে চার্লস ব্যাবেজ নামে এক যন্ত্র প্রকৌশলী প্রোগ্রাম করা যায় এমন কম্পিউটার বানান। তাঁর আগেও কম্পিউটার ছিল। তবে সেসব কম্পিউটারের প্রোগ্রাম করার ক্ষমতা ছিল না। এ কম্পিউটার বানানোর ফলে তাকে বলা হয় কম্পিউটারের জনক।

তিনি ডিজাইন করেন এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিনের। এর ছিল  ১৬.৭ কে বি ম্যামোরি। বর্তমান কালের মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজের মত এই মেশিনেরও নিজস্ব প্রোগ্রামিং ভাষা ছিল। লুপ আর কন্ডিশনাল ব্রাঞ্চিং করাও সম্ভব ছিল এই এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিনে।

আধুনিক এনালগ কম্পিউটারের প্রথম ডিজাইন করেন স্যার উইলিয়াম থমসন। এই কম্পিউটার সমুদ্রের জোয়ার ভাটার সময়কাল নির্ধারনে ব্যবহৃত হয়েছিল। এন্যালগ কম্পিউটার মূলত যান্ত্রিক , বৈদ্যূতিক আর হাইড্রোলিক সিস্টেমের মাধ্যমে চালনা করা হত।

বিখ্যাত পদার্থবিদ লর্ড ক্যালভিনের ভাই জেমস থমসন ১৮৭৬ সালে তৈরী করেন আরেক যান্ত্রিক এনালগ কম্পিউটার। এই কম্পিউটার সমাধান করতে পারত ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন।

এসব মেকানিক্যাল কম্পিউটার আজকের দিনের তুলনায় খুবই কম ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও , যুদ্ধেও এদের কাজে লাগানো হত। ১৯১২ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ান নৌবাহিনী মেকানিক্যাল কম্পিউটার ব্যবহার করে।

আধুনিক কম্পিউটার

আধুনিক কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয় ১৯৩৬ সালে এলান টুরিং এর লেখা এক সেমিনার পেপার থেকে। এই সেমিনারে তিনি ১৯৩১ সালে গোডেলের লেখা “প্রমানের সীমাবদ্ধতা” এর সূত্র ধরে টুরিং মেশিন নামক এক  হাইপোথেটিক্যাল যন্ত্রের ধারণা দেন।

এসবের উপর ভিত্তি করেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, আর যুদ্ধের কিছুদিন পর পর্যন্ত কম্পিউটার বানানো হয়। জন্ম নেয় প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার।

যুদ্ধকালীন কিছু কম্পিউটারের উন্নয়ন ঘটানো হলেও, প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের মূল যাত্রা মূলত ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত। এসব কম্পিউটার খুবই ব্যয়বহুল ছিল। ভ্যাকুয়াম টিউবের কিংবা মেকানিক্যাল রিলের ব্যবহারের ফলে খুব একটা নির্ভরযোগ্যও ছিলনা।

আকারে হত অনেক বড়। ভ্যাকুয়াম টিউব খুব দ্রুত গরম হয়ে যেত। ঠান্ডা করতে প্রচুর শক্তি ব্যয় করতে হত। এ ধরনের কিছু কম্পিউটার ছিল ENIAC, EDVAC, IBM-701.

কম্পিউটার কি কি কাজে ব্যবহার হয়

২য় প্রজন্মের কম্পিউটার

এই প্রজন্মের কম্পিউটার উৎপাদন হয় ১৯৫৯-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত। এসময় থেকেই কম্পিউটারে ট্রানজিস্টর ব্যবহার শুরু হয়। ভ্যাকুয়াম টিউবের বদলে ট্রানজিস্টর ব্যবহারে শক্তির অপচয় যেমন কমে যায়, তেমনই বেড়ে যায় কম্পিউটারের দক্ষতা।

আরো পড়ুন: প্রফেশনাল ব্লগার হতে চাই কিন্তু কিভাবে ?

১ম্ প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে এদের গতিও ছিল উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। IBM 1620, IBM 7094, CDC 1604, CDC 3600, UNIVAC 1108 এগুলো এ প্রজন্মের কম্পিউটার।

৩য় প্রজন্মের কম্পিউটার

১৯৬৫-১৯৭১ সাল পর্যন্ত  আই সি ভিত্তিক এসব কম্পিউটার ব্যবহার করা হত। একটি আইসিতে থাকতে পারে অসংখ্য ট্রানজিস্টর। যার ফলে কম্পিউটারের ক্ষমতা বেড়ে যায়। ছোট হয় আকার। ALGOL, BASIC, C, COBOL, Fortran, Java, and Pascal ভাষা দিয়ে ৩য় প্রজন্মের কম্পিউটার চালানো যেত।

৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটার

VLSI মাইক্রোপ্রসেসরের উপর ভিত্তি করে তৈরি এ কম্পিউটার ১৯৭১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা হত। ১৯৭১ সালের ১৫ই নভেম্বর প্রথমবারের মত ৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের জন্য সিঙ্গেল চিপ মাইক্রো প্রসেসর বানায় ইন্টেল। এই মাইক্রোপ্রসেসর বানানোর নেতৃত্বে ছিলেন গবেষক ফেডেরিকো ফাগিন।

৫ম প্রজন্মের কম্পিউটার

২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। ULSI মাইক্রোপ্রসেসরের উপর ভিত্তি করে এই কম্পিউটার তৈরী। এই কম্পিউটারেই প্রথম কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু হয়। ভয়েস রেকগনিশনের মত প্রযুক্তি সূচনা করে নতুন যূগের।

৬ষ্ঠ প্রজন্মের কম্পিউটার চলবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তায়।

কম্পিউটারের কাজের গতি আর কর্মক্ষমতার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে আরো কয়েকভাগে ভাগ করা যায়।

পারসোনাল কম্পিউটার বা পিসিঃ ছোট ব্যবসা কিংবা বাসা বাড়িতে ব্যবহারের জন্য এসব কম্পিউটার বানানো হয়। একজন ব্যবহারকারীর জন্য বানানো হলেও, একাধিক কম্পিউটার একসাথে নেটওয়ার্ক তৈরী করে চলতে পারে।

১৯৯০ দশকের পরে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার আর ইন্টেলের হার্ডওয়্যার কম্পিউটারের বাজারে রাজত্ব করছে। পিসি প্রথম তৈরী হয় ১৯৭৪ সালে। MITS নামে এক প্রতিষ্টান তৈরী করে Altair 8800।

এই কম্পিউটার চালানো হত ৮ বিট ইন্টেল ৮০৮০ মাইক্রোপ্রোসেসরের সাহায্য। এই কম্পিউটারের পরে পিসির জগতে বিস্ফোরণ ঘটে। শুরু হয় বানিজ্যিকভাবে পিসি বানানো।

বানিজ্যিকভাবে বানানোর জন্য প্রথম এগিয়ে আসে স্টিভ জবস আর স্টিভ ওজনিয়াক। ১৯৭৬ সালে এপ্যল ১ নামে ৩০ চিপ বিশিষ্ট কম্পিউটার সার্কিট বোর্ড বিক্রয় শুরু করে।

ওয়ার্কস্টেশন

প্রাতিষ্ঠানিক কাজে জন্য দরকার হাই পারফর্মেন্স, ভাল গ্রাফিক কেপাবিলিটির কম্পিউটার, যার স্টোরেজ অনেক বেশি। এই প্রয়োজন মেটাতেই তৈরী হয়েছে ওয়ার্কস্টেশন। কর্মক্ষত্রে মূলত এ ধরনের কম্পিউটার কাজে লাগে।

আপনার প্রতিষ্ঠানে ক্যাড/ ক্যামের কাজ করতে চান? ডেক্সটপ কম্পিউটারের চেয়ে ওয়ার্ক স্টেশন এক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে। ডেক্সটপ কম্পিউটার যেখানে গেমিং কিংবা ওয়ার্ড প্রসেসিং এর চিন্তা করে বানানো হয়, সেখানে ওয়ার্কস্টেশন বানানো হয় গেম বানানো কিংবা বড় আকারে এনিমেশন বানাতে।

আরো পড়ুন: ই সিম কি

মিনি কম্পিউটার

পারসোনাল কম্পিউটারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী কম্পিউটার দরকার, তবে মেইনফ্রেম কম্পিউটার কিনলে দক্ষতার অপচয় হবে এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য বানানো হয়েছে মিনি কম্পিউটার।

মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে মিনি কম্পিউটার কম খরচ সাপেক্ষ, কম শক্তশালী। একসাথে ২৫০ জন পর্যন্ত এ কম্পিউটারে কাজ করতে পারে। বৈজ্ঞানিক কিংবা প্রকৌশল কাজে, ছোট ব্যাংকে টাকা আদানপ্রদান আর ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্টে এ ধরনের কম্পিউটার কাজে লাগে।

মেইনফ্রেম কম্পিউটার

এই কম্পিউটারে এক সাথে কাজ করতে পারে হাজার হাজার ব্যবহারকারি। একইসাথে চলতে পারে শত শত প্রোগ্রাম। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ডেটা ম্যানেজমেন্টে এ ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। ১৯৫২ সালের পর থেকে আই বি এম মেইনফ্রেম কম্পিউটার প্রস্তুত করে আসছে।

সুপার কম্পিউটার

সুপারকম্পিউটার মেইনফ্রেম কম্পিউটারের থেকেও শক্তিশালী। খুবই ব্যয়বহুল এ কম্পিউটার জটিল গাণিতিক কাজে ব্যবহার করা হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রন, বৈজ্ঞানিক সিমুলেশন, নিউক্লিয়ার রিসার্স, ফ্লুইড ডায়নামিক ক্যালকুলেশনে সুপারকম্পিউটার কাজে লাগে।

2 Comments

  1. Anonymous March 15, 2022
  2. Saber Ahmed May 18, 2022
    • Admin May 27, 2022

Leave a Reply