পড়াশোনা করার নিয়ম ১০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস

পড়াশোনা করার নিয়ম জানা থাকলে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে ভালো ফলাফল করতে পারে। তাই সবাইকে অনুরোধ করবো এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য, আজকের জন্য এটাই তোমাদের চ্যালেঞ্জ। তাহলে শুরু করা যাক।

শুধু পরিশ্রমই আমাদের কাজে সাফল্য বয়ে আনে সে কথা সত্য না। এটি সত্য হলে গাধা হতো বনের রাজা, সিংহ নয়। সেজন্য আমাদেরকে কৌশলী হতে হবে।

জানতে হবে যে কিভাবে পড়াশোনা করলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারবো। বিজ্ঞানীরা পড়াশোনা করার নিয়ম নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছেন।

আজকের ব্লগে আমরা সেরকম কয়েকটি কৌশল সম্পর্কে জানবো যা অনুসরণ করে একজন শিক্ষার্থী পূর্বের চেয়ে ভালো ফলাফল করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের শিক্ষা বিষয়ক নতুন একটা ব্লগ পোস্টে। আমরা যারা শিক্ষার্থী আছি তাদের বেশিরভাগের মনে পড়াশোনা নিতে নানান ভীতি কাজ করে।

আমাদের কারোরই পড়াশোনা ভালো লাগে না, বইয়ের পেইজ খুললেই মাথা ঘুরায়। এর অন্যতম একটা কারণ আমরা পড়াশোনার সঠিক নিয়ম জানি না।

পড়াশোনা মনোযোগ বাড়াতে ধৈর্য সহকারে পড়তে হবে। শুধু পড়লেই হবে না, চৌকস উপায়ে অনুশীলন করতে হবে।

পড়াশোনা করার নিয়ম
পড়াশোনা করার নিয়ম

পড়াশোনা করার নিয়ম (How to Study in Bangla)

পড়াশোনা ছাড়া আমরা যে জীবনের প্রতিটি ধাপে নানান বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হবো সে বিষয়ে নিশ্চয়ই কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না।

একজন শিক্ষিত ও একজন অশিক্ষিত মানুষের মাঝে যে কতটা ফারাক তা আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রায়শই খেয়াল করি।

তাই পড়াশোনা ভয়ে আতঙ্কিত না হয়ে কীভাবে এটাকে আরও মজাদার করা যায়, কিভাবে আনন্দের সাথে শেখা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

এই অংশে আমরা পড়াশোনা করার নিয়ম হিসেবে এমন কয়েকটা কৌশলের কথা বলবো যেগুলো অনুসরণ করলে পড়ার অভ্যাস বদলে যেতে বাধ্য।

তোমরা খুব দ্রুতই বুঝতে পারবে যে অন্যদের চেয়ে কতটা এগিয়ে যাচ্ছো, অন্যদের চেয়ে কতটা ভালো করছো, আগের তুলনায় অনেক আনন্দ নিয়ে পড়তে পারছো।

১. আত্মবিশ্বাস বাড়ানো

তোমাকে প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে যে “তুমি পারবে”। কারণ পৃথিবীতে খুব কম কাজই আছে যা মানুষ পারে না।

বাকিরা পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করতে পারলে তুমি কেন পারবে না? যদি পড়াশোনা অসম্ভব কিছু হতো তাহলে তো অন্যরা তা পারতো না।

তাই সর্বপ্রথমে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো যে তুমি ভালো কিছু করার ক্ষমতা রাখো। নিজের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা থাকলে দেখবে বাকিটা পথ সহজ হয়ে গেছে।

২. উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা

আমাদের চারপাশের পরিবেশ আমাদের মানসিক বিকাশে বিশাল প্রভাব বিস্তার করে। তেমনি যেখানে পড়ছো সেখানকার পরিবেষ তোমার পড়াশোনাকে প্রভাবিত করে।

পড়াশোনা করার জন্য এমন স্থান বেছে নেওয়া উচিত যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে, উচ্চশব্দ নেই, মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন কোনো ইন্সট্রুমেন্ট নেই।

এছাড়াও চারপাশে গাছপালা আছে এমন কোনো স্থানে আমরা বেশি মনযোগী হয়ে কাজ করতে পারি। তাই পড়াশোনা করার জন্যই এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে।

ঘরে পড়লে চেষ্টা করবা জানালার পাশে বসতে এবং পড়ার টেবিলে কিংবা ঘরে যে কিছু ছোট গাছ থাকে। আর জানালা দিয়ে বাইরে থেকে সবুজ গাছ দেখা গেলে আরো ভালো, বাতাস প্রবেশ করলে তা বাড়তি প্রাপ্তি।

৩. নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করা

বিজ্ঞানীদের মতে, আমরা যদি কোনো কাজ একটানা ২১ দিন বা তার বেশি দিন যাবৎ করি তাহলে সেটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়।

তেমনিভাবে তুমি যদি নিয়মিত পড়াশোনা করো তাহলে সেটা তোমার অভ্যাসে পরিণত হবে। তখন পড়তে বসতে বিরক্তি আসবে না।

নিয়মিত পড়লে অল্প সময়ে আমরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারি। আর যদি একদিন ১০ ঘন্টা পড়ে পরবর্তী ২ দিন কোনোরকমে বই হাতে না নাও তাহলে তা কোনো কাজেরই না।

তাই নিয়মিত পড়ার অভ্যাস করতে হবে। সেটা হতে পারে প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা। তবুও এটা ভালো। সেইদিকে বিবেচনা করলে পড়াশোনা করার সঠিক সময় নির্ধারণ করে নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করা দরকার ।

৪. রুটিন তৈরি করা

রুটিনমাফিক কাজ করা খুবই কার্যকর। তবে আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা রুটিন তৈরিতে মারাত্মক ভুল করে বসি।

যদি নিয়মিত ৫ ঘন্টা পড়ার চেষ্টা করি এবং ৫টি সাবজেক্ট থাকে তাহলে আমরা প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য এক ঘন্টা বরাদ্দ দিয়ে রুটিন বানাই। যা খুব একটা কাজের না।

নিয়মিত পড়ার জন্য এভাবে রুটিন তৈরি করো: ৫টা সাবজেক্ট হলে চেষ্টা করবে প্রতিদিন ২টা করে পড়ার। তুমি আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখবে যে পরবর্তী দিন একটা সাবজেক্টের কতটু পড়বে।

রুটিনকে সময়ের ফ্রেমে না বেধে লক্ষ্য নির্ধারণ করে রুটিন বানাতে হবে। নির্ধারিত বিষয়ের নির্ধারিত টপিক শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য সাবজেক্টে হাতে দেবে না। তাই পড়াশোনা করার রুটিন মেনে চলা বা সুন্দর একটা রুটিন বানানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।

৫. লিখে পড়ার চেষ্টা করা

আমরা প্রায়শই একটা ভুল করে থাকি যে একটানা মুখস্থ পড়ে যাই। এটা করা যাবে না।

নোট করে রাখা পড়াশোনা করার নিয়ম এর মধ্যে অন্যতম। পড়ার সময় হাতের কাছে একটা নোট খাতা বা স্টিকি নোট রাখবে। কোনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বা মনে রাখতে পারছো না এমন মনে হলে সেটা লিখে রাখবে।

পড়া শেষে নোটবুকে লিখে রাখা টপিকগুলো আরেকবার ভালোভাবে পড়ে নেবে। এতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো একাধিকবার পড়া হয়ে যাবে। এভাবে কঠিন কিছুকে সহজেই মনে রাখা যায়।

পড়া মনে রাখার উপায়

৬. অন্যকে শেখানো

পড়া মনে রাখার উপায় বা দীর্ঘদিনের জন্য মনে রাখার কার্যকরী কৌশল গুলোর মধ্যে যত গুলো নিয়ম আছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো অন্যকে শেখানো। তোমরা খেয়াল করলে দেখবে, আমাদের শিক্ষকেরা কোনো প্রশ্নের চটজলদি উত্তর দিতে পারে। এমনকি বইয়ের কোন অধ্যায়ের কত পেইজে সমাধান আছে সেটাই বলে দিতে পারে।

তাঁদের এই সক্ষমতার মূল কারণ হলো তাঁরা দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। তুমিও এই কৌশলকে কাজে লাগাতে পারো।

তুমি যে বিষয়টা ভালো বুঝো সেটা অন্য সহপাঠীদের শেখাতে পারো। এতে সে শিখতে পারবে এবং তোমার বিষয়টা আরেকবার অনুশীলন হয়ে যাবে।

আর সম্ভব হলে সহপাঠী বা অন্যদেরকে পড়াতে পারো। এতে একদিকে তোমার কিছু টাকা আয় হবে এবং অন্যদিকে যে বিষয়ে পড়াচ্ছো তা ভুলে যাবে না।

৭. বুঝে পড়ার চেষ্টা করা

আমরা মুখস্থ নির্ভর পড়াশোনা জালে আটকে যাচ্ছি বলেই আমাদের ক্রিটিকাল থিংকিং, রিজনিং, প্রবলেম সলভিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা কমে আসছে।

কোনো একটা বিষয় না বুঝে মোটেও মুখস্থ করা উচিত না। এমনটি করলে দীর্ঘদিন আমরা তা মনে রাখতে পারি না।

তাই কিছু মুখস্থ করার আগে সেটা বুঝার চেষ্টা করো। প্রয়োজনে খাতায় চিত্র এঁকে পড়তে পারো। একবার বুঝতে পারলে সেটা উচ্চশব্দ করে বার বার পড়ো।

আমরা কোনো কিছু স্পষ্টভাবে শুনলে তা দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারি। এজন্য উচ্চশব্দে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। তবে যখন লাইব্রেরিতে বা একাধিক জন একসাথে পড়বো তখন অবশ্যই মনে মনে পড়তে হবে।

৭. প্রযুক্তি নির্ভর না হওয়া

পড়াশোনার ক্ষেত্রে বেশি প্রযুক্তি নির্ভর না হওয়াই উত্তম। আমরা পড়ার সময় কোনো একটা টপিক না বুঝলে বা কোনো ইংরেজি শব্দের অর্থ না জানলে সেটা মোবাইলে সার্চ দিই।

বেশিরভাগ সময়ে হাতে ফোন আসলে আমরা ভুলে যায় যে আমরা শুধু একটা টপিকের সমাধান জানতে ফোন নিয়েছিলাম।

তাই পড়ার সময় মোবাইল বা ল্যাপটপ দূরে কোথাও রাখতে হবে যেন আমরা চাইলেও সেটা অ্যাকসেস করতে না পারি।

তুমি যেখানে পড়ছো সেখান থেকে দূরে কোথাও রেখে মোবাইল সাইলেন্ট বা DND মোড অন করে রাখবে। এতে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটবে না।

৮. সামারি তৈরি করা

পড়ার সময়ে নোট রাখার কথা আগেই বলেছি। তবে কোনো জটিল বিষয় হলে সেটার একটা সামারি তৈরি করতে পারো।

এর জন্য আলাদা একটা খাতা ব্যবহার করবে যেখানে অধ্যায় ও টপিকের নাম দিয়ে সামারি ও শর্টকাট লেখা থাকবে। যেন পরীক্ষার আগ মুহূর্তে কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে সহজে খুঁজে পেতে পারো।

তবে পূরো বিষয়বস্তু না পড়ে শুধু সামারি কিংবা শর্টকাট পড়লে তা খুব একটা উপকারে আসবে না। এজন্য অন্যদের তৈরি নোটস বা শর্টকাটস এড়িয়ে চলতে হবে। নিজেই এগুলো তৈরি করবা

৯. পর্যাপ্ত পানি পান করা ও ঘুমানো

ঘুম আমাদের মন ও স্বাস্থ্যকে রিফ্রেশ করে তুলে। পড়াশোনা সহ যেকোনো কাজের জন্যই পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য।

গভীর রাত জেগে পড়ার চেয়ে সকাল সকাল ঘুমিয়ে ভোরে উঠে পড়ার অনেক উত্তম। আমরা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা করার এই নিয়মটা জানি না।

চেষ্টা করবে প্রতিদিন দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে যেতে এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ মনে পড়তে।

পর্যাপ্ত ঘুমের পাশাপাশি আমাদের শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পানিও খুব জরুরি। মজার বিষয় হলো এই দুটোর একটিও আমাদেরকে কিনতে হয় না। তাই প্রতিদিন অন্তত ২-৪ লিটার পানি পান করবে।

পড়ার সময়ে হাতের কাছে পানির বোতল রাখবে। প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পড়ার পরে একবার করে বিশ্রাম নেবে এবং কিছুটা হেটে আসবে। পুনরায় অল্প কিছু পানি খেয়ে আবার পড়া শুরু করতে পারো।

আরো পড়ুন: মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় সঠিক ভাবে জেনে নিন !

১০. শিক্ষকদের মেনে চলা

শিক্ষকেরা হলেন জাতি গড়ার কারিগর। একটা সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ বানানোর পেছনে বাবা-মায়ের পরেই পৃথিবীতে শিক্ষকদের ভূমিকা।

আমাদের শিক্ষকরা কোনো অবস্থাতেই যেন অপমানিত, লাঞ্চিত কিংবা বঞ্চিত না হয় সেদিকে আমাদের সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

শিক্ষকেরা যদি কোনো সৎ পরামর্শ ও অসৎ কাজে নিরুৎসাহিত করে তাহলে আমাদের তা মেনে চলা উচিত। শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবি হয় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়।

ইতিকথা

শুধু হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেই সাফল্য ধরা দেবে না। কৌশলী হয়ে স্মার্ট উপায়ে কাজ করতে হবে। পড়াশোনা ক্ষেত্রেও মানতে হবে পড়াশোনা করার সঠিক নিয়ম।

আশা করবো যে আজকের ব্লগ পোস্টে এ বিষয়ে তোমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পরামর্শ দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে আরও কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট করতে পারো।

One Response

  1. Admin August 15, 2023

Leave a Reply

error: Alert: Content selection is disabled!!