মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় সঠিক ভাবে জেনে নিন !

মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্টে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং প্রকৃতিতে পাওয়া এক সুস্বাদু খাবার হলো মধু। মধু ওষধি গুণাগুণে ভরপুর। মধু আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে নানা রোগ থেকে মুক্তি দেয়। তাই আমাদের সবারই নিয়মিত মধু খাওয়া দরকার। 

মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে স্বয়ং আমাদের ইসলামের নবিও বলে গেছেন – “মধু হলো মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধের মধ্যে একটি।”

মধু এত উপকারী হওয়াই আমরা অনেকেই মধু খেয়ে থাকি। কিন্তু অনেকেই মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময় না জানায় খুব ভালো উপকার পরিলক্ষিত হয় না। 

মধু এমন একটি খাদ্য যাতে পুষ্টিগুণে ভরপুর, এ মধুতে কি কি আছে তা এক নজরে দেখে নেই। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ থাকে, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ থাকে, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ থাকে। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনজাইম। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। মধুতে আছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬ সহ অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-মাইক্রোরিয়াল উপাদান যা আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রতাঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে।

আজ আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবো মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় নিয়ে।

মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়

সেক্সে মধুর উপকারিতা

মধু শরীরে অন্যান্য রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের পাশাপাশি সেক্স জনিত অসংখ্য সমস্যা দূর করে। সেক্স মধুর উপকারিতা অনেক। যারা সেক্স জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা তাদের সমস্যা দূর করতে মধু নিয়মিত খেতে পারেন। তাহলে, ওষুধ বাদেই আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন। সেক্সে মধুর যেসব উপকারিতা রয়েছে:

  • মধু নারী-পুরুষ উভয়েরই সেক্স চাহিদা বৃদ্ধি করে।
  • মধু পুরুষের শরীরে সেক্স বিষয়ক হরমোন টেস্টাস্টেরণ এবং মেয়েদের এস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। 
  • মধু নিয়মিত খেলে স্বামী-স্ত্রীর সেক্স টাইম দীর্ঘ হয়।
  • অতি অল্প সময়ে বীর্য বের হওয়া রোধ হয়।
  • পুরুষের লিঙ্গ শক্ত, মোটা ও লম্বা হয়।
  • মধু শক্তিবর্ধক খাবার, যা শরীরে দূর্বলতা কাটিয়ে শক্তি যোগায়। আর শরীরে শক্তি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে সেক্স টাইম ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। 

এক কথায় বলা যায়, মধু স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন মধুর করে তোলে।

রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা

রাতে মধু খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায় –

  • রাতে অনিদ্রা ভাব দূর করে ভালো ঘুম হয়।
  • শরীরে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায়। ফলে ওজন কমতে সাহায্য করে। 
  • পেট পরিষ্কার হয়।
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • সেক্সে আগ্রহ বাড়ে।
  • হজম শক্তি বাড়ে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়।
  • কাশি নিরাময় হয়।
  • বুকে জমা কফ তরল হয়ে বেরিয়ে যায়। 

রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম

মধু নিঃসন্দেহে শরীরের জন্য উপকারী। তবে কিছু নিয়ম মেনে মধু খাওয়ার অভ্যাস করলে সেটা শরীরের জন্য আরো উপকারী। মধু যেকোনো সময় খাওয়া যায়। তবে সকালে ও বিকালে নিয়ম মেনে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম হলো- ঘুমানোর আগে ১ চা চামচ মধু খাওয়া। চাইলে, হালকা গরম দুধ কিংবা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও, কালোজিরা কিংবা রসুনের সাথে মিশিয়ে সকালে মধু খেতে পারেন। এগুলো শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। কারণ আমরা সবাই জানি, কালিজিরা, রসুন এবং মধু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার অন্যতম অস্ত্রসমূহ।

সহবাসে মধুর ব্যবহার

মধু স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন মধুময় করতে প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। সহবাসে মধুর ব্যবহার এখন ব্যাপক প্রচলিত। স্বামী-স্ত্রীর সহবাসে দুজনেই ভালো ভাবে উপভোগ করতে এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ চালিয়ে যেতে মধুর অবদান অনেকখানি। 

প্রতিদিন পুরুষের লিঙ্গে মধু দিয়ে মালিশ করলে লিঙ্গ শক্ত ও মোটা হয় এবং সহবাসে মনভরে উপভোগ করা যায়। বীর্য ঘন হয় এবং দেরিতে বের হয়। এরকম মালিশ পর্ব একটানা তিনমাস প্রতি রাতে চালিয়ে যেতে হবে।  অনেকে সহবাসে পিচ্ছিল করতে মধুর ব্যবহার করে থাকে।

মধু আঠালো, পিচ্ছিল জাতীয় তরল। যা লুব্রিক্রেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যদি সেটা খাঁটি মধু হয়। কারণ খাঁটি মধু দিলে কোনো সমস্যা হয়না, বরং উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু ভেজাল মধু পিচ্ছিলকারক হিসেবে ব্যবহার করলে বড়-সড় ক্ষতি হতে পারে। তাই সহবাসে মধু ব্যবহারের আগে মধুর খাটিত্ব নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।

মধু আসল কি না নিশ্চিত না হলে সহবাসের সময় পিচ্ছিল করার জন্য মধু ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

আরো পড়ুন: সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি আসুন জেনে নেই

সহবাসে মধুর ব্যবহার

মধুর উপকারিতা

মধু হলো মিষ্টি, পিচ্ছিলকারক তরল খাবার, যাতে রয়েছে প্রায় ৪৫টি পুষ্টি উপাদান। সেগুলোর মধ্যে গ্লুকোজ, সুক্রোজ, ফ্রুকটোজ এবং মন্টোজ অন্যতম। মধুর উপকারিতা বলতে শুরু করলে শেষ করা সময়সাপেক্ষ। মধুর কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো-

দাঁতের মাড়ি শক্ত করে

মধুতে রয়েছে অন্যতম উপকারী পুষ্টি উপাদান ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য কতটা উপকারী তা আমরা কম-বেশি সবাই জানি। এই ক্যালসিয়াম দাঁতের মাড়ি শক্ত করে এবং ব্যাথা দূর করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

মধু আমাদের শরীরে হজম ক্রিয়া বৃদ্ধি করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

নিয়মিত মধুর সাথে লেবুর রস ও পানি মিশিয়ে পান করলে শরীরে বিষাক্ত সব পদার্থ বের হয়ে যায়। এতে আমাদের ওজন কমাতে খুবই উপকারী।

হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে

মধু শরীরের রক্তের ধমনী প্রসারিত করে। যার কারণে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয়। সারা শরীরে স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল হৃদ জনিত অনেক সমস্যা যেমন- হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ব্লক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।

রক্ত স্বল্পতা রোধ করে

মধুতে রয়েছে রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিকারক উপাদান, যা শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এতে শরীরে রক্ত স্বল্পতা সমস্যা বা আ্যনিমিয়া দূর হয়।

সর্দি-জ্বর, কাশি এবং এলার্জি প্রতিরোধ করে

তুলসি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে সিজনাল সর্দি-জ্বর উপশম করে। এছাড়াও, যাদের কোল্ড এলার্জি রয়েছে তাদের জন্যও মধু ভীষণ উপকারী। এতে সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যায়।

হাঁপানি, আ্যজমা প্রতিরোধ করে

মধু ফুসফুসজনিত রোগ নিরাময়ে ভীষণ উপকারী। যাঁরা হাপানি অথবা আ্যজমা রোগে আক্রান্ত তাঁরা প্রতিদিন সকালে মধু খেলে এসব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

ত্বকের ঘা শুকাতে কার্যকরী

মধু ত্বকের ঘা, মুখের ঘা সারাতে কার্যকরী। ক্ষতস্থানে মধুর প্রলেপ দিলে এবং মধু খেলে ঘা জনিত সমস্যা নিরাময় হয়।

ত্বকের ব্রণ, মেসতা দূর করে

রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার কমবেশি সবারই জানা। মধু ত্বকের জীবাণু দূর করে এবং ত্বককে সুস্থ রাখে। এজন্য মুখের ব্রণ, মেসতা ইত্যাদি উধাও করতে মধু ব্যবহার করা উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় 

মধুতে থাকা অসংখ্য পুষ্টি ও খাদ্য উপাদান শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে খুব সহজেই রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

আলসার ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধান করে 

মধু আমাদের দেহের পাকস্থলী, লিভার জনিত নানা ধরনের রোগ থেকে দূরে রাখে। হজম ক্রিয়া বৃদ্ধি করে। ফলে, আলসার ও গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

যৌন সমস্যা দূর করে 

মধু শরীরে সেক্স হরমোন সংখ্যা বাড়িয়ে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে বিভিন্ন যৌন সমস্যা দূর করে। এতে নারী-পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করে এবং সেক্সে বিভিন্ন উপকার করে। 

কালোজিরা ফুলের মধু

মৌমাছি অনেক ধরণের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। যেমন- কালোজিরা ফুলের মধু, সরিষা ফুলের মধু, লিচু ফুলের মধু ইত্যাদি। এই সকল মধুর মধ্যে কালোজিরা ফুলের মধু সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের। এই মধু সংগ্রহ করার সময় সাধারণত ফেব্রুয়ারী মাস। কারণ ওই সময় কালোজিরা গাছে ফুল ফোটে।

কালোজিরা ফুলের মধু চেনার সহজ উপায় হলো- কালোজিরা ফুলের মধু দেখতে খেজুর গুড়ের মতো কালচে রঙের হয় এবং স্বাদও খেজুর গুড়ের মতো। এ মধু সাধারণত জমতে দেখা যায় না, তবে ঘনত্ব বেশি হলে জমতে পারে। কালোজিরা ফুলের মধুর উপকারিতা অনেক চলুন আরও বিস্তারিত জেনে নেই ।

কালোজিরার মধুর উপকারিতা

অন্যান্য সকল ফুলের মধুর তুলনায় কালোজিরা ফুলের মধু গুণে-মানে সব দিক থেকে এগিয়ে। কালোজিরা ফুলের মধুর মধ্যে কালোজিরা ও মধুর উপকারিতা একসাথে পাওয়া। আর আমরা সবাই জানি, মধু এবং কালোজিরা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। এজন্য কালোজিরা ফুলের মধু অন্যসব মধু থেকে সেরা, যা আমাদের শরীরে খুবই শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। কালোজিরার মধুর বেশ কিছু উপকারিতা হলো-

  • হাঁচি-কাশি, জ্বর- সর্দি নিরাময় করে 
  • বাত ব্যাথা সহ শরীরে নানা অংশে ব্যাথা দূর করে। 
  • স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। 
  • শরীরে মেদ কমায়।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • ফুসফুসজনিত সমস্যা রোধ করে। 
  • হার্ট-অ্যাটাকের সুযোগ কমায়।
  • এলার্জি জনিত হাঁচি-কাশি নিরাময় করে। 
  • পাকস্থলী জনিত রোগ প্রতিরোধ করে। 
  • শরীরে ইনস্ট্যান্ট এনার্জি যোগায়।
  • দেহের হাড় শক্ত করে 
  • ইরেক্টাইল ডিসফাংশন দূর করে। 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 
  • হজম শক্তি বাড়ায়। 
  • গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা রোধ করে।

আরো পড়ুন: কালোজিরা তেলের উপকারিতা

মধু খাওয়ার অপকারিতা

মধু অবশ্যই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তবে নিয়মের বাইরে যেয়ে অতিরিক্ত খেয়ে নিলে সেটা নিশ্চয় ভালো হবে না। তাই মধু খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি মধু খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে, যদি তা সঠিক উপায়ে না হয়। 

মধু খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত-

ডায়বেটিস রোগীর ক্ষেত্রে: মধুর উপকারিতা থাকার সত্ত্বেও ডায়বেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর। কারণ মধুতে রয়েছে ফ্রুকটোজ, যা চিনির অন্যতম উৎস। আর এই ফ্রুকটোজ খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণে বেড়ে যায়। যার কারণে ডায়বেটিসও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

বমি বমি ভাব হলে: মধু খেলে অনেকেরই বমি বমি ভাব হয়। এজন্য যাদের এ সমস্যা হয় তাদের না খাওয়ায় ভালো।

এলার্জি সমস্যা রোধে: যাদের পরাগ রেণুতে এলার্জি তাদের মধুতেও এলার্জি হয়। এজন্য এ সমস্যা যাদের, তাদের মধু না খাওয়ায় শ্রেয়।

দাঁত ক্ষয় হওয়া: মধুতে ফ্রুকটোজ থাকার কারণে চিনির অন্যতম উৎস এটি। এজন্য পরিমাণের অতিরিক্ত খেলে দাঁত ক্ষয় হতে পারে। এজন্য এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

ইতিকথা 

এই ছিল আমাদের মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় নিয়ে আলোচনা। আশা করি, লেখাটি আপনাদের উপকারে আসবে। তাই, আমাদের মধু সম্পর্কিত আলোচনা কেমন লাগল তা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।

Leave a Reply