ট্রেড লাইসেন্স কি এবং কেন প্রয়োজন?

আসসালামু আলাইকুম, আজকে ব্যবসায় করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক ট্রেড লাইসেন্স কি সে সম্পর্কে আলোচনা করব, যেটি ব্যতীত বর্তমানে কোনো ব্যবসায় বৈধ হয় না।

আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনারা ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন।

ট্রেড লাইসেন্স কি

ট্রেড লাইসেন্স কি এবং কেন প্রয়োজন?

ট্রেড লাইসেন্স শব্দটি একটি ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ Trade-ব্যবসায় এবং License-অনুমতি। তাহলে শব্দটির অর্থ দেখেই বোঝা যায় যে আসলে ট্রেড লাইসেন্স কী।

ব্যবসায়ের বৈধতা প্রমাণের জন্য অথবা শুরু করার জন্য যে পত্রের মাধ্যমে চুক্তি করা হয় এবং অনুমতি নেওয়া হয় সেটিই হলো ট্রেড লাইসেন্স। একটি ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স থাকা মানে সেই ব্যবসায়টি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এবং বৈধ। সিটি কর্পোরেশন করবিধি-২০০৯ অনুযায়ী বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুন: গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া – ১০টি সেরা ব্যবসার আইডিয়া

এই ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। যেমন- ব্যবসায় সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে সহজেই লোন নিতে পারে, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৈধভাবে পরিচালনা করতে পারে। ব্যবসায়ের বাইরে কোনো পক্ষের সঙ্গে যেকোনো ঝামেলা মেটাতে আইনত গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বর্তমানে, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন আর্থিক সহায়তাসহ অনেক সুযোগ সুবিধা পেতে পারে। 

অন্যদিকে, ট্রেড লাইসেন্স না করলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে অনেক রকম ঝামেলায় পড়তে হয়। যেমন- সর্বপ্রথমেই ব্যবসায়টি অবৈধ বলে গণ্য হবে কারণ এটি দেশীয় আইনে সিদ্ধ নয়। ফলে যেকোনো পণ্য উৎপাদন করলে বা বিক্রি করলে সেটি অবৈধ পণ্য হিসেবে বাতিল হবে।

অনেক ক্ষেত্রে, জরিমানা ধার্যসহ ব্যবসায়টি উচ্ছেদও হতে পারে। এছাড়াও, ব্যবসায়ের তৃতীয় পক্ষের সাথে সমস্যা নিরসনে ঝামেলায় পড়তে পারে। সরকারি সেবা নাও পেতে পারে। 

এসব গুরুত্বপূর্ণ কারণের জন্য বর্তমানে সবধরণের প্রতিষ্ঠানেরই ট্রেড লাইসেন্স করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তবে, ক্ষেত্র ভেদে ছোট ছোট মুদি দোকান, চায়ের দোকান ট্রেড লাইসেন্স না করলেও পারে। তবে এটি করা উত্তম।

ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরি

ট্রেড লাইসেন্স ২৯৪ ক্যাটাগরিতে করা যায়। এছাড়া নিবন্ধনের ভিত্তিতে ট্রেড লাইসেন্স হলো-

  • নতুন ট্রেড লাইসেন্স: নতুন ব্যবসায় শুরু করার জন্য এধরণের লাইসেন্স নেওয়া হয়ে থাকে।
  • নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স: পুরোনো বিদ্যমান ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পূর্বে করা ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে, মেয়াদ বাড়াতে এধরণের লাইসেন্স নেওয়া হয়ে থাকে। 

ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করার যোগ্যতা

ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করতে হলে যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার-

  • ব্যবসায়ের মালিকদের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ হতে হবে।
  • নিজেদের একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অবশ্যই থাকতে হবে।

আরো পড়ুন: মেয়েদের ঘরোয়া ব্যবসা (সেরা ৭টি আইডিয়া )

ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ধরণভেদে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আলাদা হয়ে থাকে। যেসব কাগজপত্র সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে লাগে-

  • ব্যবসায়ের দোকানটি নিজের হয়ে থাকলে হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদের ফটোকপি এবং ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি। 
  • ভাড়ার হয়ে থাকলে ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি
  • প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি 
  • প্রত্যেকের পাসপোর্ট সাইজের ছবি 

এছাড়াও, এগুলোর সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানভেদে যেসব কাগজপত্র বা অনুমতি প্রয়োজন

অংশীদারি কারবারে-

  • অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিপত্র, যেটি ৩০০ টাকা দামের স্ট্যাম্প পেপারে উল্লেখ থাকবে।

কোম্পানির ক্ষেত্রে-

  • কোম্পানির নিবন্ধনপত্র 
  • কোম্পানির মূল দলিল স্মারকলিপি

ক্লিনিক/প্রাইভেট হাসপাতালের জন্য- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হতে অনুমতি নিতে হবে।

আবাসিক হোটেল এবং প্রিন্টিং প্রেসের জন্য-

ডেপুটি কমিশনার হতে অনুমতি প্রয়োজন।

ট্রাভেলিং এজেন্সির জন্য- সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে অনুমতি প্রয়োজন। 

ওষুধের ক্ষেত্রে- ড্রাগ লাইসেন্সের কপি প্রয়োজন।

আরো পড়ুন: বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা

ট্রেড লাইসেন্সের ক্যাটাগরি অনুযায়ী ফি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সেটা ২০০- ২৬০০০ পর্যন্ত হতে থাকে। 

সাধারণত নতুন ট্রেড লাইসেন্স করতে প্রদান করতে হয় ট্রেড লাইসেন্স ফি, সাইনবোর্ড ফি এবং এই দুই খরচের সমষ্টির ওপর ১৫%ভ্যাট।

আাবার, নবায়ন করার ক্ষেত্রে এসব খরচের সাথে যুক্ত হয় উৎসকর। উৎসকর ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা হতে একটু বেশি-ই। যেটি হলো ৩ হাজার টাকা। 

ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম

ট্রেড লাইসেন্স কি আশা করছি এতক্ষণে তা বুঝে গেছেন। এটি কিভাবে পেতে হয় এবং ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম এবার সে সম্বন্ধে জানবো।

ট্রেড লাইসেন্স করতে হলে প্রথমেই জানতে হবে যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি কোন এলাকায় অবস্থিত। ব্যবসায়টি যেখানে অবস্থিত হয় সেখানকার স্থানীয় সরকার থেকে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে। 

আপনার ব্যবসায়টি যদি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার মধ্যে হয় তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ হতে, পৌরসভা এলাকার হলে পৌরসভা হতে, সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে হলে সিটি কর্পোরেশন থেকে, উপজেলা অফিসের অধীনে হলে উপজেলা অফিস হতে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।

এক্ষেত্রে যেসব নিয়মাবলি রয়েছে-

  • ব্যবসায়ের এলাকা নির্ধারণের পরে ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিস থেকে আই/কে ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। আই ফর্ম ছোট প্রতিষ্ঠানের এবং কে ফর্ম বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য। 
  • দায়িত্ব নির্ধারিত ব্যাংকে ট্রেড লাইসেন্সর জন্য নির্ধারিত ফি ভ্যাটসহ জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।
  • তারপর উক্ত রশিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দায়িত্বরত স্থানীয় সরকারের অফিসে জমা দিতে হবে।
  • উক্ত অফিসের একজন দায়িত্বরত কর্মকর্তা উক্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নিবে।
  • ভিজিটিংকৃত অফিসারের রিপোর্ট অনুযায়ী স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে, চুড়ান্তভাবে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করবে।

ট্রেড লাইসেন্স একজন প্রার্থী ২-৭ দিনের মধ্যেই পেয়ে যায়।

ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন আবেদন

ই-ট্রেড লাইসেন্স কি তা অনেকেই জানেন না। এখন ঘরে বসেই সরকারি অনেক সেবা পাওয়া যাচ্ছে। তেমনি, ঘরে বসেই অনলাইনে নিজ ব্যবসায়ের জন্য ট্রেড লাইসেন্স করা যায়, যেটাকে বলে ই-ট্রেড লাইসেন্স।

ই-ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য প্রথমে www.etradelicense.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এবার সেখান থেকে নতুন নিবন্ধনের জন্য ক্লিক করুন/Click for new registration বারে ক্লিক করতে হবে। তারপর একটি ফরম আসবে যেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে পূরণ করে নিবন্ধন বারে ক্লিক করতে হবে। 

এভাবেই ধাপে ধাপে অনলাইনে ই-ট্রেড লাইসেন্সের কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। 

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম

মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে একটি ট্রেড লাইসেন্সের আর কোনো ভ্যালু থাকে না। তবে সেটা আবার কার্যকর করা যায় যদি তার মেয়াদ নবায়ন করা হয়। একটি ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ ১ বছর। তাই, এক বছর পর পর মেয়াদোত্তীর্ন লাইসেন্সের নবায়ন করতে-

  • প্রথমবার লাইসেন্সকৃত অফিসে যেয়ে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জানাতে হবে।
  • নবায়নের জন্য পুনরায় প্রথমবারের মতো ফি জমা দিতে হবে।
  • তারপর কর্মকর্তা নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করবে।

ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসায়ের জন্য রাষ্ট্রের কাছে অনুমতি পাওয়ার এক দলিল। এটি এখন বাংলাদেশের সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নইতো সেই ব্যবসাটি অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।

আশা করি, ট্রেড লাইসেন্স কি এবং ব্যবসায়ের জন্য এটি কেন জরুরি তা জানতে পেরেছেন। এখন থেকে নিজেরাই নিজেদের জন্য  হয়রানি না হয়ে সহজেই লাইসেন্স করে নিতে পারবেন।

Leave a Reply