বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

মানব সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ ব্যবসা করে আসছে। আমাদের দেশে চাকুরির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি, ব্যবসায়ের প্রতি বেশ অনীহা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যবসায়ের পরিধি আমাদের দেশেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিন দিন ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে তরুণ সমাজ সহ নানা বয়সী মানুষের মাঝে। ব্যবসায়ের এত জনপ্রিয়তার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণও আছে। ব্যবসায় হচ্ছে একটি স্বধীন পেশা। এখানে আছে নিজের চিন্তার স্বাধীনতা, সাথে আছে কাজের স্বাধীনতাও।

একটি নতুন ব্যবসায় শুরু করতে গেলে আমাদের মাথায় প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে সেটি হলো বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি। আপনারা যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন বা ব্যবসা ধারণা নিতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি বেশ উপকারী হবে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া business ideas সম্পর্কে।

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজন ব্যবসা কোনটি?

সরাসরি ব্যবসায়ের নাম উল্লেখ না করে এখানে এই প্রশ্নের উত্তর একটা ধারনার মাধ্যমে দিতে চেষ্টা করবো। ব্যবসায়ের মাধ্যমে মূলত ভোক্তার নানারকম সমস্যার সমাধান করা হয়। যানবাহন ব্যবসার মাধ্যমে ভোক্তার স্থানগত সমস্যার সমাধান করা হয়। আপনি যদি কিছুটা চৌকস, বুদ্ধিমান ও দূরদর্শী হোন তাহলে অনেকক্ষেত্রে আপনি নিজেই লাভজনক ব্যবসা সম্পর্কে ধারনা পেয়ে যাবেন।

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে সেগুলো, যেগুলো মানুষের নানারকম সমস্যা সমাধানে সক্ষম, যেগুলোর যথেষ্ঠ বাজার চাহিদা রয়েছে, দিনের পরিবর্তনের সাথে সাথে ভোগকারীর পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে ইত্যাদি। এই কথাটি থেকে আপনি নিশ্চয় সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে একটা ধারনা পেয়ে গেছেন। এবার চলুন জেনে নেয় আসলেই কোন ব্যবসায়গুলো লাভজনক।

ব্যবসার আইডিয়া

ইউটিউব থেকে আয়

আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের বেশ অনেকটা সময় আমরা কাটাই ইন্টারনেটে নানারকম ভিডিও, মুভি, নাটক, শর্টফিল্ম, তথ্যমূলক ভিডিও দেখে। আর ইউটিউব হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে অন্যতম ও সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হলো ইউটিউবিং করা।

ইউটিউব ভিডিও মনিটাইজ করে প্যাসিভ ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে, তবে এখানে দরকার পরিশ্রম ও ধৈর্য্য। শিক্ষামূলক, ভৌগলিক স্থান, হাস্যকর ভিডিও, টেকনোলজি ইত্যাদি নানা রকম টপিক আছে যেগুলো দিয়ে আপনার ইউটিউব ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

আপনি যে বিষয়ে ভালো জানেন, বেশ অভিজ্ঞ ও আগ্রহী সেই বিষয়ে ভিডিও বানিয়ে তা ইউটিউবে মনিটাইজ করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেলে সর্বনিম্ন ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম থাকলে গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে আপনার চ্যানেল মনিটাইজ করতে পারবেন। আপনি যদি ছাত্রাবস্থায় কিংবা অন্যকোনো কাজের পাশাপাশি ইউটিউবিং করেন তাতেও ভালো পরিমান টাকা আয় করার সুযোগ পাবেন।

ব্লগ থেকে আয়

ব্লগিং অর্থ হলো নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে এক বা একাধিক ওয়েবসাইটে লেখালেখি করা। আমাদের দেশে ব্লগিং পেশাটা এখনো তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও অতি দ্রুত তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আপনি যখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কোনো বিষয়ে লেখা বা আর্টিকেল পড়েন সেখানে নানা রকম বিজ্ঞাপন দেখতে পান।

ওয়েবসাইটটা যারা পরিচালনা করে তারা মূলত বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তাদের সাইটে বিজ্ঞাপন দেখায় এবং সেই বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল অ্যাড নেটওয়ার্ক হলো গুগল অ্যাডসেন্স।

আপনি দু’টি উপায়ে ব্লগিং করতে পারেন, একটি হলো নিজেই ওয়েবসাইট বানিয়ে সেখানে লেখালেখি করা এবং অন্যটি হলো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্যের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করা। আগেকার দিনে একটা ওয়েবসাইট বানানো বেশ কষ্টসাধ্য ছিলো কিন্তু প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির কারনে এখন অনেক ওয়েবসাইট বিল্ডার (Website Builder) ও সিএমএস (CMS – Content Managment System) প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।

যেখান থেকে আপনি খুব সহজে ও কম খরচে নান্দনিক সব ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলতে পারেন। তেমনই দুইটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হলো ব্লগার ও ওয়ার্ডপ্রেস। ব্লগার ডট কমে ফ্রিতেই ওয়েবসাইট বানানো গেলেও ওয়ার্ডপ্রেসে কিছু পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। তবে ওয়ার্ডপ্রেসে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায় ব্লগারের চেয়ে। নতুনদের জন্য এটাও ভালো একটি ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে ।

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা

স্থানীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

আপনি যদি কম্পিটারের অফিস সফটওয়্যার সহ অন্যান্য সফটওয়্যারে পারদর্শী হয়ে থাকেন তাহলে নিজ এলাকায় এধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারেন। বর্তমান চাকুরির বাজারে কম্পিউটারে দক্ষতা সহ অন্যান্য অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যারে দক্ষ হওয়া অনেক প্রয়োজন। আপনার এলাকায় যদি ভালো মানের কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না থাকে তাহলে এই উদ্যোগটা আপনার জন্য ভালো সুযোগ হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে কিছু বিনিয়োগের প্রয়োজন এই ব্যবসায়ে। কারণ আপনাকে একটি ভালো জায়গা ভাড়া নিতে হবে, বেশ কয়েকটি কম্পিউটার সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হবে। আপনি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে মাইক্রোসফট অফিস, অ্যাডোবি সফটওয়্যার, ফ্রিল্যান্সিং কোর্স যেমন- ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, এসইও ইত্যাদি শেখাতে পারেন। সব বিষয়ে যদি আপনি পারদর্শী না হয়ে থাকেন তাহলে প্রতি বিষয়ের জন্য এক্সপার্ট হায়ার করতে পারেন।

আপনি যদি সুনামের সাথে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন তাহলে এই ব্যবসায় বেশ ভালো পরিমাণ মুনাফা অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের চাহিদা বাড়বে এবং সফলতার সুযোগ অনেক বেশি। এটি একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।

ওয়েডিং ফটোগ্রাফি

মানুষের বিলাসিতা কিন্তু দিন দিন বৃদ্ধি পাছে, সে সাথে বাড়ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য আলোকচিত্রী বা ফটোগ্রাফারের চাহিদা। যারা চান তাদের আনন্দের মুহূর্তগুলো ফ্রেম-বন্দি করে রাখতে তারা কার্পণ্য না করে অনেক টাকা খরচ করে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের ভাড়া করে নানা রকম মূহুর্তের ছবি তুলিয়ে নেন। ইভেন্টে ফটোগ্রাফারদের বেশ চাহিদার পাশাপাশি সম্মানও থাকে।

শুধু বিবাহ, গায়ে হলুদ, জন্মদিন ইত্যাদি ইভেন্টই না আপনি চাইলে নানা রকম ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় আপনার পারদর্শীতার প্রমাণ দিয়ে বিজয়ী হবার সম্মানও পেতে পারেন। এছাড়াও অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে ফটোগ্রাফার হিসেবে যোগদান করতে পারেন, নিজের বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের ছবি তুলেও সম্মানী নিতে পারেন।

ফটোগ্রাফি করতে হলে আপনাকে প্রথমে ভালোভাবে এটাকে শিখতে হবে, আয়ত্বে আনতে হবে। সেজন্য আপনি অল্প টাকা দিয়ে ও অনলাইনে ভিডিও দেখে বা কোর্স করে ফটোগ্রাফি শিখতে পারেন। তারপর যখন ভালো পর্যায়ে চলে আসবেন তখন ভালোমানের দামী ক্যামেরা কিনে পেশাদারিত্ব শুরু করতে পারেন। নতুনদের জন্য এটাও ভালো একটি ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে।

অনলাইনে গিফট আইটেম বিক্রি

মানুষের কর্মব্যস্ততা দিনে দিনে বাড়ছে কিন্তু কমছে না। প্রিয়জনকে সময় দেয়া যেন অনেকটাই কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য। অনেক সময় আবার কাজের জন্য থাকতে হয় আপন মানুষদের থেকে অনেক দূরে। এরকম পরিস্থিতিতে বিশেষ কোনো দিবসে বিশেষ মানুষটাকে কোনো কিছু উপহার দেয়ার মতো সুযোগ থাকে না। এই সমস্যা সমাধানে আপনি অনালাইনে গিফট আইটেম বিক্রির ব্যবসায় শুরু করতে পারেন।

অনেকে চায় তার অবর্তমানে প্রিয়জনকে তার পক্ষ থেকে গিয়ে কেউ একটা উপহার দিয়ে আসুক। আপনি অনলাইনের মাধ্যমে নানারকম গিফট আইটেমের অর্ডার নিয়ে ক্রেতা যাকে পাঠাতে চান তার ঠিকানায় হোম ডেলিভারি দিয়ে দিতে পারেন। আবার বিশেষ ধরনের উপহার সামগ্রী যেমন হাতে বানানো জিনিস, পোর্টেইট ছবি ইতাদিও বিক্রি করতে পারেন। এটা একটা অন্যতম সফলকাম ও লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে।

ফ্রিল্যান্সিং

বর্তমান সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি পেশা হলো ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং হলো মুক্ত পেশা। এটাকে একধরনের ব্যবসায় বা সেবাও বলা চলে। এখানে আপনি পাবেন কাজের সময় নির্ধারনের সুযোগ, ইচ্ছে মতো কাজের চাপ গ্রহণের সুযোগের মতো আরো অনেক কিছু। ফ্রিল্যান্সিঙ্গয়ের ভেতরে অনেকগুলো সেক্টর রয়েছে।

জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং পেশা হলো ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট রাইটিং, ভিডিও এডিটিং, স্লাইড মেকিং, এসইও ইত্যাদি। আপনি যেকোনো চাহিদাপূর্ণ একটি সেক্টরে দক্ষতা অর্জন করে কাজ শুরু করতে পারেন।

কাজ শেখার জন্য একটা চলনসই কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ কিনে নিতে পারেন। এরপর যখন ভালো অভিজ্ঞ হয়ে যাবেন তখন সম্পূর্ণভাবে কাজের জন্য প্রয়োনীয় এক বা একাধিক কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিনে নিবে। এই পেশায় বেশ অনেক সুবিধা আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো আপনি কাজ শেখার পাশাপাশি টুকটাক অর্থও আয় করতে পারবেন।

আবার নিজের কাজে ভালো অভিজ্ঞ ও পারদর্শী হয়ে গেলে অন্যকে কাজ শেখানোর মাধ্যমেও সম্মানী নিতে পারেন। বর্তমানে অন্যতম লাভজনক ব্যবসায় হলো ফ্রিল্যান্সিং করা। বর্তমানে এটা একটা খুবই লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া ।

লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া

অর্গানিক ফুড বিক্রি

দিনে দিনে ভেজালের মাত্রা যেন বেড়েই যাচ্ছে। শহুরে পরিবেশে যেন ভেজালমুক্ত খাবার পাওয়া আলাদীনের প্রদিপ পাওয়ার মতো হয়ে দাড়িয়েছে। এই প্রতিকূলক সময়ে আপনি যদি অর্গানিক, ফ্রেশ খাবার মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারেন তাহলে আপনি মানুষের ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি বেশ ভালো পরিমাণ মুনাফাও অর্জন করতে পারবেন। অর্গানিক ফুডের ব্যবসায় একটি সামাজিক ব্যবসায় বটে।

গ্রামের চেয়ে শহরে অর্গানিক খাবারের অভাব বেশি। আপনি গ্রাম থেকে বিভিন্ন টাটকা ফল, সবজি, আচার, মধু, দুধ ইত্যাদি শহরের মানুষের কাছে বিক্রি করতে পারলে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।

ধরুন, আপনি প্রতিদিন সকালে টাটাক ও সতেজ খাবার সঙ্গগ্রহ করে তা ডেলিভারি কোম্পানি অথবা নিজেই একটি বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেলের মাধ্যমে ক্রেতার ঠিকানায় পৌছে দিলেন।

আপনার পণ্য যদি ভালো হয় তাহলে নিয়মিত ক্রেতা পাবেন অনেক বেশি। এখন সচেতন মানুষ বেশি দাম হলেও ভালো মানের জিনিস চাই। বর্তমানে সবচেয়ে লাভজন ব্যবসা গুলোর মধ্যে একটি হলো অর্গানিক ফুডের ব্যবসায়।

মাশরুম চাষ

মাশরুম একটি ঔষধী ও স্বাস্থ্যকর খাবার। এর বহুমাত্রিক উপকারীতা রয়েছে। মাশরুম দিয়ে অনেক ধরনের শুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি আচারও বানানো যায়। অনেক উন্নত দেশে মাশরুম বিশাল পরিমানে চাষ হয়।

কিন্তু প্রচারণার অভাবে বা অন্য কোনো কারণে বাংলাদেশে মাশরুম চাষের তেমন কোন জনপ্রিয়তা নেই। দেশে সবেমাত্র এর জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। আপনিও সেই কাতারের মানুষের মাঝে থাকতে পারেন যদি এখন থেকে মাশরুম চাষ করতে পারেন।

ঢাকার সাভারে সহ প্রতিটি উপজেলা কৃষি অফিসে মাশরুম চাষের ব্যাপারে তথ্য ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও অনলাইনেও বহু তথ্য পাওয়া যায় মাশরুম চাষের ব্যাপারে। সেগুলো থেকে আপনি ভালো ধরনের সম্যক ধারণা নিতে পারবেন এই ব্যাপারে। এটা একটি উঠতি ব্যবসায়।

মাশরুম চাষের জন্য অনেক বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই। অল্প জায়গায় খড়ের ছাউনি দিয়ে ঘর বানিয়ে মাশরুম চাষ করা যায় খুব সহজেই ও অল্প পরিশ্রমে। নিজে মাশরুম চাষ করে তা শুকিয়ে স্থানীয় বাজারে সহ অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। অথবা কাচা মাশরুম দিয়ে খাবার, আচার বানিয়েও তা বিক্রি করতে পারেন। বর্তমানে এটা একটা খুবই লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।

শৌখিন পাখি ও মাছ বিক্রি

অবসর সময়ে মানুষ নানারকম শৌখিন জিনিসের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে। তেমন একটা কাজ হলো রঙিন মাছ পালন ও পাখি পোশা। শহরের দিকে এই প্রচলনটা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে বেশি। আপনার বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত খোলামেলা জায়গা থাকে তাহলে সেখানে রঙিন মাছ চাষের পাশাপাশি নানারকম দৃষ্টিনন্দন পাখর চাষ করতে পারেন। এজন্য আপনাকে বেশ যত্নশীল হতে হবে প্রাণীদের প্রতি।

রঙিন মাছ চাষের জন্য ককশিটের কয়েকটি বক্স কিনে নিতে পারেন অথবা ১০০০ লিটারের তেলের ট্যাঙ্ক কিনে নিতে পারেন। ভালো জাতের মাছ সংগ্রহ করে ইউটিউবে এই ধরনের ভিডিও দেখে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। রঙিন মাছ বাড়িতেই চাষ করা যায়, এজন্য আপনার বিশাল বড় হ্যাচারি থাকার প্রয়োজন নেই।

এর পাশাপাশি আপনি নানা ধরনের পাখিও পালণ করতে পারেন। প্রথমে অল্প কয়েকটি ঘরওয়ালা বাসা বানিয়ে সেখানে কয়েকটি জাতের জোড়া পাখি কিনে এনে পালন করবে। এর পর যখন সেগুলো থেকে বাচ্চা পাবেন এবং পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে তখন বড় পরিসরে শুরু করলেন।

রঙিন মাছ ও পাখি আপনি অনালাইনে ও অফলাইনে দুই মাধ্যমেই বিক্রি করতে পারেন। এজন্য নানারকম পদ্ধতি আছে পার্সেল করে পাঠানোর। রঙিন মাছ ও পাখি বর্তমানে ভালো একটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।

গার্ডেনিং সরঞ্জাম সাপ্লাই

মানুষের বাগান করা সখটা খুব আগে থেকেই প্রচলিত। ধীরে ধীরে এর প্রচলন গ্রামে থেকে শহরের দিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন চায় একটা গোছালে সবুজে ঘেরা ছাদ, বেলকনি। কিন্তু অনেকেই জানেন না বাগান করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কোথায় সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে।

ফেসবুকে পেইজ খুলে কুরিয়ারের মাধ্যমে বাগান তৈরির জন্য গাছ, পাম্প, সার সহ অন্যান্য টুলস বিক্রি করতে পারেন। নানা ধরনের ফুল, ফলের গাছ, ক্যাকটাস গাছ বিক্রি করার পাশাপাশি এর জন্য প্রয়োজনীয় সার ক্রেতাদের কাছে পৌছে দিতে পারলে আপনার বিক্রি দিগুণ বেড়ে যাবে।

ফুল গাছের সুস্থ বীজ তৈরি, চারা তৈরি করা ছাড়াও নিজে নানান জাতের চারা আবিষ্কার করতে পারেন যা আপনাকে সম্মানের পাশাপাশি মুনাফাও এনে দিবে।

ভ্রাম্যমান রেস্টুরেন্ট

ভ্রাম্যমান রেস্টুরেন্ট

বাংলাদেশে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা দিন দিন জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। কিন্তু কেমন হয় আপনার রেস্টুরেন্টটি যদি একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে পারে। এরকম ব্যবসার আইডিয়া নতুন না, অনেক দেশে এমনকি আমাদের দেশের বিভিন্ন বড় শহরগুলোতে প্রচলিত আছে। আপনি একটি মাঝামাঝি সাইজের ট্রাক কিনে সেটাকে কাস্টমাইজ করে একটা রেস্টুরেন্টের কিচেনের শেপ দিয়ে ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্ট তৈরি করে ফেলতে পারেন।

সাথে ক্রেতাদের বসার জন্য প্লাস্টিকের হালকা চেয়ার ও টেবিল রাখতে হবে কিছু যেগুলো কোন ফাকা স্থানে সেট করে একটা খোলামেলা রেস্টুরেন্ট বানিয়ে ফেলতে পারেন।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ফাকা মনোরম পরিবেশে এই ধরনের ব্যবসা বেশ জমে উঠে। ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে প্রাথমিকভাবে বেশ ভালো পরিমাণ বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে আপনি একটা পুরনো সচল মাঝারি সাইজের ট্রাক কিনতে পারেন। মোটামুটি ১০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হতে পারে আপনার এই ব্যবসা শুরু করতে হলে।

হোমমেড ঐতিহ্যবাহী খাবার বিক্রি

একসময় ভারতবর্ষ নানারকম সুস্বাদু খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো। বর্তমানে বিভিন্ন বিদেশি খাবারের মোহে পড়ে আমরা স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারকে প্রায় ভুলেই যেতে বসেছি। কিন্তু এখনো অনেক মানুষ আছে যারা বাঙালী খাবারকে প্রাণভোরে পছন্দ করে। আপনি যদি একজন গৃহিণী হয়ে থাকেন তাহলে বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করে হোম ডেলিভারি দিতে পারেন।

শুধু ঐতিহ্যবাহী খাবারই না, নানারকম স্পাইসি বিদেশি খাবারও তৈরি করতে পারেন। আপনার এলাকায় এমন অফিস অথবা ফ্যাক্টরি খুঁজে বের করুন যেখানে স্টাফরা তাদের দুপুরের খাবার বাড়ি থেকে আনে না বরং বিভিন্ন হোটেলে খায়। আপনি সেসব মানুষের জন্য নিয়মিত বাড়িতে পরিষ্কার পরিবেশে তৈরি খাবার সরবরাহ করতে পারেন।

এমন কিছু মানুষকে নিয়মিত ক্রেতা বানাতে পারলে আপনার মুনাফা বেড়ে যাবে। এছাড়াও অনেকে আছেন যাদের সকালে নাশতা তৈরি করার মতো যথেষ্ট সময় থাকে না। তাদের জন্য ফ্রোজেন খাবার যেমন বিক্রি করতে পারেন। আমাদের দেশে ফ্রোজেন খাবারের চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গৃহিণী মা-বোনদের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হলো হোমমেড খাবার বিক্রি করা।

ট্রাভেল ও ট্যুরিজম গাইড

মানুষ অনেক ভ্রমণ পিপাসু। কিন্তু অনেকেই অনেক জায়গা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে পারে না। সেখানে ঘুরতে গিয়ে থাকার হোটেল, খাবার সহ অন্যান্য কাজে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি ট্রাভেল, ট্যুরিজম গাইড এজেন্সি খুলতে পারেন।

আপনি একা অথবা কয়েকজন মিলে একটা এজেন্সি খুলতে পারেন। ৩/৪ জন মিলে একটা এজেন্সি চালালে বেশ সুবিধা হবে, একই সময়ে একাধিক মানুষকে সেবা দিতে পারবেন। আপনাদের কাজ হবে জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট সম্পর্কে ধারণা নেওয়া, জানা এবং গবেষণা করা।

এরপর ওইসব এলাকার বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টের সাথে যোগাযোগ করে চুক্তি করা যে আপনি তাদের জন্য সেবাগ্রহীতা এনে দিবেন বিনিময়ে কিছু কমিশন নিবেন। আবার একাধিক ব্যক্তিকে যখন কোনো স্থানে ট্যুরে নিয়ে যাবেন তাদের বিভিন্ন গাইড দেয়ার বিনিময়ে সার্ভিস চার্জ আদায় করবেন। দুই ভাবেই আয় করতে পারবেন এই ব্যবসায়ে।

অনলাইনে বিভিন্নভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে, ফেইসবুক গ্রুপে এই বিষয়ে পোস্ট করে সম্ভাব্য গ্রাহক সংগ্রহ করতে পারেন। বর্তমানে এটি একটি সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।

হ্যান্ড ক্র‍্যাফট

হ্যান্ড ক্র‍্যাফট বিক্রি

হাতে তৈরি জিনিসের জন্য বাঙালী জাতির বেশ সুনাম আছে। সেই মধ্যযুগ থেকে আমাদের দেশে ১লা বৈশাখ সহ নানারকম মেলায়, জাতীয় উৎসবের প্রাঙ্গণে হাতে তৈরি জিনিসের কদর অনেক। কিন্তু কালের ধারাবাহিকতায় সেসব নান্দনিক জিনিসপত্র হারাতে বসেছে। এখন কিছু কিছু হাতে তৈরি খেলনা, গহনা, শোপিস পাওয়া গেলেও তাদের দাম চড়া!

আপনি যদি হাতে তৈরি গহনা, শোপিস, খেলনা, ঘর সাঁজানোর জিনিসপত্র ইত্যাদি তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাহলে স্থানীয় বাজার সহ অনলাইনেও ক্রেতা পাবেন অনেক। ইউটিউবে এসব জিনিস তৈরির অহরহ ভিডিও আছে।

সেগুলো দেখে ধারণা নিতে পারবেন, আর সৃষ্টিশীল মানুষ হলে আরও অনেক কিছুই নিজে আবিষ্কার করতে পারবেন। মাটি, সিমেন্ট, সাদা সিমেন্ট, ধাতব, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি মূল উপকরণ ব্যবহার করে এসব তৈজসপত্র তৈরি করা যায়। ফেসবুকে একটা পেইজ খুলে এবং বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা খুঁজে পেতে পারেন।

কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা

সারাবিশ্বে ই-কমার্স একটা বিশাল শিল্পে পরিনত হতে শুরু করেছে। আমাদের দেশেও সেই প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইতোমধ্যে। অনেক মানুষ ছোট-বড় পরিসরে ই-কমার্স ব্যবসায় শুরু করছে। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু যখন থমকে দাঁড়ায়, অনেকের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন অনেক ব্যবসায়ী তার ব্যবসাকে অনলাইনে নিয়ে আসে। এর ফলে লজিস্টিক সাপোর্টের প্রচুর চাহিদা দেখা দেয়।

ভবিষ্যতে আরো অনেক বড় বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দাঁড়াবে। সেখানে প্রয়োজন হবে অনেক কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানির। আর সেই দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হলো কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান।

আপনি যদি প্রয়োজনীয় মূলধন যোগাড় করে একটা ভালো ও উন্নতমানের কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান দাড় করাতে পারেন এবং তা সততার সাথে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন তাহলে এ ব্যবসায়ে সফলতা সুনিশ্চিত বলা যায়। কুরিয়ার ব্যবসায় শুরু করতে হলে প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে পর্যাপ্ত অর্থ, কিছু জনবল এবং উন্নত কুরিয়ার সার্ভিস সফটওয়্যার।

এছাড়াও অনেক লাভজনক ব্যবসায়ের আইডিয়া রয়েছে। আমাদের কাছে উপোরোক্ত ব্যবসাগুলো বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় বলে মনে হলো। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি উদ্যোক্তা ভাই ও বোনদের জন্য বেশ উপকারী হবে।

পরিশেষে

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কী? বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হলো ইউটিউবিং, ব্লগিং, ফ্রিল্যান্সিং, কুরিয়ার, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, হোমমেড খাবার বিক্রি ইত্যাদি। এগুলো বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া।

আশা করি আজকের এই টপিক আপনাদের ভালো লাগেব , আপনাদের ভালো লাগলেই আমাদের সার্থকতা , কোনো মতামত থাকলে অবশ্যই আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Reply