গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া – ১০টি সেরা ব্যবসার আইডিয়া

গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া – ১০টি সেরা ব্যবসার আইডিয়া

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে চাকরির বাজারে টিকে থাকাটা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়েছে। আর যারা শহর থেকে চাকরি না পেয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তারা চাইলে গ্রামেই একটা ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ব্যবসা একটি সম্মানজনক ও একই সাথে লাভজনক পেশা। প্রতিনিয়ত মানুষের সংখ্যা ও চাহিদা বাড়ছে আর সেই সাথে বাড়ছে উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা।

গ্রামের মানুষের কথা মাথায় রেখেই আমরা এই আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। এখানে আমরা ১০ টি গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কথা বলবো। আর এগুলোর বর্তমান ডিমান্ড ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনেক বেশি। ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে, সকলেই আরামপ্রিয় হয়ে উঠছে।

তাই আমরা যে ব্যবসার আইডিয়াগুলো নিয়ে কথা বলেছি সেগুলো গতানুগতিক কোনো ব্যবসা না। এগুলোর প্রতিযোগিতা গ্রামীণ এলাকায় কম, এতে করে আপনি খুব সহজেই এই ব্যবসায়ে সফলতা পেতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় আলোকপাত করা যাক।

গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া

গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া

১০টি লাভজনক গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া

১. গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার বিক্রি
২. সমন্বিত মাছ ও হাঁসের খামার
৩. বিউটি পার্লার
৪. নার্সারি ব্যবসা
৫. পোল্ট্রি উৎপাদন
৬. চা-কফি শপ এর ব্যবসা
৭. নাস্তার দোকান
৮. কোয়েল পাখি পালন
৯. অ্যালোভেরা চাষ
১০. আঁচার ও পিঠা বিক্রি

এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলে মূলত এই ১০টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কথা বলো। কোন ব্যবসায়টা কিভাবে শুরু করে পরিচালনা করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় সেটা সম্পর্কে কথা বলবো নিচের অংশে চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক লাভজনক গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া

আরো পড়ুন: বর্তমান সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া 

১. গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার বিক্রি

দেখুন শহরের মতো গ্রামের মানুষও বেশ আরামপ্রিয় হয়ে উঠছে। আগে বাসা-বাড়িতে লাকড়ির চুলায় রান্না করতো। কিন্তু গ্যাসের চুলার প্রচলন হওয়ার কারণে মানুষ এখন এগুলো ব্যবহার করতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। আর গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার বিক্রি এমন একটা ব্যবসা যেটা কখনো থেমে যাবে না বরং চাহিদা প্রতিদিন বাড়বে।

গ্রামের একটা বাড়িতে কেউ যখন গ্যাসের চুলা ব্যবহার শুরু করে তখন তিনি অনেককেই তার স্বাচ্ছন্দতার কথা শেয়ার করেন। আর কেউ যখন দেখে পাশের বাড়ির ভাবির রান্না করতে এত ঝনঝাট পোহাতে হয় না, ধুয়াতে বাড়ি-ঘর ভরে যায় না তখন তার মধ্যে গ্যাসের চুলা ব্যবহারের ইচ্ছে তৈরি হয়। এভাবে এই ব্যবসাটা একজনের কল্যাণে আরেকজনের কাছে পৌছে যায়।

তাই যদি আপনার এলাকায় এখনো কোনো গ্যাসের চুলার দোকান না থাকে তাহলে আপনিই প্রথম শুরু করে দিন। আর যদি অলরেডি কেউ এই ব্যবসা শুরু করেও দেয়, তাতে ভয় পাবার কিছু নেই। তার পাশাপাশি আপনিও শুরু করতে পারেন। এতে বিভিন্ন কোম্পানি আপনাকে সাহায্য করবে, ডিলারশিপ দিতে চাইবে।

আপনি যদি প্রতিমাসে ৩০০ টি পরিবারে গ্যাসের সিলিন্ডার সাপ্লাই করতে পারেন তাহলে একটা ভালো অঙ্কের মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। প্রতিটি সিলিন্ডারে যদি মুনাফা থাকে ১০০ টাকা তাহলে ৩০০টি সিলিন্ডারে মুনাফা দাঁড়ায় ৩০০*১০০=৩০০০০ টাকা!

এখান থেকে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ বাবদ বাদ দিলে কমপক্ষে মুনাফা থাকবে ২০-২৫ হাজার টাকা। এছাড়াও সিলিন্ডার হোম ডেলিভারির সুযোগ করে দিতে পারেন। সকল গ্রাহককে আপনার প্রতিষ্ঠানের ফোন নাম্বার দিয়ে রাখবেন।

তাদের বাড়ির সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেলে আপনাকে কল করতে পারবে সিলিন্ডারের জন্য। বাসা-বাড়িতে সিলিন্ডার ডেলিভারি করার জন্য আপনি একটা ছোট মোটরসাইকেল কিনে নিতে পারেন।

এজন্য ১৫-২০ হাজার টাকার মধ্যে মোটামুটি চলনসই একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল পেয়ে যাবেন। আর বাড়িতে সিলিন্ডার ডেলিভারির জন্য ২০-৩০ টাকা ডেলিভারি চার্জও নিতে পারেন।

আবার আপনার প্রোফিট মার্জিন যদি ভালো থাকে তাহলে ফ্রিতেও ডেলিভারি দিতে পারেন। সেটা নির্ভর করছে আপনি এই ব্যবসায় থেকে সন্তোষজনক মুনাফা অর্জন করতে পারছেন কিনা তার উপর।

বর্তমানের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বা গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এটি একটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে।

২. সমন্বিত মাছ ও হাঁসের খামার

সমন্বিত উপায়ে মাছ ও হাঁস চাষ একটা ম্ভাবনাময় ব্যবসা। এখানে খরচের পরিমাণ কম হয়ে থাকে। সমন্বিত উপায়ে মাছ ও হাঁস চাষ হলো- একটা খামার তৈরি করে সেখানে একই সাথে হাঁস ও মাছ উৎপাদন করা এবং হাঁসের বর্জ্য মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা।।

এজন্য আপনাকে খামারটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন সবগুলো কাজ খুব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। ১৫-২০ কাঠা জমিতে এই ধরনের খামার গড়ে তোলা যায়। প্রথমে অল্প করে শুরু করুন, আর ধীরে ধীরে পরিধি বাড়তে পারেন।

যদি পুজি কম থাকে তাহলে ঋণ করে প্রথমেই খুব বড় করে খামার ব্যবসায় শুরু করার দরকার নেই। আগে ছোট পরিসরে শুরু করে ব্যবসাটা ভালোভাভাবে বুঝে নিন। এরপর প্রয়োজন বুঝে পরিধি বাড়াতে পারবেন।

এই পদ্ধতিতে হাঁসের ঘর বানানোর সময় বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য পাইপের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে করে সবগুলো বর্জ্য একটা পাইপ লাইন বা একাধিক পাইপ লাইনের মধ্য দিয়ে মাছের পুকুরে গিয়ে পড়বে।

এর ফলে আপনার হাঁসের ঘর পরিষ্কার করার ঝামেলা অনেকটা কমবে এবং মাছ তার প্রয়োজনীয় খাবারের একটা বড় অংশ এই বর্জ্য থেকেই পেয়ে যাবে, যার ফলে মাছের জন্য বাড়তি খাবার কম কেনা লাগবে। আর পুকুরটা হাঁসের ঘরের আশেপাশেই হওয়া চায়।

এই ধরনের পুকুরে যে মাছগুলো চাষ করা যায় সেগুলো হলোঃ পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, মৃগেল, রুই, বোয়াল, শিং, টাকি, মাগুর ইত্যাদি। মাছের খাবারের বড় একটা অংশ যেহেতু বর্জ্য থেকে আসছে সেহেতু খাবার খরচ কিছুটা কমলো এবং মুনাফাও বেশি হবে।

খরচ বলতে একটা পুকুর খনন, হাঁসের ঘর তৈরি, মাছের পোনা ও হাঁসের বাচ্চা ক্রয় এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ মিলে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায় এই ধরনের খামার দাড় করিয়ে ফেলা সম্ভব।

আর খামার করার জন্য যদি উপযুক্ত জমি না থাকে তাহলে অন্যের জমি লীজ নেওয়া যায়। পরিশেষে বলবো, গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এটি একটি সেরা লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।

বিউটি পার্লার

বিউটি পার্লার

৩. বিউটি পার্লার

গ্রামের মেয়েরাও আধুনিক হচ্ছে, তারাও অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে ও খাপ খাইয়ে চলতে চায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজের রূপটাকে কিছুটা বাড়িয়ে নিতে চায়। গ্রামে ভালো কোনো পার্লার না থাকায় অনেক সময় শহরে ছুটতে হয়।

কিন্তু কেমন হয় যদি গ্রামেই একটা নান্দনিক বিউটি পার্লা দিয়ে ফেলা যায়? আইডিয়াটা মোটেও খারাপ না, এই বিউটি পার্লারের ব্যবসার পাশাপাশি আপনি আরেকটা জনপ্রিয় ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন। দুইটা ব্যবসা একটি আরকেটির সাথে সম্পর্কিত।।

নিজে রূপচর্চার কাজ শিখে সরাসরি এই সেবা দিতে পারবেন। এটা থেকেও বেশ ভালো পরিমান মুনাফা অর্জন করা যায়। আপনার কাজের মান যত ভালো হবে কাস্টমারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুন: customer quality service কাস্টমার সার্ভিসের মান বৃদ্ধির উপায়

এছাড়াও বিউটি পার্লার ব্যবসার পাশাপাশি একটা কসমেটিকসের দোকান দেওয়া উত্তম আইডিয়া হবে। কারণ যারা এখানে রূপচর্চা করতে আসেন তাদের বিভিন্ন ধরনের স্কিন ক্রিম, লোশন সহ কসমেটিকসের জিনিসের প্রয়োজন পড়ে।

আর সেই সকল জিনিস যদি আপনার কাছেই তারা পেয়ে যায়, বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন না পড়ে তাহলে ব্যাপারটা বেশ ভালো।

আবার অনেক সময় আপনি এই বিষয়ক কাজে ট্রেইনিংও দিতে পারেন, ট্রেইনিং শেষে যারা ভালো ফলাফল করবে তাদের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানেই কাজের সুযোগ করে দিতে পারেন। সবকিছু মিলিয়ে বিউটি পার্লার গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবেও লাভজনক একটা আইডিয়া।

৪. নার্সারি ব্যবসা

বর্তমান সময়ে নার্সারি স্থাপন নিঃসন্দেহে একটা ভালো ব্যবসার আইডিয়া। কারণ মানুষ আগের তুলনায় এখন অনেক সচেতন হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষনের ব্যাপারে। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরির জন্য এগিয়ে আসছে এবং লাভবানও হচ্ছে।

তাই ধীরে ধীরে কিন্তু গাছের চারার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামের একটা ভালো পরিবেশে খুব সহজেই অল্প পুঁজি নিয়ে নার্সারি ব্যবসায় শুরু করা যায়। এজন্য আপনাকে গাছের চারা উৎপাদন, রোপন, কলম তৈরি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ভালোমতো স্টাডি বা জানতে করতে হবে।

ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে এমন একটি জায়গায় ৫-১০ কাঠা জমি নিয়ে নার্সারির গাছ রাখার জায়গা করবেন এবং বিঘা দুয়েক জমি মাঠের পাশে নিবেন যেখানে মূলত চারাগুলো উৎপাদন করা হবে।

মূল জায়গা থেকে চারা উৎপাদন হয়ে গেলে সেগুলো বিক্রির জন্য নার্সারিতে এনে সারিবদ্ধভাবে রেখে দিবেন। ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুয়ায়ী সেখান থেকে গাছ নিতে পারবে।

কেউ যদি অনেক বেশি পরিমাণ গাছের চারা নিতে চায় তাহলে তাকে মূল জায়গা থেকে চারা সরবারাহ করা যেতে পারে। এখনকার সময়ে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফুল ও ফলের গাছের চাহিদা বাড়ছে।

অনেকেই বাসার আঙ্গিনায় ও ছাদে বাগান তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তাই চেষ্টা করবেন চাহিদা বুঝে বাহারি ফুল ও ফলের গাছ রাখতে।

৫. পোল্ট্রি উৎপাদন

গ্রামাঞ্চলের মানুষ আমিষের প্রয়োজন মেটাতে গরু বা খাসির মাংসের পরিবর্তে মুরগির মাংসই বেশি খেয়ে থাকে। আপনি যদি দেশি মুরগি পালন করতে চান তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন, লিংকটি আমি কমেন্ট সেকশনে দিয়ে দেবো।

ঐ আর্টিকেলে আমরা দেশি মুরগি পালনের বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা উল্লেখ করেছি। আর পোল্ট্রি মুরগি পালনও একটা ভালো লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া। গ্রামে এই মুরগির প্রচুর চাহিদা থাকার পাশাপাশি শহুরে অঞ্চলেও এর চাহিদা অনেক বেশি।

ছোট খামার বানিয়ে পোলট্রি মুরগি পালন শুরু করা যায় আবার বাড়ির আঙ্গিনায় কাঠের ঘর তৈরি করেও এই মুরগি পালন করা যায়।

পোল্ট্রি মুরগির প্রতিটি বাচ্চা ২০-৩০ টাকা দরে কিনতে পাওয়া যায়। ১০০ টি বাচ্চা কিনতে আপনার খরচ হবে ২০০*২৫=৫০০০ টাকা। আর ঘর তৈরি করতে ৬-৮ হাজার টাকা খচর হতে পারে।

আর খাবার সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মোট ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। এই ১৫ হাজার টাকা দিয়ে আপনি সহজেই ছোট পরিসরে একটি মুরগির খামার তৈরি করে ফেলতে পারেন।

আবার একটা ইনকিউবেটর কিনে পোল্ট্রি মুরগির ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়েও খামার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতে চাইলে এটা অন্যতম সেরা ব্যবসার আইডিয়া হবে পারে।

৬. চা-কফি শপ এর ব্যবসা

চা বাঙালির চিরচেনা হলেও কফির প্রচলন আমাদের দেশে কয়েক দশক ধরে। এর মধ্যে দেশে নানা ধরনের চা-কফি তৈরি হতে শুরু করেছে। এগুলো মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

গ্রামের মানুষ যেহেতু দিন দিন সৌখিন হচ্ছে তাই সেখানে প্রচলিত চা’র বাইরে নানান স্বাদের চা বা কফি বিক্রি একটা ভালো লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে। ইনস্ট্যান্ট চা, কফি সহ ভিন্ন স্বাদের কফির দোকান দেওয়া যেতে পারে।

তরুণরা বেশ ভালো রকম পছন্দ করে এই চা গুলো। তাই একটা খোলামেলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে চা-কফির দোকানের জন্য। এমন জায়গা খুঁজুন যেখানে মানুষের আনাগোনা আছে এবং পরিবেশটাও যথেষ্ট নিরিবিলি।

আপনার বানানো চা ও কফি যদি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে, স্বাদে ও মানে অনন্য হয় তাহলে দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ এর স্বাদ নিতে আসবে। আর এই ধরনের ব্যবসা শুরু করতে বেশি পুজির প্রয়োজন হয় না।

৫০-৬০ হাজার টাকা থাকলেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়। তবে লেগে থাকতে হবে। কাস্টমারকে সুন্দরভাবে পরিবেশন করতে হবে, সাথে কয়েকটি খবরের কাগজ রাখলেও ভালো হয়।

৭. নাস্তার দোকান

বিকালে হালকা নাশতা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে খাদ্য বিলাসী বাঙালীর মধ্যে। শহরের প্রতিটি জায়গায় এই ধরনের নাশতার দোকান দেখতে পাওয়া গেলেও গ্রামে এমন দোকান নেই বললেই চলে। তাই যদি আপনার এলাকায় আপনি প্রথম শুরু করেন তাহলে এই ব্যবসায়ে আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না।

ঝালমুড়ি, ফুসকা, চটপটি, হালিম, চপ, পেয়াজু, ভুড়ি ভাজি সহ অনেক সুস্বাদু খাবারের সমাহার ঘটাতে পারেন। মানুষ এই রকম মুখরোচক খাবার বেশ ভালোই পছন্দ করে। এর বেশিরভাগ ক্রেতা অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা। তাই দোকানে বসার জায়গা রাখুন এবং যেন কেউ চাইলে বাড়িতেও নিয়ে যেতে পারে সেজন্য পার্সেল করার ব্যবস্থাও করতে হবে।

কারিগর রাখা যেতে পারে যদি না আপনি এগুলো তৈরিতে দক্ষ হয়ে থাকেন। বাসন-বাটি সহ সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর এই ধরনের খাবারের চাহিদা সাধারণত বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি থাকে। তাই আপনি চাইলে দিনের অন্য সময়ে অন্যান্য কাজও করতে পারবেন। গ্রামের জন্য বর্তমানে এটা একটা লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।

৮. কোয়েল পাখি পালন

কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম উভয়ই পুষ্টিকর খাবার। অসুস্থ্য, রোগীরদেকে ডাক্তাররা কোয়েল পাখি খেতে পরামর্শ দেন। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষের চাহিদা পুরণ হওয়ার পাশাপাশি লৌহ ও খনিজ পদার্থের অভাব পূরণ হয় শরীর থেকে।

আপনি যদি গ্রামে কোয়েল পাখির ফার্ম গড়ে তুলতে চান তাহলে সেটা একটা ভালো বিনিয়োগ ও ভালো সিদ্ধান্ত হবে। গ্রামে ও শহরের উভয় এলাকায় কোয়েল পাখির ডিম ও মাংসের সমান চাহিদা রয়েছে।

খুব ছোট করে বাড়িতেও এই খামার বানানো যায়। তবে যদি বেশি লাভ করতে চান তাহলে বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে খামার বানানো ভালো।।

একটা কোয়েল পাখি ডিম পাড়ার জন্য প্রস্তুত হতে প্রায় ৭-৮ সপ্তাহ মতো সময় লাগে। আর কোয়েল পাখি সাধারনত সারাবছরই ডিম দেয়। গ্রামের দিকে প্রতিটি ডিম ২-৩ টাকায় বিক্রি হলেও শহরে এর দাম আরো বেশি।

কোয়েল পাখির জন্য বিশাল কোনো খাদ্যের ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না। তাই বলা যায় খরচও কম এই ব্যবসায়ে। আপনার যদি ২০০ কোয়েল পাখি থাকে আর সবগুলো পাখি যদি মাসে ২৫টা করে ডিম দেয় তাহলে মাসিক ডিমের পরিমাণ হয় ২৫*২০০=৫০০০ পিস।

আর ৫০০০ পিস কোয়েল পাখির ডিমের বাজার মূল্য ৩*৫০০০=১৫০০০ টাকা। দুইশো পিস কোয়েল পাখি পালন করতে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়না। এখানে আপনার মাসিক খরচ ৩-৪ হাজার মতো হবে। আর বাকি যে অর্থ থাকছে তার পুরোটাই আপনার মুনাফা।

আমার মতে যারা বেকার বসে আছেন। কাজের সন্ধান পাচ্ছেন না তারা এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এখানে ঝুকি কম হলেও মুনাফার পরিমান কিন্তু বেশিই পাবেন। এটা একটা অন্যতম লাভজন গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া।

৯. অ্যালোভেরা চাষ

অ্যালোভেরা একটি ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন গাছ। এটা একই সাথে ত্বক, স্বাস্থ্য ও চুলের জন্য বেশ উপকারী ও কার্যকরী ঔষুধ। বিভিন্ন শরবতের সাথে অ্যালোভেরার রসের মিশ্রণ পাওয়া যায়।

অ্যালোভেরার চাহিদাও প্রচুর থাকলেও এর উৎপাদন তেমন একটা হয় না বললেই চলে, যার ফলে চড়া দামে বাজার থেকে অ্যালোভেরা কিনতে হয়। আপনি যদি গ্রামে অবস্থান করে থাকেন তাহলে অ্যালোভেরা চাষ আপনার জন্য একটা ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।

যেকোনো সময় অ্যালোভেরা চাষ করা যায় কিন্তু বর্ষার শুরুতে এর চাষ ভালো হয়। সাধারন বাণিজ্যিকভাবে এটা বেডিং পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। এজন্য জৈব সার সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ মাটিতে মিশিয়ে সারিবদ্ধ করে বেড বানাতে হবে।

আর অ্যালোভেরার চারা তৈরি হয় পাতা থেকে, সেহেতু গাছের পাতা সংগ্রহ করতে হবে। অবশ্যই রোগমুক্ত ও সজীব পাতা সংগ্রহ করবেন। অ্যালোভেরা গাছ রোগাক্রান্ত কম হয়, শুধু জাবপোকা ও গোড়া পচা রোগের আক্রমন দেখা যায়।

তবে উপযুক্ত ঔষুধ ব্যবহার করলে এটা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ৫-৭ হাজার টাকা দিয়ে অ্যালোভেরা চাষ করে এবং নিয়মিত পরিচর্যা করলে মুনাফা পেতে বেশি দিন সময় লাগে না।

চাইলে নিজে বাজারের কোনো স্থানে বসে বিক্রি করতে পারেন এবং এর পাশাপাশি বিভিন্ন সুপারশপ, কসমেটিক্সের দোকানে ও শরবতের পাইকারিভাবে নিয়মিত বিক্রি করতে পারেন। এর জন্য ক্রেতার অভাব হবে না। মহিলারা অ্যালোভেরার বড় ক্রেতা, তারা ত্বকের পরিচর্যা ও চুলের জন্য অ্যালোভেরা ব্যবহার করে থাকে। এমনি স্থানীয়ভাবে অনলাইনেও অ্যালোভেরা বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।

১০. আঁচার ও পিঠা বিক্রি

এটা মূলত মহিলাদের কাজ হলেও অনেক পুরষ, তরুণ এই ধরনের পেশায় দক্ষতা অর্জন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। যারা গৃহিণী আছেন, তারা চাইলে এই ব্যবসায় শুরু করতে পারেন। শহুরে এলাকায় এই ধরনের পণ্যের চাহিদা বেশি।

কারণ, সেখানে অর্গানিক ফল-মূল না পাওয়ার কারনে অনেক সময় আঁচার বানানো হয়ে ওঠে না, কিন্তু অনেকের এই ধরনের খাবারের বেশ ভক্ত হওয়ায় গ্রাম থেকেও কিনে আনেন। বিভিন্ন মৌসুমি পিঠার প্রচলন আছে আমাদের দেশে, আর এগুলো গ্রামীণ পরিবেশে মাটির চুলায় তৈরি হলে তার স্বাদই অন্যরকম হয়।

অনেক পিঠা ও নাড়ু আছে যেগুলো দীর্ঘদিন রেখে খাওয়া যায়। এই ধরনের পিঠা, নাড়ু ও আঁচার অনলাইনে কুরিয়ার মাধ্যমে বিক্রি করা সম্ভব। তাই যদি আপনি একজন গৃহিণী হয়ে থাকেন এবং মনের মধ্যে নিজে কিছু একটা করার বাসনা থাকে তাহলে এই ব্যবসা আপনার জন্য উত্তম হবে।

আরো পড়ুন: সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার

এখানে পুঁজি বলতে ১০০০ টাকা হলেও চলে। চুলা, বাসন ইত্যাদি তো সবার বাড়িতেই থাকে, তাই শুধু আঁচার ও পিঠা বানানোর উপকরনগুলো কিনলেই চলবে। গ্রামের জন্য এটা একটা ভালো ও উত্তম ব্যবসার আইডিয়া।

সর্বশেষ কথা

উপরে আমরা গ্রামের জন্য ১০টি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কথা বলেছি। এখানে প্রতিটি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলার সুযোগ হয়নি, কারন সবগুলো বিষয়ে বিস্তারিত লিখলে আর্টিকেলটা অনেক বড় হয়ে যেত।

এতে করে সবার পড়ার ধৈর্য্য থাকতো না। তবে আপনারা যদি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে সঠিক ও বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা চান তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদের কমেন্ট পেলে উক্ত বিষয়গুলোতে বিস্তারিত লিখে আর্টিকেল পাবলিশ করবো।।

উপরে যে ব্যবসার আইডিয়াগুলো নিয়ে কথা বলেছি, তার মধ্যে সবগুলোই চাহিদাপূর্ণ ও ভালো। তাই পুঁজি, সুযোগ-সুবিধা বুঝে যেকোনটি শুরু করতে পারেন।

One Response

  1. Admin November 8, 2021
  2. Anonymous May 9, 2022
  3. Anonymous October 22, 2022

Leave a Reply