রসুনের উপকারিতা ও বিস্ময়কর দিক গুলো জেনে নিন

রসুনের উপকারিতা ও বিস্ময়কর দিক গুলো জেনে নিন

রসুন একটি মসলা জাতীয় উপাদান। যা তরকারির স্বাদ কে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে। খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ সাল থেকে রসুনের সন্ধান পাওয়া যায়। আদি যুগ থেকেই রসুন মসলা উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার পাশিপাশি চিকিৎসাবিদ্যায় রসুনের ব্যবহার ব্যাপক। আজ রসুনের উপকারিতা rosuner upokarita সমন্ধে বলার চেষ্টা করবো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে

সেই ব্যাবিলনীয় যুগ থেকে চলে আসছে রসুনের ব্যবহার চিকিৎসাবিদ্যায়। রসুন হচ্ছে ঝাঁঝালো মসলা উপক্রম। রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Allium Sativum. রসুনের ইংরেজি নাম Garlic. প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত চিকিৎসক ও মেডিসিন এর জনক হিপোক্রেটিস রসুনকে ওষধু হিসেব ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা

রসুনে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীরের ৬১ টির বেশি রোগের নিরাময় হিসাবে কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ করার আশ্চর্যজনক ক্ষমতা রয়েছে রসুনে।রসুনকে ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক বা সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে। শরীর নানা রোগের কারন হচ্ছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া।

আর এ সব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কারনে আমরা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হই যা থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমরা নানা প্রকার ওষুধ সেবন করি যারফলে এক রোগ ভালো করতে আরেক রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে রসুনে রয়েছে মহা ওষুধি গুন। শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করে ।

রসুনের উপকারিতা

রসুনের উপকারিতা

রসুনের পুষ্টি উপাদান

রসুনে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যেমনঃ ভিটামিন বি1, বি2 , বি4, বি6, বি9, মিনারেল, অ্যালাসিন, ম্যাগনিট, কর্পার, আয়রন, ক্যলসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন সি , সিলিনিয়াম। এসকল পুষ্টি উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

রসুনের উপকারিতা  benefits of garlic ও নানা ধরনের পুষ্টিগুন

১। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল কমায় যা হার্টের সমস্যা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
২। রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৩।ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে রসুন। নিয়মিত রসুন খেলে পাকস্থলী কোলেস্টেরল কমিয়ে ক্যান্সারের আশঙ্কা কে কমায়।

৪। রক্ত পরিশোধনের কাজ করে রসুন।
৫। রসুন শরীরের টক্সিন দূর করে।
৬। অ্যাকনের বা ব্রন সমস্যা দূর করে রসুন।

৭। ঠান্ডা জনিত সমস্যার জন্য রসুনের ভূমিকা অনেক।
৮। ফ্লু প্রতিরোধ করে।
৯। রসুনে রয়েছে ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধে ক্ষমতা।

১০। একই সঙ্গে এন্টি প্যারাসাইটিক ক্ষমতা আছে রসুনে।
১১। আ্যান্টি এজেন্ট প্রোপার্টি আছে যা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
১২। ছত্রাক জনিত সমস্যা রসুন ভালো কাজ করে।

১৩। রিং ওয়ার্মের মতো সংক্রমণ রুখতে সাহায্য করে।
১৪। রসুন যুক্ত তেল চুল পড়া সমস্যা কমায়।
১৫। কাঁটা ফুটে যাওয়া জায়গার ক্ষত সাড়াতে দ্রুত কাজ করে।

১৬। ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
১৭। আথ্রাইটিস বা বাতরেগ নিয়ন্ত্রণ কাজ করে অনেক অনেক বেশি।
১৮। যৌন সমস্যার জন্য অনেক ভূমিকা রাখে কাঁচা রসুন।
এতক্ষণ আমরা জানলাম রসুনের উপকারিতা rosuner upokarita ও নানা ধরনের পুষ্টিগুন সমন্ধে এবার আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

রসুন খাওয়ার নিয়ম

রসুন খাওয়ার নিয়ম

রসুন খাওয়ার নিয়ম

রসুন একটি ঝাঁঝালো মসলা উপাধান। আগুনের উত্তাপে রান্না করার সময় অনেক মসলায় সাথে ও তেল যুক্ত থাকার কারণে রসুনের এর পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। তাই রসুন খাওয়ার সঠিক উপায় হচ্ছে কাঁচা চিবিয়ে বা থেতলে খাওয়া। কাঁচা রসুনের রয়েছে আল্যাসিং। যখন কাঁচা রসুন বেটে বা থেতলে খাওয়া হয় তখন অ্যালাসিং লালারসের সাথে বিক্রিয়া বা মেটাবলাইস হয়ে ডায়ালাল ডাই সালফাই এবং ডায়ালাল টাই সালফাই হয়ে যায় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

তাই রান্নার চেয়ে কাঁচা রসুন নিয়মিত পরিমান মতো খেতে পারলে ভালো । কাঁচা রসুন খেলে কারো কারো গ্যাসের সমস্যা হয়। তবে অভ্যাস হলে সমস্যা গুলো সমাধান হয়ে যায় এক সময়। সকালে খালি পেটে ১ কোয়া বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় খাওয়ার অভ্যাস করলে উপকার পাবেন। কাঁচা রসুন একেবারেই না খেতে পারলে মধুর সাথে মিক্স করে খেতে পারেন।

কাঁচা রসুনের উপকারিতা

কাঁচা রসুন শরীরের জন্য খুব উপকারি । তবে অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না। তাই নিয়ম করে এককোয়ার রসুন হলে সেটার অর্ধেক আর বহু কোয়া বিশিষ্ট হলে সেখান থেকে ১/ ২ কোয়া নিয়মিত খাওয়া ভালো। নিয়মিত কাঁচা রসুন সেবন করা অনেক জরুরি। নিয়মিত কাঁচা রসুন শরীরের কোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রসুনের উপকারিতা  benefits of garlic বুঝার জন্য নিয়মিত রসুন খেতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

ওজন কমাতে রসুনের উপকারিতা

রান্নায় অনেক প্রকার মসলার সাথে রসুন ব্যবহার করলেও রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি পায় ঠিকিই কিন্তু এর পুষ্টি গুনাগুন থাকেনা। অতিরিক্ত তেল চর্বি যুক্ত খাবার খাওয়ার কারনে দিন দিন আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। আর বর্তমানে স্থূলতা একটি বড় সমস্যা। স্থূলতা কমানোর জন্য কাঁচা রসুনের অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে স্থূলতা ত্বরান্বিত করে।

রসুন অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে যা গার্ডস ব্যাকটিরিয়াকে ধ্বংস করে ডাইজেশন পাওয়ার বাড়ায়। তার সাথে মোটাবলিজমটা বাড়িয়ে প্রেসার কে কন্টোলে রাখে। তাই নিয়মিত ওজন কমানোর জন্য কাঁচা রসুন খেতে হবে। তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ওজন সবসময় কন্টোলে রাখা যাবে এবং সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবো।

ত্বকে রসুনের উপকারিতা

রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রূপচর্চাতেও রসুনের ভূমিকা অপরিসীম। প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় ব্যবহার হযে আসছে , ত্বকের সবচেয়ে  ক্ষতিকর দিক হচ্ছে ব্রণ। ব্রণ বা অ্যাকনিক ত্বকের অনেক ক্ষতি করে থাকে। ত্বকের এই সমস্যা দূর করার জন্য কাঁচা রসুনের রস অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে।

রসুনের রস নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকে নিয়ে আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ব্রণ সমস্যায় নিয়মিত কাঁচা রসুনের রস সংগ্রহ করে তুলোর সাহায্যে রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করে ঘুমাতে হবে। পরের দিন সকালে ভালোভাবে মুখ ওয়াস করতে হবে। তারপর সহনশীল ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। যতদিন ব্রণ সমস্যা না যায় প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা রসুনের রস ব্যবহার করতে হবে।

রসুনের রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান যা ব্রণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া গুলোকে কে দুরে রাখতে সাহায্য করে। রসুনে থাকা ভিটামিন b6 , ভিটামিন সি, সিলিয়াম, কপার ও জিংক ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের বিবর্ণ ভাব দূর করে, ত্বক কে আরো প্রানবন্ত ও তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাহলে আমরা জানতে পারলাম যে ত্বকের জন্য রসুনের উপকারিতা কতটুকু। তবে যাঁদের ত্বকে এলার্জি সমস্যা আছে তাদের কাঁচা রসুনের রস ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে।

রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা

রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা

এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ,হাইপ্রেসার থাকলে সকালে ১ বা ২ কোয়া কাঁচা রসুন খেলে প্রেসার কন্টোলে থাকে। তাছাড়া কাঁচা রসুন সেবনে আমাদের হার্ট ভালো থাকে,ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত কাঁচা রসুন সেবনে নষ্ট – ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল উৎপাদন করতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পারন করে পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে।

রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও হার্টের জন্য রসুন কতটা জরুরি

কাঁচা রসুনে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি কমায়। রসুনের প্রোটেক্টিভ উপাদান হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। রসুনে এলিসিন নামের যে উপাদান আছে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। কাঁচা রসুন সাথে কাঁচা আদা, লেবুর রস, ও আপ্যাল সিডার মিক্স করে একটা মিশ্রণ করে মাসের ৭ দিন নিয়মিত ব্যবহার করলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ব্লকের আশংকা অনেক কমে যায়।

এই মিশ্রণ তৈরি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে এতে কোন প্রকার পানি ব্যবহার করা যাবে না। সব গুলো উপদান ১ কাপ করে পিওর রস বের করতে হবে পানি ছাড়া তারপর হালকা আঁচে ঝাল দিয়ে ৩ ভাগের ১ ভাগ পরিমান জ্বাল দিয়ে শুকাতে হবে। তারপর ঠান্ডা করে কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করে ৭ দিন খেতে হবে সকালে ও রাতে ১ চামচ করে। এই মিশ্রনের টি কোলেস্টেরল কমায়ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

রসুন ও মধুর উপকারিতা

মধু হচ্ছে আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত। কোরআনে বলেছেন “মধুতে শেফা রয়েছে” মধু খুব উপকারি খাবার। মধু ও রসুন কে সুপার ফুড বলা হয়। রসুনের সাথে মধু সেবন করলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত মধু ও রসুন সেবন করলে পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধি পায় যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। যৌবন শক্তিকে ধরে রাখতে নিয়মিত রসুন খাওয়া উচিৎ।

প্রতিদিন সকালে ১ বা ২ কোয়া কাঁচা রসুন সাথে ২ চামচ মধু সাথে সামান্য লেবুর রস দিয়ে সেবন করতে হবে নিয়মিত যা যৌবন কে ধরে রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিনের ঝামেলা এড়াতে রসুন ও মধুর মিশ্রণ একদিন করে অনেক দিন খেতে পারেন।

মধু ও রসুনের মিশ্রণ টি করতে হাফ কেজি মধুর সাথে পরিমান মতো রসুন কোয়া খোসা ছাড়িয়া কাঁচের বয়ামে রাখতে হবে। সেই মিশ্রন প্রতিদিন সকালে ও রাতে পরিমান মতো নিয়মিত সেবন করতে হবে।

রসুনের তেলের উপকারিতা

রসুনের তেলের উপকারিতা

রসুনের তেলের উপকারিতা

রসুনের পুষ্টি উপাদান চুলের জন্য অনেক জরুরি। রসুনে রয়েছে ভিটামিন বি6, সালফার, ভিটামিন – সি, জিঙ্ক আরো আছে নানা পুষ্টি উপাদান। রসুনের সাথে সরিষার তেল মিক্সড করে মাথা স্কালপ ব্যবহার করে হালকা মেসেজ করলে চুল পড়া রোধ হয়। চুলের গোড়া শক্ত করে। তাছাড়া যারা কাঁচা রসুন খেতে পারেন না তারা রসুন হালকা জাল করে সরিষা তেল ও হালকা তেতুল টক মিক্স করে আচার বানিয়ে নিয়মিত খেতে পারেন।

কালোজিরা ও রসুনের উপকারিতা

কালোজিরা হচ্ছে সকল রোগের মহা ঔষধ। কোরআনে আছে ” মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ হচ্ছে কালোজিরা” কালো জিরা হচ্ছে একটি মহা সুপার ফুড। রসুন হচ্ছে পুষ্টি উপাদান ভরপুর একটি খাবার। কালোজিরা ও কাঁচা রসুন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কালোজিরা ও রসুন নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, ঠান্ডা -জ্বর, ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়, চুল পড়া রোধ করে। কালোজিরা ও মধু যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তার পাশাপাশি কালোজিরা ও মধু হার্টের সমস্যা সমাধান করে থাকে। নিয়মিত কালোজিরা ও মধু সেবন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

রসুনের ভর্তা উপকারিতা

রসুনকে মর্ত্যের অমৃত বলা হয়। যারা কাঁচা রসুন খেতে পারেন না তারা কাঁচা রসুন হালকা ভেজে তার সাথে কাঁচা মরিচ, কাঁচা পিঁয়াজ, ধনেপাতা ও সরিষার তেল মিক্সড করে মজাদার ভর্তা করে নিয়মিত খাবার তালিকা রাখতে পারেন।

তাহলে আজ আমরা রসুনের উপকারিতা সমন্ধে বলার চেষ্টা করলাম আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

Leave a Reply