মেথির উপকারিতা জানলে অবাক হবেন

মেথির উপকারিতা জানলে অবাক হবেন

মেথি বা Fenugreek কম বেশি সবাই আমরা চিনি। মেথি ভেষজ জাতীয় একধরণের গাছ যা এশিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপ এর দেশগুলোতে পাওয়া যায়। মেথির বীজগুলো দেখতে ছোট ছোট দানার মতো এবং সোনালি রঙের হয়ে থাকে, মেথিতে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং মিনারেল রয়েছে যা মানব দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

খাবারে ভিন্নমত্রার স্বাদ আনতে জুরি নেই মেথির,  রান্নার সময় আমাদের সবার হাতের কাছেই থাকে মেথি, রান্নার সময় অনেক খাবারে সাথে আমরা পাঁচফোড়ন দিয়ে থাকি সেই পাঁচফোড়নের সাথেও মেথি থাকে, আর মেথির স্বাদ জদিও একটু তেতো ধরনের হয়ে থাকে কিন্তু মেথিতে রয়েছে অনেক পুষ্টি গুনাগুন আর এই পুষ্টি গুনাগুন এবং মেথির উপকারিতা  নিয়ে আজকের আমাদের আলোচনা, আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

মেথি খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন সকালে খাবার পূর্বে অল্প কিছু পরিমাণ মেথি চিবিয়ে খেয়ে পানি খেতে পারেন। অথবা রাতে এক চা চামচ পরিমাণ মেথি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকালে খালি পেটে পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু শেষ হয়। বিশেষত যাদের কৃমি আছে তাদের ক্ষেত্রে খুবই কাযক‍রি এই মেথি কৃমিকে ধ্বংস করে।যাদের রক্তের চিনির মাত্রা বেশি নিয়মিত মেথি খেলে চিনির মাত্রা কমে যায়।

রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টরেল বা চর্বির মাত্রা কমায় মেথি । ডায়াবেটিসে ও হৃদ্‌রোগের মহা কার্যকরী ওষুধ এই মেথি, তাই বিশেষজ্ঞরা খাবারে সাথে মেথি রাখার পরামর্শ দেন। আশা করি মেথি খাওয়ার নিয়ম সমন্ধে একটু হলেও ধারণা পেয়েছেন।

মেথির উপকারিতা

মেথির উপকারিতা

ওজন কমাতে মেথির উপকারিতা

মেথিতে আছে প্রকৃতিক গুণ যা ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী। যারা ওজন কমাতে চান তারা মেথির চা খেতে পারেন ওজন বেড়ে গেলে নাক ডাকা বেড়ে যায়।পাশের লোক ঘুমাতে অস্বস্তি বোধ করে ,আর তাই প্রতিদিন দুই বেলা মেথির চা পান করুন এতে ওজন ও কমবে নাক ডাকা বন্ধ হবে।

মেথির চা শুধু ওজন কমাতে নয় ডায়াবেটিসের সমস্যাও  নিয়ন্ত্রণে রাখে এ ছাড়া হজমের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের রাখার ক্ষেত্রেও এটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

এক চা চামচ মেথি বেটে নিন। একটি পাত্রে এক গ্লাস পানি ফুটিয়ে তার সঙ্গে মেথি বাটা মিশিয়ে দিন। এর সঙ্গে ২/৩ টুকরো আদা কুচি ৪ টি  দারুচিনি  দিয়ে ঢেকে একসঙ্গে সব মশলা ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। প্রতিদিন খালি পেটে এই পনি পান পারলে শরীরের জন্য খুবই উপকার।

মেথির পুষ্টিগুণ

এক চামচ মেথির বীজে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে,,
* ফাইবারঃ ৩ গ্রাম
* ক্যালরিঃ ৩৫ ক্যালরি
* লোহাঃ ২০ শতাংশ
* প্রোটিনঃ ৩ গ্রাম
* ম্যাগনেসিয়ামঃ ৫ শতাংশ
* ম্যাঙ্গানিজঃ ৭ শতাংশ
* ফ্যাটঃ ১ গ্রাম

মেথির গুনাগুন

সর্দি কাশিতে মেথির উপকারিতা

শীত আসা শুরু বা শীতের শেষে অথবা গ‍রমে গেমে সর্দিকাশি লেগে যায় । নিয়মিত মেথি খেলে সর্দিকাশি হবার সম্ভবনা খুবই কম থাকে। মধু ও লেবুর সঙ্গে এক চা-চামচ মেথি মিশিয়ে খেলে জ্বর সেরে যায়। মিউকিল্যাগ নামের একটি উপাদান মেথিতে থাকায় গলাব্যথা সারাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে মেথি সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলা ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়।

চুল পড়া থেকে মুক্তি দেয় মেথি

চুল পড়া পরা নিয়ে আম‍রা খুবই চিন্তিত থাকি। ভাবি কোনটা করলে চুল পরা থেকে মুক্তি পাব, মেথি সেদ্ধ করে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন তার সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় মাখুন চুল ঝরে পড়া কমে যাবে। এছাড়াও কাঁচা মেথি নারকেল তেলে ভিজিয়ে রেখে ব্যবহার করতে পারেন।

মেথি, নারকেল তেল ও কালোজিরা এই মিশ্রণটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া কমিয়ে দেয় । মেথি এবং কালোজিরা দুপুরের কড়া রোদে শুকিয়ে একসঙ্গে গুড়ো করে নিন। এরপর গুড়ো করা কালোজিরা ও মেথির সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন।

মিশ্রণটি কাচের বোতলে রাখার জন্য ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এই মিশ্রণটি অন্তত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ভালো থাকবে। এই তেল সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যাবহার করতে পারেন। সঠিক ভাবে উপকার পাওার জন্য কয়েকমাস নিয়মিত ব্যাবহার করুন

মেথি খাওয়ার নিয়ম

মেথি খাওয়ার নিয়ম

গ্যাস্ট্রিক সমাধানে মেথির উপকারিতা

পেট জ্বালা বা হজমে সমস্যা আছে যাদের তাঁরা মেথি খেতে পারেন নিয়মিত, মেথিতে রয়েছে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান দূর করে শরিরকে সুস্থ রাখে। মেথি ভিজিয়ে পানি খেলেও হজম শক্তি বেড়ে গিয়ে হজমের সমস্যা দূর করে । এমনকি আলসার সারাতেও অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে । তাই বলা যেতে পারে মেথির উপকারিতা অনেক।

মাতৃদুগ্ধ ও রক্তস্বল্পতায় মেথি

আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় মেথি রক্তস্বল্পতা ও অ্যানিমিয়া রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও মেথি মাতৃদুগ্ধ  বাড়াতে ঔষধি গুনের কাজ করে। এজন্য মায়েরা খাবারের পাশাপাশি মেথি খেতে পারেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধে মেথি

ক্যান্সার প্রতিরোধে মেথির ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর মেথি নারীদের শরীরের হরমোন ঠিক রাখে ।
শুধু মহিলাদের নয় পুরুষদের ক্ষেত্রেও অনেক কার্যকরী এই মেথি পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে কাজ করে।

কিডনি সুস্থ রাখতে মেথি

কিডনি পরিষ্কার ও মূত্রথলি সুস্থ রাখতে মেথির চা পান করুন। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনাও কমায় এই মেথি চা।

মেথি চা বানানোর নিয়ম

এক চা-চামচ মেথি গুঁড়ো নিন। এক কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে মেথির গুঁড়ো ভাল ভাবে মিশিয়ে দিন। সাথে এক চা-চামচ মধুও মেশানো যাবে এতে ফ্লেভার ভাল আসবে টেস্ট বারবে উপকরণ গুল দিয়ে দুই তিন মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ছেঁকে নিয়ে গরমাগরম খেয়ে নিন। অথবা মেথির দানা পানি দিয়া ১০মিনিট কম তাপে ফুঁটিয়েও খেতে পারেন এতেও উপকার পাবেন।

মেথি পাতার উপকারিতা বা মেথি শাকের উপকারিতা

মেথির উপকারিতা অনেক সেই সাথে মেথি শাকেরও অনেক উপকার আছে  আমরা সারা বছর কম বেশি কিছু না কিছু শাক খেয়ে থাকি  তবে শীতের মৌসুমে বেশি খাই সবুজ শাক সবজি, এর মধ্যে মেথি শাক রয়েছে। বিশেষ উপকারি এই শাক স্বাস্থ্যের অনেক উপকার রয়েছে। মেথি খাওয়া যেমন উপকার তেমনি মেথি শাক খাওয়াও উপকার।

সাধারণত শীতের মৌসুমে বাজারে এই শাক বেশি পাওয়া জায়। বাজারে গেলে আগেই হাতে তুলে নেই মেথি শাক, কারন এই শাকের ভিটামিনের কথা চিন্তা করে নিয়া আসা হয়। তাহলে আসুন জেনে নিই মেথি পাতার উপকারিতা।

ওজন কমাতে মেথির উপকারিতা

মেথি শাকের গুণাগুণ

ওজন কমাতে মেথি শাক ভালো কাজ করে , প্রচুর ফাইবার আছে এই মেথি শাকে।  আর প্রচুর ফাইবার থাকায় দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে মেথি শাক । তাই খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। ফলে ওজনও কমে জায়। রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়ার কারণে নানা সমস্যা দেখা যায়। এই শাক খুব সহজেই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

শুধু কোলেস্টেরলই  নয়, রক্তে চিনি বা সুগার এর  মাত্রাও ঠিক রাখে চিনি বারতে দেয় না এই মেথি শাক। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা এই মেথি শাক খেলে অনেক উপকার পাবেন। হজমশক্তি বাড়ায় মেথি শাক। নিয়মিত মেথি শাক খেলে পেট পরিষ্কার হয় এবং খিদে বাড়ে। বদহজম, অম্বলও কমে যায় এই মেথি শাক খেলে।

ত্বক ভালো রাখে

এই শাকে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের নীচে জমে থাকা ফ্রি-র্যাডিক্যাল কমিয়ে ত্বকে আনে বাড়তি জেল্লা। সেই সঙ্গে অন্য ভিটামিন ত্বকের অনেক সমস্যা কমায়। খাওয়ার পাশাপাশি এই শাকের পেস্ট মুখে মাখলেও অনেক উপকার পাবেন।

মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা মেথির উপকারিতা ও  গুণ সম্পর্কে জানলাম তবে সব কিছুর কোন না কোন ক্ষতির দিক থাকে। এবার আমরা জানবো মেথির ক্ষতি কারক দিক গুলো । আসুন তাহলে জেনে নেই।

প্রথমেই একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না যে কোনো কিছুর পরিমান মতো ব্যবহার বা সেবন করলে কার্যকারিতা ঠিক থাকে বা ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

১। মেথি দানার গুঁড়ো মুখে গেলে তেতোঁ ভাব সৃষ্টি হয়। এতে করে অনেকের বমি বমি ভাব লাগে অথবা মাথা ঘোরার ।
২। মেথি বেশি খেলে ব্লাড এ সুগার কম (blood) আছে এমন কেও খেলে সুগারের পরিমাণ আরও কমে যেতে পারে।
৩. দীর্ঘ সময় মেথি খাওয়ার ফলে শরিরে থেকে দুর্গন্ধের সৃষ্টির প্রভাব দেখা দিতে পারে।

৪। কৌমারীন থাকার জন্য, রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ হতে পারে এই মেথি। প্রধাণ অন্তরা যাদের, রক্ত পাতলা এমন লোকের ক্ষেত্রে নিয়মিত মেথি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৫। মেথির দানা ভেজানো পানি গর্ভবতী মহিলারা নিয়মিত খেলে সময়ের আগেই শিশুর ভূমিষ্ট হতে পারে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এমনকি গর্ভপাতের সম্ভাবনা ও দেখা দিতে বা ঘটে যেতেপারে।

পরিশেষে 

তাহলে আজকে আমারা মেথির উপকারিতা , অপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারলাম । আশা করি আপনাদের সকলের কাজে আসবে ,আমরা মেথির গুনাগুন সমন্ধে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করলাম আপনারা আপনাদের শরীর অনুযায়ী যেভাবে ভালো হয় সেভাবে ব্যবহার করবেন।

তাহলে আজ এ পর্যন্তই,  আশা করি মেথির উপকারিতা সমন্ধে লিখা আপনাদের ভালো লাগবে আর আপনাদের ভালো লাগলেই আমাদের লিখা সার্থক হবে।

Leave a Reply