দেশি মুরগি পালন করে কীভাবে লাভবান হওয়া যায়

দেশি মুরগি পালন করে কীভাবে লাভবান হওয়া যায়

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মুরগি পালনের জন্য বেশ উপযোগী। এদেশে মুরগি পালনের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারনত ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য দেশি মুরগি পালন করা হয়।

দেশি মুরগি পালন murgi palan করে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মিটিয়েও বাড়তি কিছু আয় করা সম্ভব।  অন্যান্য জাতের চেয়ে দেশি মুরগির জাত আকারে ছোট ও বছরে অল্প ডিম দিলেও খেতে অনেক বেশি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমরা দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে কথা বলবো।

দেশি মুরগি পালন
দেশি মুরগি পালন

কীভাবে দেশি মুরগি পালন করা যায়?

আমাদের দেশে প্রচলিত দেশি মুরগি পালনের ৩টি পদ্ধতি আছে।

১. মুক্ত পালন পদ্ধতি

২. অর্ধমুক্ত পালন পদ্ধতি

৩. সম্পুর্ণ আবদ্ধ পালন পদ্ধতি

মুক্ত পালন পদ্ধতিঃ আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এই পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন পালন করা হয়। এটি প্রচলিত সনাতন পদ্ধতি এবং সহজ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সাধারনত একটা ছোট ঘর বা খাচা বানিয়ে বাড়ির আঙ্গিনার এক কোণায় রাখা হয়। খুব ভোরে মুরগিকে চাল, ভাত, খুদ ইত্যাদি জাতীয় খাবার দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

সারাদিন বাড়ির আশে-পাশে সহ বিভিন্ন জায়গায় নিজেই নিজের খাবার সংগ্রহ করে খায় এবং সন্ধ্যার পূর্বেই বাড়ি ফিরে আসে। এটা হলো ঘরোয়া পদ্ধতিতে।

অর্ধমুক্তঃ এই পদ্ধতিতে সাধারনত বড় একটা ঘরে নিচে ছাউনি ছাড়া চারিদিকে নেট বা জাল দিয়ে ছোট বা মাঝারি ঘর বানিয়ে মুরগি রাখা হয়। যারা সামান্য অর্থ উপার্জন ও নিজেদের খাওয়ার জন্য পালন করতে চান তারা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে।

এভাবে মুরগি খুব একটা ঘরের বাইরে ছাড়ার প্রয়োজন পড়ে না, অর্ধ-মুক্ত ঘরের মধ্যে খাওয়া, থাকা সহ বিষ্ঠা ত্যাগ সব কাজই সম্পূর্ণ হয়।

সম্পুর্ণ আবদ্ধ পদ্ধতিঃ বাণিজ্যিক ভাবে খামারে মুরগি পালনের জন্য এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এই ব্যবস্থায় এগুলো সম্পূর্ণ মালিকের নিয়ন্ত্রনে থাকে। দেশি, ব্রয়লার, লেয়ার সহ উন্নত জাতের মুরগি এই পদ্ধতিতে পালন করা হয়।

মুরগি সম্পূর্ণ ঘরের ভেতরে ও খাঁচায় রাখা হয়। মুরগিকে সাধারনত খুব একটা ঘরের বাইরে বের করা হয় না। তবে খামার যদি চারিদিকে ঘেরা থাকে তাহলে ঘরের বাইরে ছাড়া হয় সঠিক বৃদ্ধি ও রোগ-বালাই প্রতিহত করার জন্য।

আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলে আমরা সম্পূর্ণ আবদ্ধ পদ্ধিতে দেশি মুরগি পালন সম্পর্কে কথা বলবো। তার আগে চলুন জেনে নেয় কীভাবে দেশি মুরগি চেনা যায়।

দেশি মুরগি চেনার সহজ উপায়

১. দেশি মুরগির মাথার ঝুটি ও গলার ফুল অন্যান্য মুরগির চেয়ে বেশি গাঢ় লাল হয়।

২. এদের পায়ের চামড়া সাধারনত মসৃণ হয় না, বেশি খসখসে হয়ে থাকে।

৩. অন্যান্য জাতের মুরগির তুলনায় দেশি জাতের মুরগি তুলনামূলক বেশি ছটফটে ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে।

৪. এদের ঠোট সমান, সুঁচালো ও ধারালো হয়।

৫. এই জাতের মুরগির পা লেয়ার অথবা পাকিস্তানি জাতের চেয়ে কিছুটা খাটো হয়।

দেশি মুরগি কোথা থেকে কিনবো?

যারা জানেন না বা ভাবছেন দেশি মুরগি পালন শুরু করার জন্য ভালো জাতের বাচ্চা বা মা-মুরগি কোথায় পাবো তাদের জন্য একটা ভালো ধারনা দিচ্ছি। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই দেশি জাত ঘরোয়া পদ্ধতিতে পালন করা হয়।

তারা মুরগির শরীরে কোনো ধরনের ভ্যাক্সিন বা অপ্রয়োজনীয় ঔষুধ প্রয়োগ করে না। গ্রাম থেকে যারা বিক্রি করতে চায় তাদের কাছ থেকে মুরগি নিলে ভালো জাত পাবেন।

এছাড়াও যাদের চলতি খামার আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। অনেকেই বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যমে মা-মুরগি ও বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে বিক্রির জন্য। এই ধরনের সুপরিচিত ও ভালো খামারীর কাছ থেকেও কিনতে পারেন।

তবে বাজারের যেসব দোকানে খাওয়ার জন্য বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে পালনের জন্য মুরগি কেনা থেকে দূরে থাকবেন। এমন অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা আপনাকে দেশি জাত বলে পাকিস্তানি অথবা লেয়ার জাত ধরিয়ে দিবে।

দেশি মুরগির ঘর তৈরির নিয়ম
দেশি মুরগির ঘর তৈরির নিয়ম

দেশি মুরগির ঘর তৈরির নিয়ম

ঘর তৈরির পূর্বশর্ত সমূহঃ

১. বন্যামুক্ত উঁচু স্থান নির্বাচন করতে হবে যেন বর্ষার মৌসুমে পানি না বাধে।

২. ঘর তৈরির জন্য নির্বাচিত জায়গাটি খোলামেলা হতে হবে এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকা লাগবে। অন্যথায় মল-মুত্র জমে দুর্গন্ধ ও গ্যাস তৈরি হবে যা পরিবেশ ও মুরগির স্বাস্থ্যের জন্য অপকারী। আর পর্যাপ্ত আলো বাতাসে ব্যবস্থা থাকলে বিদ্যুৎ খরচও কম লাগবে।

৩. বৃষ্টিতে যাতে জলাবদ্ধতা তৈরি না হয় সেজন্য উপযুক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা লাগবে।

৪. বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে ঘর তৈরি করার পূর্বে।

বাড়িতে যেভাবে দেশি মুরগির জন্য ঘর বানাবেন

মুরগির খামার murgir khamar দুইভাবে করা যায়, একটি হলো বাড়িতে ছোট পরিসরে আর অন্যটি হলো সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে খামার বানিয়ে। এই অংশে আমরা জানবো বাড়িতে কীভাবে অল্প পরিসরে ছোট ঘর বানাতে হয়। নিচের ধাপগুলো অনুরণ করতে পারেন –

১. ঘরের খুটির জন্য বাস অথবা কাঠ ব্যবহার করা যেতে পারে। ভালো কাঠের খুটি ব্যবহার করলে ভালো হয়। ঘরের চারিপাশে প্রতি ৪ ফুট পর পর একটা খুটি ব্যবহার করা ভালো।

আপনি যদি লম্বা ৮ ফুট ও চওড়া ৬ ফুট মাপের ঘর বানাতে চান সেক্ষেত্রে লম্বায় দুই দিকে ৩টা করে এবং চওড়ায় ১ করে সর্বমোট ৮টি খুটি ব্যবহার করা নিরাপদ। তবে খুটির মান ভালো না হলে বেশি পরিমাণে খুটি ব্যবহার করা উচিত।

২. ঘরের চারিদিকে ঘেরার জন্য নেট বা জাল ব্যবহার করা সর্বোত্তম। কারন এতে করে ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঢুকতে পারে। বাজারে দুই ধরনের নেট কিনতে পাওয়া যায় একটি হলো তারের তৈরি অন্যটি প্লাস্টিকের তৈরি।

তারের তৈরি নেটগুলো প্লাস্টিকের নেটের তুলনায় বেশি মজবুত হয়ে থাকে। তবে নেট বানাতে ভালো মানের তার ব্যবহার না করলে এতে মরিচীকা ধরার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়ে যায়।

মুরগির ঘরের উচ্চতা ২ ফুট হওয়া ভালো। উচ্চতা এর চেয়ে বেশি হলে সমস্যা নেই কিন্তু কম যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। নেট বানানো বা কেনার সময় প্রস্থ সর্বনিম্ন ২ ফুট এবং দৈর্ঘ্য প্রয়োজন অনুয়ায়ী নিবেন।

৩. এক চালা ঘরের চেয়ে দুই চালা ঘর মুরগির জন্য ভালো এবং দেখতেও সুন্দর। চালা বানানোর জন্য টিন শেড ব্যবহার করতে হবে। যদি হাতে যথেষ্ট অর্থ থাকে তাহলে টিন শেডের সাথে তাপ পরিবাহি ম্যাট বা কার্ডবোর্ড ব্যবহার করলে ভালো হয়। তাহলে গ্রীষ্মকালে ঘরের ভেতর অতিরিক্ত তাপমাত্রা তৈরি হবে না।

৪. যেহেতু নেট ব্যবহার করবেন ঘরের চারিপাশ ঘিরতে সেহেতু বর্ষাকালে ঝড়ো বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে মোটা পলিথিন বা ত্রিপলের পর্দা বানিয়ে ঘরের চারিপাশে ঝুলিয়ে দেওয়া দরকার। বৃষ্টির সময় তাৎক্ষনিক ভাবে পর্দা দিয়ে ঘর ঢেকে দেওয়া যাবে।

৫. ঘরের আকার অনুযায়ী পরিমাণমতো কাঠ দিয়ে দরজা ও জানালা বানাতে হবে।

৬. উপরের নিয়মে আপনি অল্প জায়গায় বহুতল বিশিষ্ট ঘরও বানাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার অর্থ ও জায়গা দুইটাই কম প্রয়োজন হবে। ছোট এই ধরনের ঘর বানালে ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফুট প্ররস্থ্যের প্রতি তলা ঘরে ১২-১৫ টি বড় সাইজের মুরগি রাখতে পারবেন।

খামারের জন্য যেভাবে ঘর বানাবেন

সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালন murgi palan শুরু করতে হলে একটু বড় আকারে ঘর বানাতে হবে। যার জন্য যথেষ্ট জায়গারও প্রয়োজন হবে। এই ধরনের ঘর সাধারনত মানুষের থাকার ঘরের মতো উঁচু হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেয় ঘর তৈরি করার নিয়ম –

১. বড় আকারের ঘর বানানোর জন্য খুটি হিসেবে বাশের পরিবর্তে সিমেন্টের ব্লক খুটি ব্যবহার করাই উত্তম। এতে করে খুঁটিতে উইপোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং ঘর দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত হবে।

২. ছোট ঘরের মতো বড় ঘরেও চারিদিকে ঘেরার জন্য তারের অথবা প্লাস্টিকের নেট ব্যবহার করে যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন নেট তুলনামূলক শক্ত ও মজবুত হয়।

৩. ঘরের ভেতরে লাইটের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে হলুদ ফিলামেন্টের লাইট ব্যবহার করা ভালো। খামারের ঘর তৈরি করতে গেলে ঘর যেন খোলামেলা হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।

৪. এই ধরনের ঘর তৈরির নিয়মও ছোট ঘর তৈরির মতো অনেকটা। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপরের নিয়মও এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।

আরো পরুন: কবুতর পালন করে কিভাবে সফল হবেন

দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি

বাচ্চা উৎপাদনঃ দেশি মুরগি পালন এর জন্য প্রথমেই আপনাকে মুরগির বাচ্চা murgir baccha সংগ্রহ করতে হবে অথবা বাচ্চা উৎপাদন করতে হবে। ডিম কিনে তা থেকে ইনকিউবেটরের সাহায্যে বাচ্চা উৎপাদন করা যায়।

বর্তমানে আমাদের দেশে ডিম ফোটানোর ইনকিউবেটর খুবই সহজলভ্য হয়ে গেছে। বাজার থেকে রেডিমেড ৩০, ৫০, ১০০ ইত্যাদি ডিমের ইনকিউবেটর পাওয়া যায়, অথবা ভালো একজন অভিজ্ঞ ও পারদর্শী কাউকে দিয়ে এটি বানিয়ে নিতেও পারেন। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ভালো জাতের ডিম সংগ্রহ করা উচিত। অন্যাথায় বাচ্চাও ভালো হবে না।

যদি ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে দেশি মুরগি পালন murgi palon শুরু করতে চান তাহলে ১০-১৫ দিনের বয়ষ্ক বাচ্চা কিনেও খামার গড়ে তুলতে পারেন। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন পূর্বসুরি যেমন হবে তার পরবর্তী প্রজন্মও তেমন হবে। তাই যদি ভালো জাতের বাচ্চা অথবা ডিম সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে তা থেকে ভালো জাতের মুরগি তৈরি হবে।

ঘর নির্মাণঃ বাচ্চা বা ডিম সংগ্রহের কাজ হয়ে গেলে এবার আপনাকে ঘর তৈরি করতে হবে। উপরে দেখানো নিয়ম অনুসরণ করে দেশি মুরগি পালন এর জন্য ঘর তৈরি করতে পারেন। অথবা আপনার মাথায় ঘর তৈরির কোনো ভালো ছক থাকলে সেটাও প্রয়োগ করতে পারেন।
দেশি মুরগির খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ মুরগির বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য কেমন হবে সেটা অধিকাংশে নির্ভর করে খাদ্য ব্যবস্থাপনার উপর।

সুষম খাদ্য সরবরাহ করলে দ্রুত বৃধি পায়, রোগ-বালাই প্রতিরোধ করতে পারে ও অধিক পরিমাণে ডিম সরবরাহ করে। বাজারে ব্রয়লারের জন্য বিভিন্ন ধরনের নানান কোম্পানির খাবার পাওয়া যায়, যা বেশিরভাগই ক্ষতিকর পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় শুধুমাত্র মুরগিকে দ্রুত বৃদ্ধি ও মাংস উৎপাদনের জন্য। কিন্তু দেশি মুরগির জন্য এই ধরনের খাবার না দেওয়াই ভালো।

যে খাদ্যে সকল পুষ্টি উপাদান সুনির্দিষ্ট পরিমাণে থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে। নিজে সুষম খাদ্য বানাতে পারলে তা অনেক ভালো হবে, একই সাথে খরচ কম হয়। নিচে প্রতি ১০ কেজি সুষম খাদ্য তৈরির তালিকা দেওয়া হলো।

দেশি মুরগির জন্য সুষম খাদ্য তৈরির নিয়ম

১. গম ও ভুট্টার গুড়া – ৪.৯ কেজি

২. চালের কুড়া – ১.৮ কেজি

৩. তিলের খৈল – ১.২ কেজি

৪. সয়াবিন বা চিনাবাদামের খৈল – ৩০০ গ্রাম

৫. শুঁটকি মাছের গুড়া – ১.৫ কেজি

৬. ঝিনুকের গুড়া – ১৫০ গ্রাম

৭. লবণ – ৫০ গ্রাম

৮. ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ – ২৫ গ্রাম

৯. হাড়ের গুড়া – ১০০ গ্রাম

উপরের খাদ্য উপাদানগুলো গ্রাইন্ডারে বা যাঁতাকলে ভালো করে গুঁড়া করে নিতে হবে। তারপর মিশ্রিত খাদ্য রোদ্রে শুকিয়ে বস্তায় অথবা ব্যাগে ভরে শুষ্ক ও ঠান্ডা স্থানে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যাবে।

পিলেট বা বড়ি করার প্রয়োজন হলে মিশ্রিত খাদ্যে পরিমাণমতো পানি ঢেলে আঠালো করে পিলেট বানানো যাবে। তৈরিকৃত পিলেট শুকিয়েও দীর্ঘদিন সঙ্গরক্ষণ করা যাবে।

মুরগির জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা

১. পুষ্টিজনিত অভাব দূর হয়।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও রোগ সারায়।

৩. ডিম ও মাংসে উৎপাদন বাড়ে এবং পুষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে।

৪. দৈহিক বৃদ্ধি স্বভাবিক থাকে।

৫. হাঁস-মুরগির মৃত্যু হার কমে যায়।

৬. ডিম ও মাংসের গুণগত মান ভালো থাকে।

দেশী মুরগী পালন ও চিকিৎসা

পৃথিবীর সব উদ্ভীদ ও জীবের রোগ-বালাই হয়। ঠিক তেমনি হাঁস-মুরগিও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে অন্যান্য জাতের তুলনায় দেশি জাতের রোগ-বালাই সাধারনত কম হয়ে থাকে, আর এজন্যই দেশি মুরগি পালন এর চাহিদা দিনে দিনে এত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশি মুরগি বিভিন্ন ভাইরাসজনিত, ব্যাকটেরিয়াজনিত, ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর এসকল রোগের ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থাও আছে।

দেশি মুরগির মূলত রানীক্ষেত, গামবোরো, বসন্ত রোগ, রক্ত আমাশয়, মাইকোপ্লাজমোসিস ইত্যাদি রোগ হয়। রোগ গুলোর জন্য নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে সর্বোত্তম হয় যদি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে চিকিৎসা করান।

অথবা এখন জেলা, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর অনেক বেশি সক্রিয়, জটিল সমস্যায় পড়লে তাদের সাহায্য নেওয়া উচিত।

রানীক্ষেত রোগঃ রানীক্ষেত রোগটি হয় নিউক্যাসেল ডিজিস ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে। এই রোগ হলে আক্রান্ত বাচ্চা নিরিবিলি এক কোণায় ঝিমায়, সাদা চুনের মতো মল ত্যাগ করে, শ্বাসকষ্ট হয়, নাক ও মুখ দিয়ে পানি পড়ে, ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয় ইতাদি।

রানীক্ষেত রোগ হলে আক্রান্ত মুরগি বা বাচ্চাকে অন্য সব মুরগি থেকে আলাদা করতে হবে, কোনো মুরগি মারা গেলে সেটাকে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে, ৭ থেকে ২১ দিন বয়সী বাচ্চাকে বিসিআরডিভি ও দুই মাসে বেশি বয়সী মুরগিকে আরডিভি ঔষুধ দিতে হবে।

গামবোরো রোগঃ এটি একটা ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো – খাদ্য গ্রহণে অনীহা, মাটিতে শুয়ে পড়া, পানি তৃষ্ণা বাড়ে, মলের সাথে রক্ত ও পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়, দেহে কাপুনি ওঠে ইত্যাদি। গামবোরো রোগের চিকিৎসা হলো সিপ্রোফ্লক্সাসিন, এমোক্সিলিন জাতীয় ঔষুধ খাওয়াতে হবে।

ক্রান্তের হার বেড়ে গেলে ভিটামিনের অভাব পূরণের জন্য লেবুর রস পানিতে গুলিয়ে, আখের গুড় অথবা স্যালাইন পানিতে গুলিয়ে খাওয়ানো যায়। সমস্যা বেশি জটিল হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সর্বোপরি পরিচর্চাঃ

দেশি মুরগি পালন এর জন্য এ বিষয়ে উপযুক্ত জ্ঞান লাভ করতে হবে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নেওয়া, খামারীদের কাছে যাওয়া, তাদের খামার দেখা ইত্যাদি উপকারী হবে।

রগির পরিচর্চার জন্য নিয়মিত মুরগিকে ভ্যাক্সিন দিতে হবে, ঔষুধ খাওয়াতে হবে, আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করতে হবে, সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে, খোলামেলা পরিবেশে এদেরকে রাখতে হবে, শীতের সময়ে ঘর উষ্ণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় লাইট ও তাপ উৎপন্নকারী যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে।

সার্বিক পরিচর্চা নির্ভর করে ব্যক্তির উপর এবং ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতার উপর। এজন্য অবশ্যই আপনাকে দক্ষ ও জ্ঞানী হতে হবে।

দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়

উন্নত জাতের দেশি মুরগি বছরে ১৫০ থেকে ১৮০ একক ডিম দিতে পারে এবং এই ডিমগুলোর ওজন প্রায় ৪৫-৬০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। উন্নত জাতের দেশি মুরগি ৫ মাস বা ১৫০ দিনের মধ্যে ডিম দিতে শুরু করে কিন্তু সাধারন দেশি মুরগি ডিম দিতে সময় নেয় ৬ মাস বা ১৮০ দিন পর্যন্ত। জাত ভেদে এর পরিমাণ কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে।

শেষ কথা

দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি এবং এর পরিচর্চা ও রোগ-বালাই সম্পর্কে যদি আপনার ভালো জ্ঞান থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এই ব্যবসায় থেকে ভালো পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারবেন ইন-শা-আল্লাহ।

আমাদের দেশে এমন অনেক যুবক, যুবতী, বয়ষ্ক ব্যক্তি আছেন যারা একদম অল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন কিন্তু আজ তাদের খামারে হাজার হাজার মুরগির সমরম। এটা খুবই লাভজনক একটা ব্যবসায়।

বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট্ট ঘর বানিয়ে শুরু করুন, এরপর আস্তে আস্তে তা বড় করুন, একদিন আপনার খামারও অনেক বড় হবে সঠিক পরিচর্চা কারণে। ইন্টারনেট সহ অনেক জায়গায় এই বিষয়ক সেমিনার হয়, সেগুলোতে যুক্ত হোন তাহলে অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং সেই সাথে অনেকের সাথে পরিচিত হতেও পারবেন।

আপনারা যদি পোল্ট্রি পালনের উপর সম্পূর্ণ আর্টিকেলে চান তাহলে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আপনাদের ইতিবাচক মত পেলে আমরা পোল্ট্রি পালনের ওপরও আর্টিকেল প্রকাশ করবো ইন-শা-আল্লাহ।

2 Comments

  1. Admin August 9, 2022
  2. Anonymous September 19, 2022
  3. Md. Nazmul Hasan September 19, 2022
    • Admin September 30, 2022

Leave a Reply