ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা

ড্রাগন ফল dragon fol এক ধরনের (Cactus) প্রজাতির ফল। উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের দাম বেশি হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এবং অন্যান্য দেশেও এর চাহিদা দিন দিন বারছে কারন এই ফল টি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্য সম্মত। এই ফলের কালার কয়েক ধরণের হয়ে থাকে যেমন লাল, গোলাপি, হলুদ, ইত্যাদি ।

এই ফলের দাম বেশি পাওয়ায় অনেকেই চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ইতো মধ্যেই বাংলাদেশর অনেক জায়গায় এই সুস্বাদু ফল চাষ করে অনেকেই সাবলম্বি হয়েছেন।

ক্যাকটাস গাছের মতই দেখতে, লম্বায় ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এই ফলের খোসা নরম হয় এবং কাটলে ভেতরে লাল এবং সাদা রঙের হয়ে থাকে। ফল কাটার পর ফলের ভেতরে কালজিরার দানার মতো ছোট ছোট বিজ থাকে, ফলটি খেতে নরম এবং খেতে খুবই সুস্বাদু।

ড্রাগন ফলে dragon fruit প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা ৩ ওমেগা ৯ এবং ভিটামিন সি থাকে। এই ফলে বিটা ক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও রয়েছে যা শরীরে ভিটামিন “এ” তে রূপান্তরিত হয়ে ত্বক, চোখ এবং মানব শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমের উন্নতি করে, যা বর্তমানে করোনা কালিন সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটু বিষয়।

এর উপকারিতা dragon fruit benefits অনেক, তাই আজ আপনাদের সাথে কিছু উপকারিতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করবো, আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এবং অনেক কিছু জানতে পারবেন আমাদের সাথেই থাকুন।

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুন

এই ফলের পুষ্টি গুনাগুন এর হার প্রতি ১০০ গ্রাম হিসেবে
১। কেলোরিস : ৬০
২। ফ্যাট বা চর্বি : ০ গ্রাম
৩। প্রোটিন : ১.২ গ্রাম
৪। কার্বোহাইড্রেটস : ১৩ গ্রাম
৫। ফাইবার : ৩ গ্রাম
৬। আয়রন : ১.৯ মিলি গ্রাম
৭। সুগার বা চিনি : ৫.৮ গ্রাম
৮। ভিটামিন সি : দৈনিক চাহিদার ৩%
৯। মেগনেসিয়াম : দৈনিক চাহিদার ১০%
এছারাও আছে মিনারেল এবং ভিটামিন যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী

ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি

মানব শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি খুবই কার্যকরী, আমরা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি জাতিয় ফল খেয়ে থাকি তবে এই ফলেও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি তাই ভিটামিন সি এর উৎস হিসেবে এই ফলকেও এই তালিকায় রাখতে পারেন। বর্তমান সময়ে মানব শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরধে

এই সুস্বাদু ফলে যথেষ্ট পরিমানে ফাইবার থাকায় অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরণে সহায়তা করে, যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা রয়েছে তারা এই ফল আপনাদের খারের তালিকায় রাখলে উপকার পাবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করতে কলাও কিন্তু অনেক উপকারী তাই দেখে নিতে পারেন কলার উপকারিতা 

আয়রন ঘাটতি পূরণে

পুষ্টি ঘাটতির মধ্যে আয়রন ঘাটতি হোলও অন্যতম, নারিদের মধ্যে আয়রন ঘাটতির সমস্যা বেশি দেখা যায়। বাদাম, ডাল, মাছ ও মাংস জাতীয় খাবার থেকে আমরা অধিকাংশ আয়রন গ্রহণ করে থাকি।

প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে প্রায় ১.৯ মিলি গ্রাম আয়রন পাওয়া যায় যা দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার ১০ শতাংশেরও বেশি।

হার্ট ভালো রাখে

এই ফলে যে ছোট ছোট কালজিরার মতো বীজ থাকে ঐ বীজ হার্টের জন্য খুবই উপকারী কারন ওতে আছে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড। নিউ ইয়র্কের পুষ্টিবিদ কেরি গানস এই ফল সমন্ধে বলেন যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে যে কারনে এই ফল খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে গিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

অন্ত্র সুরক্ষিত রাখে:

আমাদের অন্ত্রে ৪০০ টিরও বেশি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া সহ প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন বিবিধ মাইক্রো অর্গানিজম রয়েছে। অণুজীবের এই সম্প্রদায়টি আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে অনেক গবেষক এমনও বিশ্বাস করেন। এ ক্ষেত্রে এই ফলে যে Pre-biological বা প্রাক-জৈবিক উপাদান রয়েছে যা আপনার অন্ত্রের ভাল ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

অন্ত্র সুরুক্ষা রাখতে মেথিও অনেক উপকার করে তাই মেথির উপকারিতা দেখে নিতে পারেন।

ড্রাগন ফল কিভাবে খায়

ফলটি দেখতে একটু অন্য রকম তাই অনেকের মনেই এই প্রশ্ন আসে । তবে ফলটি খেতে কিন্তু খুবই সহজ তো চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে এই ফল খাবেন।

১- অন্যান্য ফলের মতো ফলের মাথার অংশ ও পেছনের অংশ কেটে নিন
২- এবার ফলটির মাজ বরাবর কেটে ফেলুন অর্থাৎ দুই ভাগ করে ফেলুন
৩- এখন ভেতরে দেখবেন সাদা অথবা লাল রঙের শাঁস এবং সেই সাথে ছোট ছোট দানা
৪- এবার শাস থেকে খোসা ছারিয়ে নিন
৫- এবার এই ফল আপনি এমনিতেই খেতে পারেন আবার জুস বানিয়েও খেতে পারেন

খেতে কিন্তু খুবই সুস্বাদু এবং এর ভেতরে শাঁস এর সাথে যে ছোট ছোট দানা থাকে তা সহকারে খাওয়া যায়

এতক্ষণ নানা গুনাগুন এর মধ্যে কিছু গুনাগুন সমন্ধে বলার চেষ্টা করলাম এখন এই ফল চাষ  সমন্ধে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো

ড্রাগন ফল

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

কৃষি বিভাগের সুত্র মতে, সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন চাষ হয়। তবে উঁচু জমিতে এই ফলের ফলন ভালো পাওয়া যায়। ৩ মিটার বা ৯.৮৫ ফুট পরপর গর্ত করে (এই দুরুত্ত একটু কম বেশি হতে পারে) চারা রোপণ করতে হয়।

বছরের যেকোনো সময় চারা রোপণ করা যেতে পারে। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চারা রোপণ করতে পারলে হলে ভালো। সিমেন্ট অথবা বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে দিতে হয় তবে সিমেন্ট এর খুঁটি টেকসই বেশি হয়। গাছে ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে।

প্রতিটি ফলের ওজন হয় ২০০-৬০০ এমনকি ৮০০ গ্রামও হতে পারে। ১২-১৮ মাস বয়সী একটি গাছে ৫-২০টি ফল ধরে। পরিপক্ব একটি গাছে সর্বোচ্চ ৮০টি ফল পাওয়া যায়। ছাদবাগানের টবেও চাষ করা যায়। এই সুস্বাদু ফল চাষ পদ্দ্বতি সমন্ধে জানলাম এখন দেখবো চারা রোপন এবং মাদা তৈরী কিভাবে করতে হয়।

চারা রোপণের জন্য মাদা তৈরি

১ টি মাদা বা বেড তৈরিতে যা যা লাগবে

১। একটি সিমেন্ট এর খুঁটি ৬ ফিট
২। টি এস পি সার = ২০০ গ্রাম
৩। পটাশ = ১০০ গ্রাম
৪। জিপসাম = ২০০ গ্রাম
৫। দস্তা = ১০০ গ্রাম
৬। গোবর সার = ৫ থেকে ১০ কেজি
৭। পোলট্রি লিটার = ৫ থেকে ১০ কেজি

প্রথমেই সিমেন্ট এর খুঁটিকে ১.৫ ফিট গর্ত করে শক্ত করে পুতে দিতে হবে যাতে ঝর বৃষ্টিতেও গাছের কোন ক্ষতি না হয়, তারপর খুঁটি থেকে চতুর্দিকে ১.৫ ফিট করে মানে মোট ৩ ফুট x ৩ ফুট পাশে এক ফুটের মতো বা গর্ত করে উপরে দেয়া সমস্ত উপকরণ গুলো খুব ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

ভালভাবে মেশানোর পর মাটি লেভেল করে পরিমান মতো পানি দিয়ে ১৫ দিনের জন্য রেখে দিতে হবে, ১৫ দিন পর ভালো জাতের চারা এনে ঐ সিমেন্ট এর খুঁটির এক দুই ইঞ্চি দূরে খুঁটির চার পাশে ৪ টি চারা রোপণ করা যাবে।

জায়গার স্বল্পতা থাকলে আপনি বাড়ির ছাদে বড় টবে বা ড্রামে এই ফল চাষ করতে পারেন। টবে কাটিং লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে। জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি চাষের জন্য উত্তম।

চারা রোপণের এক বছরে পর প্রথম ফুল আসতে পারে সময় একটু কম বেশি লাগতেও পারে , চারা রোপণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো জাতের চারা রোপণ করতে হবে কারন ভালো জাতের চারা ছারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া মুশকিল হতে পারে।

তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনারা ৩-৪ জাতের চারা রোপণ করুন তারপর দেখুন যে কোন জাত টি আপনার জমিতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তখন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে কোনটি আপনার জন্য ভালো এবং আপনি তখন নিজেই জাত উন্নয়ন করতে পারবেন।

জমি একটু নিচু হলে নালা বা ড্রেন এর মতো করে মাটি কেটে দুই পাশে জমি উঁচু করে সেই উঁচু জায়গায় মাদা তৈরি করে চারা রোপণ করতে পারেন। নালা বা ড্রেন সিস্টেম করলে গাছে পানি দেয়ার জন্য অতিরক্ত সময় দেয়া লাগে না ঐ নালা থেকে গাছ নিজের তার প্রয়োজন মতো পানি শোষণ করে নিতে পারবে।

ড্রাগন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়

ড্রাগন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়

এই ফলের চারা বিজ থেকেও উৎপাদন করা যায় আবার কাটিং পদ্ধতিতেও চারা তৈরি করা যায়। তবে কাটিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

ইতো মধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় যেমন নাটোর, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফল চাষ শুরু হয়েছে। আপনারা চাইলেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে চারা সংগ্রহ করতে পারেন। তবে চারা সংগ্রহের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন দাম একটু বেশি হলেও ভালো জাতের চারা নেয়া।

কারন ভালো জাত নির্বাচন আর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। আমি পর্যায় ক্রমে চারা কোথায় পাবেন তার বিশস্ত ঠিকানা দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা চাইলে এই  ড্রাগন ফলের চারা গুলো দেখতে পারেন।

ড্রাগন ফলের দাম

সুস্বাদু এই ফলের দাম এর ক্ষেত্রে স্থান, আকার ও আকৃতি ভেদে দাম কম বেশি হয়ে থাকে, সাইজে ছোট গুলো তুলনামূলক ভাবে দাম একটু কম, আবার আকারে বড় যেমন দুই টা তিন টায় কেজি হলে দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। তবে গড়ে একটা দাম ধরা যেতে পারে যেমন ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে এর দাম উঠা নামা করে।  শহরের দিকে দাম বেশি হলেও উৎপাদন এরিয়াতে দাম অনেকটা কম থাকে।

পরিশেষে বলবো এই পোস্ট এর মাধ্যমে আপনাদের কিছু পরিমান উপকার আসলেই আমাদের লিখা সার্থক হবে, লিখাটা ভালো লাগলে একটা কমেন্ট করতে ভুলবেন না , সবাইকে ধন্যবাদ।

No Responses

Leave a Reply