তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

আসসালামু আলাইকুম, মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ খুবই গুরত্বপূর্ণ এবং পূণ্যের একটি ইবাদত। তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহুর নৈকট্য অর্জন করা যায় এবং আল্লাহুর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠা যায়।

এজন্য আজকে আমাদের আলোচনা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে। তাহাজ্জুদ নামাজ শিখতে ও বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।

ফরজ নামাজের পরে অন্যান্য সকল সুন্নত এবং নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। মুসলিমদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই আমরা এ নামাজ সম্পর্কে জানি না, জানি না এ নামাজের নিয়ম কানুন ও ফজিলত সম্পর্কে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

মহানবী (স:) বলেছেন- “ফরজ নামাজের পর সকল নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ।” এ এবাদত আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে। আমাদের অতিরিক্ত কর্তব্য হিসেবে এ নামাজ ঘোষণা করেছে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অসংখ্য। 

তাহাজ্জুদ ইবাদত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন -রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে, যা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে ‘মাকামে মাহমুদ’-এ পৌঁছাবেন।” (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)

মহান রাব্বুল আলামিন প্রতি রাতের শেষভাগে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। তখন তিনি তাঁর বান্দাদের ডাকে সাড়া দেন, যে যা চায় তাই কবুল করেন এবং যে ক্ষমা চায় তাকে ক্ষমা করেন। 

রাতের এ শেষভাগে আল্লাহর রহমত পাওয়ার এক অন্যতম উপায় হলো তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিবেন। এ নামাজ আদায় করলে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, রোগ-বিপদ থেকে মুক্তি পায়, মনের আশা পূর্ণ হয়।

আল্লাহর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম পথ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। এ নামাজ আপনাকে আল্লাহ- ভীরু বানাবে এবং সকল পাপ কাজ থেকে দূরে রাখবে। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

প্রত্যেক নামাজের জন্য নিয়ত খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এটি হলো নামাজের শুরু, যা করা উচিত অত্যন্ত ভক্তির সাথে। প্রতি নামাজের ক্ষেত্রে নিয়ত বাধ্যতামূলক। কিন্তু নামাজের নিয়তের ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই বিভ্রান্তিতে থাকি, যে নিয়ত আরবিতে করব নাকি বাংলায়।

নিয়ত আরবি কিংবা বাংলা যেটাতেই হোক, পড়া যায়। তবে আমরা যে ভাষার অর্থ বুৃঝি, যে ভাষার মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে বেশি মনোযোগী হতে পারি সে ভাষাতেই আমাদের নিয়ত পড়া উত্তম। এক্ষেত্রে বাংলায় নিয়ত করাই ভালো। কারণ নিয়ত হলো মনের ইচ্ছা। আপনি যে নামাজ পড়তে ইচ্ছা পোষণ করছেন এটাই আপনার নিয়ত।

তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত

সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। এ ইবাদতের মাধ্যমে সহজেই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠা যায়। তাই আমাদের সকলের উচিত নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। 

তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত হলো- নাওয়াইতু আন উসালিলয়া লিল্লাহি তা’আলা , রাকাতাই সালাতিল তাহাজ্জুদি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”

অর্থ: আমি কিবলামুখী হইয়া আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাহাজ্জুদের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি। আল্লাহ আকবর।

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত মনে মনে নিজের ভাষায় যেকোনো ভাবেই বলা যায়। তবে নিয়ত হতে হবে অত্যন্ত ভক্তির সাথে। তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত হলো-

“আমি কিবলা মুখী হয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ২ রাকাত তাহাজ্জুদের সুন্নত নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি।”

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কঠিন কিছু নয়। অন্যান্য সব নামাজের মতোই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।  তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হলো-

  1. নিয়ত করতে হবে।
  2. তাকবিরে তাহরিমা “আল্লাহ আকবর” পাঠ করতে হবে।
  3. ছানা পাঠ করতে হবে। 
  4. সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পাঠ করতে হবে। মনে রাখা উচিত- অন্য যে সূরাটা আমরা পড়ব সেটা যেকোনো সূরাই হতে পারে। তবে তুলনামূলক একটু বড় সূরা পড়াই উত্তম। কারণ আমাদের নবী করিম (সাঃ) সবসময় বড় সূরা-ই পড়তেন। এমনও শোনা গেছে -বড় সূরা পড়তে পড়তে মহানবী (স:) পা ফুলে যেত। 
  5. অন্যান্য নামাজের মতোই রুকু, সিজদা করতে হবে। এক্ষেত্রে যতটা সময় নিয়ে রুকু সিজদা করা যায়। 
  6.  প্রথম রাকাত শেষ হলে দ্বিতীয় রাকাতও সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
  7. শেষ বৈঠকে তাশহুদুদ, দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করতে হবে। 

এভাবে পর্যায়ক্রমে ২ রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। 

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম 

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম পুরুষের নামাজের নিয়মের মতোই। নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।  পুরুষের ন্যায় সকল নিয়ম মেনে ২ রাকাত করে তাহাজ্জুদ আদায় করতে হয়। সর্বনিম্ন ২ রাকাত করে ৪ রাকাত, ৮ রাকাত, ১২ রাকাত ইত্যাদি পড়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সূরা পড়া উত্তম। 

তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত?

আমাদের সবার মধ্যে খুবই সাধারণ একটি প্রশ্ন- তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত?  এ প্রশ্নের উত্তর হলো- তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে শুরু করে নিজে যতটা পড়তে পারি। আমাদের নবী করিম (স:)-কে তাহাজ্জুদ নামাজ ২ রাকাত, ৪ রাকাত, ৬ রাকাত, ৮ রাকাত,  ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়তে দেখা গেছে।

তাই আমরাও নবী করিম (স:)-কে অনুসরণ করে এভাবে পড়ার চেষ্টা করব। 

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল

আমাদের মধ্যে আরেকটা কমন প্রশ্ন হলো তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল? তাহাজ্জুদ নামাজকে একাধারে সুন্নত এবং নফল বলা যায়। কারণ তাহাজ্জুদ নামাজ আমাদের নবী করিম (স:) পড়তেন। আর ওনার করা সকল কাজই সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। এদিক থেকে বলা যায় তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত।

অন্যদিকে, ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্যন্য সকল নামাজ এবং ইবাদতকে নফল বলা হয়। তাহাজ্জুদ নামাজ যেহেতু ফরজ নয়, সেহেতু এটিকে নফল ইবাদত বলা হয়। 

প্রসঙ্গত, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া অনেক ফজিলতপূর্ণ। তবে না পড়লে কোনো গুণাহ নেই।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। আমাদের অনেকেই জানতে চান যে তাহাজ্জুদ নামাজের উত্তম সময় কখন।

অন্যান্য নামাজের ন্যায় তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। এশার নামাজ শেষে ও ফজরের নামাজের পূর্বে যেকোনো সময় নিয়তের সাথে দুই রাকাত দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।

এশার নামাজের পরেও তাহাজ্জুদ পড়ার বিষয়ে একাধিক হাদিস রয়েছে। তার মধ্যে একটি-

যে রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ আদায়ের ব্যাপারে আশঙ্কা করে, সে যেন রাতের প্রথম ভাগে বিতর নামাজ পড়ে নেয়। আর যে শেষ ভাগে জেগে নামাজ আদায়ে আশা রাখে, সে যেন রাতের শেষ অংশে বিতর আদায় করে। কেননা, রাতের শেষ ভাগে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে সাক্ষ্য রয়েছে এবং এটি সর্বোত্তম। (মুসলিম হাদিস: ৭৫৫)

এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি কেউ যদি গভীর রাতে ঘুম থেকে ওঠতে না পারার আশঙ্কা করে তাহলে সে এশার নামাজের পরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারবেন।

তবে তাহাজ্জুদ নামাজের সবচেয়ে উত্তম সময় হলো রাতের শেষাংশ। অর্থাৎ ফজরের নামাজের পূর্বে। এ প্রসঙ্গে বহুল প্রচলিত একটা হাদিস-

প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন, এরপর বলেন- কে আছে আমার কাছে দোয়া করবে আর আমি তার দোয়া কবুল করবো? কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো? কে আছে আমার কাছে কোনো কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দেবো? (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৪/৪৬)

ইতিকথা

আজকের আর্টিকেলে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে জানানোর চেষ্টা করেছি। এখানে উপস্থাপিত সকল তথ্যই বিভিন্ন ইসলামিক স্কলাদের বক্তব্য থেকে নেওয়া।

সুতরাং এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে ইউটিউবে ইসলামিক স্কলারদের বক্তব্যগুলো শোনার পরামর্শ দেব।

Leave a Reply