টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবো এবং কেন প্রয়োজন?

প্রথমেই জেনে নেই টিন সার্টিফিকেট কি এবং তারপর আমরা টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন সমন্ধে জানবো, Taxpayer Identification Number (TIN) বা টিন হলো বাংলাদেশে করদাতাদের শনাক্তকরণ ইউনিক নাম্বার। এটিকে আয়কর নিবন্ধন সনদও বলা হয়।

এটি ১২ ডিজিটের একটি সংখ্যা, যেটির প্রথম ৪ ডিজিট টিন সার্টিফিকেট ধারীর এরিয়া কোড, মাঝের ৪ ডিজিট ব্যক্তির পদমর্যাদা এবং শেষ ৪ ডিজিট ব্যক্তির পরিচিতি নম্বর। এটির মাধ্যমে দেশের করযোগ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়।

বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়মানুযায়ী, যদি কোনো পুরুষের বাৎসরিক ৩ লক্ষ টাকা, ৬৫ বছর ধারী সকল নাগরিক এবং মহিলাদের ৩.৫ লক্ষ টাকা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ৪.৫ লক্ষ টাকা ইনকাম হলে তারা আয়কর দিতে বাধ্য।

আর তাদের আয়কর দিতে হলে তাদের অবশ্যই একটি করে টিন নম্বর থাকতে হবে। কোনো অবস্থায় করযোগ্য ব্যক্তিগণ যদি কর না দেয় তাহলে তার সকল ইনকাম অবৈধ ইনকাম হিসেবে গণ্য হবে এবং দেশীয় আইন অনুযায়ী বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার সম্মুখীন হতে হবে। 

দেশের প্রতিটা নাগরিকেরই টিন সার্টিফিকেট থাকা প্রয়োজন। কারণ টিন সার্টিফিকেট আমাদের নাগরিক জীবনে বিভিন্ন খাতে প্রয়োজন হয়। টিন সার্টিফিকেটধারীর কয়েকটা সুযোগ সুবিধা এবং প্রয়োজন সম্পর্কে জানা যাক-

  • দেশে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন প্রণোদনা থেকে শুরু করে সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। 
  • ব্যাংক থেকে লোন নিতে এই সার্টিফিকেট প্রয়োজন 
  • টিন সার্টিফিকেট ধারীর ব্যাংকে জমাকৃত টাকার ওপর ১০% হারে কর কাটবে। নতুবা সাধারণ নিয়মানুযায়ী ১৫%কাটবে।
  • শহর এলাকায় অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভূমি, ভবন ইত্যাদি রেজিষ্ট্রেশন করতে এবং গাড়ি কিনতে এই সার্টিফিকেট প্রয়োজন। 
  • কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে
  • আইনি, প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষক ইত্যাদি সেবাধর্মী পেশাগুলোতে সদস্যপদ পেতে
  • কোম্পানির পরিচালক অথবা শেয়ার কিনতে 
  • টিন সার্টিফিকেট ধারী দেশে গর্বিত করদাতা হিসেবে সামাজিক মর্যাদা পাবে।
  • পৌরসভা এলাকা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে।

টিন সার্টিফিকেটের বিভিন্ন সুবিধার পাশাপাশি গুটি কয়েক অসুবিধা থেকেই যায়। সেগুলোর মধ্যে একটি- টিন সার্টিফিকেট ধারীর করযোগ্য আয় থাকলে অবশ্যই কর দিতে হবে, নইতো তার সকল ইনকাম অবৈধ বলে বিবেচনা হবে।

অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন বা আবেদন

ডিজিটাল এই যুগে এখন ঘরে বসেই অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করা যায়। এখন আর এখানে-ওখানে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না। এপর্যায়ে জানাবো কীভাবে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট রেজিষ্ট্রেশন করা যায় –

  1. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট http://nbr.gov.bd/form/income-tax/eng লগইন করতে হবে।
  2. হোমপেজের উপরের বামদিকে রেজিষ্ট্রেশন বারে ক্লিক করতে হবে।
  3. এধাপে আপনাকে User Id ঘরে একটি ৮ ক্যারেক্টারের ইউজার আইডি বসাতে হবে।
  4. Password ঘরে একটি পাসওয়ার্ড বসাতে হবে এবং পাসওয়ার্ডটি রিটাইপ করতে হবে। 
  5. Security Question অপশনে অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন সিলেক্ট করতে হবে এবং সেটি ওই ঘরে টাইপ করতে হবে। অবশ্যই প্রশ্নটি যেন নিজের মনে থাকে।
  6. Security Answer অপশনে প্রশ্নের উত্তর বসাতে হবে। 
  7. Country অপশনে Bangladesh লিখতে হবে।
  8. Mobile Number অপশনে নাম্বার বসাতে হবে।
  9. ইমেইল এড্রেস ঘরে আপনার সচল একটি ইমেইল এড্রেস বসাতে হবে। 
  10. শেষ পর্যায়ে একটি ক্যাপচা থাকে সেটি Security Code অপশনে বসাতে হবে।
  11. এবার রেজিস্ট্রার বাটনে ক্লিক করতে হবে। 
  12. মোবাইল আ্যক্টিভেশন অপশন শো করবে। সেখানে আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে এসএমএসের মাধ্যমে  একটি কোড আসবে, সেটি সেখানে টাইপ করে Activate বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এপর্যায়ে আপনার রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লিট হয়ে যাবে। আপনার ব্যবহৃত ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড যত্ন সহকারে রেখে দিবেন। কারণ আপনার সার্টিফিকেটটি হারিয়ে গেলে আপনি পুনরায় আইডি, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার সার্টিফিকেটটি বের করতে পারবেন।

আরো পড়ুন : ট্রেড লাইসেন্স কি এবং কেন প্রয়োজন?

এর পরবর্তীতে-

  1. লগইন অপশনে আপনি আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড বসিয়ে লগইন কনফার্ম করবেন।
  2. পরবর্তী পেজে For TIN registration/ Re Registration এর পাশে Click বাটনে ক্লিক করবেন।
  3. এই ধাপে রেজিস্ট্রেশন ফরম আপনার সামনে শো করবে। আপনার সকল সত্য ইনফরমেশন দিয়ে ফরমটি পূরণ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন।

টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড

এ-পর্যায়ে সকল তথ্য দিয়ে সাবমিট বাটন চাপতেই পরবর্তী পেজে View Certificate অপশনে ক্লিক করে আপনার সার্টিফিকেটটি দেখতে পারবেন এবং টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।

শেষ ধাপে Save বাটনে ক্লিক করে আপনার সার্টিফিকেটটি পিডিএফসহ ডাউনলোড করা হয়ে যাবে।

টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম

আমাদের অনেকেরই করযোগ্য আয় না থাকলেও জরুরি কিছু প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট করে থাকি। কিন্তু প্রয়োজন ফুরালে টিন সার্টিফিকেট অনেকেই বাতিল করার চিন্তা মাথায় আনি। এপর্যায়ে আমরা জানব টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম।

আমরা ঘরে বসে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারলেও ঘরে বসে সেটা বাতিল করতে পারব না। বাতিল করতে হলে টিন সার্টিফিকেটে একটি অঞ্চল কোড থাকবে সেই অঞ্চলের অফিসে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে।

সেখানে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যেতে হবে। যেমন- আপনার টিন সার্টিফিকেট, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি ছবি, জিরো রিটার্ন জমার বিবরণী এবং টিন বাতিল করার একটি আবেদনপত্র। 

টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে জিরো রিটার্ন আপনাকে পরপর ৩ বছর জমা দিতে হবে। ৪র্থ বছরে সবগুলো স্টেটমেন্ট নিয়ে আপনাকে উক্ত অফিসে জমা দিতে হবে। 

উল্লেখ্য আবেদনপত্রে আপনার টিন বাতিল করার একটি যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করতে হবে। অফিস কর্তৃপক্ষ সবকিছু যাচাই-বাছাই করে সন্তুষ্ট হলে আপনার সার্টিফিকেটটি বাতিল করবে এবং তাঁরা আপনাকে এ বিষয়ে জানাবে।

টিন সার্টিফিকেট যাচাই

টিন সার্টিফিকেটের বিবিধ ব্যবহারের কারণে অনেক জায়গা থেকেই প্রশ্ন আসতে পারে সার্টিফিকেটটি আসল কি না। অনলাইনে সার্টিফিকেটটি আছে কি না। সেই ক্ষেত্রে অনেকেই ভেরিফাই কপি দেখতে চায়।

এবার আমরা দেখব টিন সার্টিফিকেট যাচাই করার নিয়ম-

  1. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে যে টিনটি যাচাই করবেন সেটির ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড বসিয়ে লগইন করবেন। 
  2. এ-ধাপে মেনু বারের Change Status বারে ক্লিক করে আপনার টিন সার্টিফিকেট নাম্বারটি বসিয়ে সার্চ করুন।
  3. এবার আপনার সার্টিফিকেটটি যদি অনলাইনে থেকে থাকে তাহলে সকল ইনফরমেশনসহ শো করবে। এবার আপনি সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট করে নিবেন।

আরো পড়ুন:

টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে?

টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে?  এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা অনেকেই জানি না টিন সার্টিফিকেট থাকলে কর দিতে হবে হবে কি না। চলুন জানা যাক-

আমাদের করযোগ্য আয় না থাকলেও অনেক প্রয়োজনে আমরা টিন সার্টিফিকেট করে থাকি। তাই, আমরা করও দিতে চাই না। এজন্য, কর দিতে না চাইলে আমাদের জিরো রিটার্ন জমা দিতে হবে। তাহলে আর কোনো টাকা দিতে হবে না। 

উল্লেখ্য, জিরো রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় একটি স্লিপ দেয় সেটি নিতে হলে আমাদের ২০০০ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হবে। দেশের নতুন বাজেট অনুযায়ী এই স্লিপ ৩৩টি গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজন হয়। তাই, সিদ্ধান্ত এখন আপনার স্লিপটি টাকা দিয়ে নিবেন কি নিবেন না।

আজ আপনাদের সাথে অতি প্রয়োজনীয় বিষয় টিন সার্টিফিকেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। টিন সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply