কি কি জিনিস রিসাইকেল করা যায়?

কি কি জিনিস রিসাইকেল করা যায়? আজকাল বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশেই রিসাইকেল প্রক্রিয়াকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারন এখন সবাই এটা বোঝে যে, বিশ্বকে বাঁচানোর জন্য সম্পদের সঠিক ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। যদিও এই বিষয়টি অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন তবে এখুনো অনেকেরই কী কী জিনিস রিসাইকেল করা যায় সে বিষয়ে তেমন কোন পরিস্কার ধারনা নেই।

রিসাইকেল অর্থ হল পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা। তবে সব বর্জকেই যে পুনরায় ব্যবহারের উপয়াযোগী করা যাবে তা কিন্তু নয়। তবে এটাও ঠিক যে, বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও এখন অনেক কিছুই রিসাইকেল করা হচ্ছে। এই বিষয়টিকে আরো ভালোভাবে জানার জন্য আজকে আমরা রিসাইকেল এর গুরুত্ব ও কী কী জিনিস রিসাইকেল করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

রিসাইকেল কেন গুরুত্বপূর্ন?

রিসাইকেলের সুফল সুদূরপ্রসারী। তবে এর সুফল তখনই পাওয়া যাবে যখন সকলেই রিসাইকেলকে দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে গ্রহন করবে। এর ফলে একদিকে যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ হবে একইসাথে সম্পদের সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করা যাবে।

রিসাইকেলের সুবিধাগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

  1. পরিবেশগত সুবিধা
  2. অর্থনৈতিক সুবিধা

১. পরিবেশগত সুবিধা-

  • রিসাইকেলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টন আবর্জনা ফেলে দেয়ার হাত থেকে বাঁচানো যেতে পারে। একইসাথে এই বর্জ্য ফেলার জন্য অনেক যায়গাও নষ্ট হয় না।
  • বর্জ্য পূনরায় কাজে লাগানোর জন্য মাটি, পানি, ও বায়ু দুষণ কম হয়।
  • রিসাইক্লিং বায়ুমন্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করে।
  • উৎপাদনে শক্তির ব্যবহার কম হয়।
  • নতুন কাঁচামালের তুলনায় রিসাইকেল পন্য কম খরচ হয়।
  • আবর্জনাকে পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ সুন্দর রাখা যায়।

২. অর্থনৈতিক সুবিধা-

  • রিসাইকেলের মাধ্যমে নতুন পন্য উৎপাদনে সরকার এবং উদ্যোক্তা উভয়েরই খরচ কম হয়।
  • নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
  • রিসাইকেলের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ তৈরি হয়।
  • সাধারন বর্জ্যের তুলনায় রিসাইকেল করা বর্জ্যের নিষ্কাশন সহজ।
  • রিসাইক্লিং দেশের পর্যটন শিল্পকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সবাই থাকতে ভালোবাসে।
কি কি জিনিস রিসাইকেল করা যায়
কি কি জিনিস রিসাইকেল করা যায়

কি কি জিনিস রিসাইকেল করা যায়?

রিসাইকেল বর্তমানে কেন বিশ্বজুড়ে এতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে তা এর পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো থেকে বোঝা যায়। আমাদের দেশেও বর্তমান সরকার রিসাইকেলের মাধ্যমে কম খরচে নতুন পন্য উৎপাদনের উপরে জোর দিয়েছেন।

তাই এখন অনেকেই রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কী কী জিনিস রিসাইকেল করা যায় সে বিষয়ে জানা। যদিও আমদের চারপাশে পুনরায় ব্যবহারের জন্য প্রচুর জিনিস রয়েছে তবে এখানে আমরা খুব প্রচলিত কিছু জিনিস নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন এবার তাহলে শুরু করা যাক।

১. মেটাল বা ধাতু

আমরা আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে যে সকল ধাতু ব্যবহার করি তার বেশিরভাগই পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। বহুমুখী উপাদান হওয়ায় ধাতু রিসাইকেল করার জন্য একটি সেরা পছন্দ হতে পারে। ব্যবহৃত ধাতু দিয়ে কিছু তৈরি করা নতুন ধাতু থেকে কিছু তৈরি করার চেয়ে ৭০ শতাংশ কম শক্তি খরচ হয়। 

  • অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলঃ ব্যবহৃত ফয়েলগুলোকে গলিয়ে নিয়ে সহজেই নতুন কিছু তৈরি করে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • অ্যালুমিনিয়াম ক্যানঃ টিনজাত পানীয় আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয়। ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া এই ক্যানগুলো দিয়ে নতুন পন্য তৈরি করা যায়।
  • ইস্পাত ও টিনের ক্যানঃ কফির ক্যান, টিনজাত খাবারের ক্যান ইত্যাদি আমাদের দেশে সবচেয়ে পূনর্ব্যবহৃত উপকরণগুলোর একটি।

২. কাগজ ও কার্ডবোর্ড

আবর্জনা ও বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় কাগজ ও কাগজের তৈরি পন্য। কাগজ এমন একটি উপাদান যেটা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রিসাইকেলিং হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে যে সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৩৩৪ পাউন্ড কাগজ রিসাইকেলিং করা হচ্ছে। 

  • কার্ড বোর্ডঃ এটাই হয়ত কাগজের আইটেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী পুনরায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর থেকে বিভিন্ন রকম বাক্স, টিস্যু কাগজ, প্রিন্টিং পেপার, এবং পোস্টার বোর্ড তৈরি করা যেতে পারে।
  • ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্রঃ ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র এমন একটি জিনিস যা খুব অল্প সময় পরেই ওয়েস্ট বিনে জমা পড়ে। এই কাগজগুলোকেও পরবর্তীতে নানাভাবে পূনরায় কাজে লাগানো যায়।

৩. গ্লাস বা কাঁচ

কাঁচ, কাঁচের বোতল বা জার, কাঁচের বাল্ব ইত্যাদি যদিও কাগজ বা ধাতব পন্যের মত অতটা ব্যপক হারে রিসাইক্লিং হয় না তবে এগুলোকে যে প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার করা যায় না তা কিন্তু নয়। বরং ভাংগা বা ফেলে দেয়া কাঁচের টুকরোকে কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন রকম শো-পিস, বোতল, চুড়ি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। কাঁচকে রঙ অনুযায়ী পৃথক করে রিসাইক্লিং করা হয়।

এর থেকে সৃষ্ট বর্জ্য নিষ্কাশনের প্রয়োজন পড়ে না, কারন সেগুলো সিরামিক ও ইট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে শক্তির অপচয় রোধ হয়, পরিবেশ দূষিত হয় না এবং খরচও কম হয়। ফেলে দেয়া কাঁচ রিসাইক্লিং করে নানা কাজেও ব্যবহার করা হয় যেমন-

  • স্যানিটারি ও সিরামিক পন্য তৈরির কাজে,
  • ইনসুলেশন উৎপাদনে,
  • কংক্রিট ও ইট তৈরির কাজে ইত্যাদি। 

৪. প্লাস্টিক

প্লাস্টিকের পানির বোতল, ঝুড়ি, বাটি ইত্যাদির বেশিরভাগই রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। এই কারনে কী কী জিনিস রিসাইকেল করা যায়- প্রশ্নের উত্তরে প্লাস্টিকের নাম শুরুর দিকেই রাখা যায়। এমনকি এখন আমাদের দেশেই বেশ কিছু উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই ব্যবহৃত প্লাস্টিককে বিশেষ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যমে নতুন পন্য তৈরি করা শুরু করেছে। প্লাস্টিক রিসাইকেল করার মাধ্যমে চলুন দেখি কী কী পাওয়া যায়-

  • পলিথিলিন টেরেফথালেট হল পরিস্কার প্লাস্টিকের পানি ও পানীয়ের বোতল। 
  • এইচডিপিই প্লাস্টিক হল মনোমার ইথিলিন থেকে উৎপাদিত একটি থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার, এবং অ-স্বচ্ছ প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় শ্যাম্পু, লোশন, দুধের বোতল ইত্যাদির অন্যান্য রঙের প্লাস্টিক পন্য। 
  • এছাড়া অন্যান্য রঙ্গিন প্লাস্টিক যেমন স্ট্র থেকে বোতলের ক্যাপ, প্লাস্টিকের চামুচ থেকে রেড সোলো কাপ ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: কি খেলে লিভার পরিষ্কার হয়? আসুন জেনে নেই

৫. ইলেক্ট্রনিক বা ই-বর্জ্য

বিভিন্ন রকম ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটগুলোতে রাসায়নিক উপাদান এবং ধাতু থাকে যেগুলো ল্যান্ডফিল্ডে ফেলে দেয়া হলে তা পরিবেশের জন্য বিপদজনক হতে পারে। তবে আপনি চাইলে এই ই-বর্জয়গুলো সংগ্রহ করে রিসাইকেল করে নতুনভাবে কাজে লাগাতে পারেন।

বাসাবাড়ি থেকে আপনি সহজেই নষ্ট হয়ে যাওয়া কম্পিউটারের পার্টস, স্টেরিও, সেল ফোন, ব্যাটারি, পুরোনো টেলিভিশন ইত্যাদি স্বল্প মূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন। এই পন্যগুলো পরবর্তীতে রিসাইক্লিং মেশিনে বিশেষ পদ্ধতি অনুস্মরণ করে নতুন পন্য ও পন্য তৈরির কাঁচামাল উৎপাদন করা যায়।

৬. কংক্রিট আইটেম

অবাক করা তথ্য হলেও এটা সত্য যে, প্রতিবছর কয়েকশো টন কংক্রিট বর্জ্য নির্মান ও ধ্বংস কাজ থেকে উৎপন্ন হয় এবং এই বর্জ্য পরিবেশ দুষণেও বেশ বড় ভুমিকা রাখে। তবে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে এই বর্জ্য-এর দেশীয় ইস্পাত স্ক্যাপ নতুন ইস্পাত উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।

শেষ কথা

পুরনো ব্যবহৃত জিনিস থেকে নতুন কিছু তৈরির শিক্ষা এখন অনেকে দেশেই শিশুদের স্কুলেই দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও রিসাইকেল এখন আর নতুন কোন ধারনা নয়। আর ফেলে দেয়া বর্জ্য থেকে প্রয়োজনীয় পন্য বের করে আনা নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির জন্য ও পরিবেশের জন্য সুফলদায়ক।

আপনি যদি উপরে আলচিত কী কী জিনিস রিসাইকেল করা যায়-পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় রিসাইকেল সম্পর্কে ভালো ধারনা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। এছাড়াও গুগোলে সামান্য সার্চের মাধ্যমে রিসাইক্লিং পন্য ও পদ্ধতি সম্পর্কে আরো ভালো জ্ঞান পাবেন। আমরাই পারি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে, আর তার শুরু হোক এখান থেকেই। 

Leave a Reply