You dont have javascript enabled! Please enable it! চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম - what is cv ?

চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম – what is cv ?

উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকুরি করারর আবেদন করতে গেলে প্রার্থীকে অবশ্যই একটা প্রফেশনাল সিভি জমা দিতে হয়।

আমাদের দেশের অধিকাংশ চাকরি প্রার্থীই নিজেদের জন্য প্রফেশনাল সিভি লেখার নিয়ম জানে না। তারা হয়তো স্থানীয় কম্পিউটার কম্পোজের দোকান থেকে অথবা পরিচিত কারো থেকে সাদামাটা ও সাধারণ সিভি সংগ্রহ করে তা নিয়োগকর্তার কাছে জমা দেয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের সিভিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা সম্পর্কিত সঠিক তথ্য না থাকায় চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার পাওয়ায় দুষ্কর হয়ে যায়।

এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই আমরা (Consumer64) আজকের আর্টিকেলটি সাঁজিয়েছি। এখানে cv লেখার নিয়ম সিভিতে কি কি লিখতে হয় এবং প্রফেশনাল সিভির ফরম্যাট কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

সিভি লেখার নিয়ম

সিভি কি? (What is CV in Bangla)

CV হলো আবেদনকারীর Curriculum Vitae যেখানে তার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, কাজের অভিজ্ঞতা সহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ থাকে।

সিভির কথা বললেই সাথে আরেকটি বিষয় মাথায় আসে, তা হলো রেজ্যুমে (Resume)। প্রকৃতপক্ষে রেজ্যুমে ব্যবহৃত হয় চাকরির জন্য আবেদন করতে আর সিভি ব্যবহৃত হয় উচ্চশিক্ষা, গবেষণা কিংবা পিএচডি করতে আবেদনের জন্য।

আরো পড়ুন: ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ও শুরু করার জন্য সহজ উপায়

তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেজ্যুমে আর সিভিকে একই মনে করা হয়। সেজন্য এই আর্টিকেলে আমরাও সিভি আর রেজ্যুমেকে এক বিবেচনা করেই সামনে আলোচনা সারবো।

সিভিতে কি কি লিখতে হয়?

একটা জিনিস মনে রাখবেন, আপনি যে পদে চাকরির জন্য আবেদন করছেন সিভিতে অবশ্যই সেই পদের সাথে প্রাসঙ্গিক বিষয়, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা উল্লেখ করবেন। বাড়তি কিছু লিখলে তা আপনার সম্পর্কে নিয়োগকর্তার কাছে নেতিবাচক ধারণা দিতে পারে।

একটা প্রফেশনাল সিভিতে কি কি লিখতে হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • ব্যক্তিগত তথ্য: সিভিতে শুরুতেই আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য উল্লেখ করতে হয়। যেমন নাম, পিতা-মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, যোগাযোগের মাধ্যম, ক্ষেত্রবিশেষে বৈবাহিক অবস্থা ও ধর্ম উল্লেখ করতে হয়।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: ব্যক্তিগত তথ্যের পরে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর, স্নাতক, উচ্চমাধ্যমিক, মাধ্যমিক এই ক্রমানুসারে লিখবেন। একটা টেবিল কিংবা বুলেট পয়েন্টের মাধ্যমে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ দিলে তা দেখতে বেশ সুন্দর দেখায়।
  • দক্ষতা: যে পদের জন্য আবেদন করবেন সে পদের সাথে প্রাসঙ্গিক দক্ষতা উল্লেখ করতে হবে। অবশ্যই এমন কোনো দক্ষতার কথা উল্লেখ করবেন না যা আপনার চাকরির ক্ষেত্রে কোনো প্রয়োজন নেই।
  • কাজের অভিজ্ঞতা: অতীতে কোনো কোম্পানি কিংবা সংগঠনের সাথে কাজ করে থাকলে তা এই অংশে উল্লেখ করবেন। প্রাসঙ্গিক কোনো অর্জন বা পুরষ্কার থাকলে তাও উল্লেখ করতে পারেন।
  • অবজেক্টিভ: এই অংশে আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কে উল্লেখ করতে হবে। যে পদের জন্য আবেদন করছেন কেন সে পদে যেতে চান, ভবিষ্যতে নিজেকে কোন অবস্থায় দেখতে চান ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষেপে লিখতে হবে।
  • যোগাযোগের মাধ্যম: সিভিতে যোগাযোগের মাধ্যম যুক্ত করতে অবশ্যই ভুলবেন না। মোবাইল নাম্বার, ইমেইল অ্যাড্রেস এবং যদি নিয়োগকর্তা চায় তাহলে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের লিংকও (লিংকডইন, ফেসবুক) যুক্ত করতে পারেন।
  • রেফারেন্স: আপনার কাজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কেউ জানে এমন ১-২ জনের রেফারেন্স দিতে হবে। কারো রেফারেন্স দেওয়ার আগে অবশ্যই তার থেকে অনুমতি নিতে হবে।
চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম

চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম বাংলা

যদিও এখন বাংলা সিভির প্রচলন খুবই সীমিত। এখানে সিভি লেখার যে নিয়ম উল্লেখ করছি তা বাংলা ও ইংরেজি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

১. সিভির দৈর্ঘ্য ২ পেইজ হলে তা সবচেয়ে ভালো হয়। তবে ২ পেইজে সম্পন্ন করতে না পারলে সর্বোচ্চ ৩ পেইজ পর্যন্ত লিখতে পারেন। এছাড়া শুরুতে ১ পেইজের একটা কভার লেটার লিখবেন। কভার লেটার লেখার সময় বানান ও গ্রামারের দিকে অবশ্যই নজর দিবেন।

২. সিভি লেখার সময় শব্দচয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ইংরেজিতে এমন কিছু শব্দ বাছাই করবেন তা প্রফেশনাল ও ফরমাল। অতি প্রচলিত শব্দের চেয়ে কিছুটা ন্যাটিভ শব্দ লেখা বেশি ভালো।

৩. সিভিতে এমন কিছু লিখবেন না যা আপনার কাজের সাথে প্রাসঙ্গিক না। ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রার্থীর সিভি দেখে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। তাই এমন কোনো কিছু লেখা উচিত না যা থেকে প্রশ্ন করলে আপনি উত্তর দিতে পারবেন না।

৪. একটা সিভি সকল চাকরির জন্য দিবেন না। মার্কেটার পদের সিভি এবং অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদের সিভির স্ট্রাকচার কখনোই এক হবে না। কোনো পদের চাকরির জন্য সিভি লেখার পূর্বে সে পদ ও কোম্পানি সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নিন এবং শুধু ওই পদকে টার্গেট করেই আলাদা একটা সিভি লিখুন।

৫. মনে রাখবেন একটা নির্দিষ্ট কোনো পদের বিপরীতে শতাধিক আবেদন পড়তে পারে। রিক্রুটারের এত এত সিভি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও ধৈর্য্য থাকে না। তাই সিভিতে অপ্রাসঙ্গিক ও বাড়তি কিছু লিখবেন না, শুধু মূল বিষয়বস্তু কৌশলে ফুটিয়ে তুলতে হবে। যাতে আপনার সিভিটা কোনো রিক্রুটার হাতে নিলেই যেন আপনার সম্পর্কে একটা ধারণা পায়।

৬. সিভিতে ছবি সংযুক্ত করার জন্য ফরমাল ছবি ব্যবহার করবেন। সিভির ফরম্যাট ও কালারের সাথে সমন্বয় করে ছবিতে সলিড কালারের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। তবে সাদা কালারের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করলে তা সব ফরম্যাটেই সুন্দর দেখায়।

প্রফেশনাল সিভির ফরম্যাট কেমন হয়?

সিভি লেখার নিয়ম জানতে প্রফেশনাল সিভির ফরম্যাট কেমন হবে তা বুঝা খুবই জরুরি। কথায় আছে, আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। সিভির ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য।

চাকরির জন্য প্রফেশনাল সিভির ফরম্যাট-

  • হার্ড কপি কিংবা সফট কপি যেকোনোটাই প্রয়োজন হতে পারে। প্রফেশনাল সিভির সাইজ A4 হবে। কাউকে সফট কপি দিলে তা অবশ্যই PDF ফরম্যাটে দিবেন।
  • সিভিতে ১-২ কালারের বেশি এবং ১-২ ধরনের ফন্টের বেশি ব্যবহার করা একদমই অনুচিত। Times New Roman কিংবা Roboto ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন। আর বাংলায় লিখলে SutonnyMJ কিংবা SutonnyOMJ ব্যবহার করতে পারেন।
  • সিভি তৈরি করার সময় এমন কোনো কালার ব্যবহার করবেন না যা অনেক বেশি চোখে বাধে কিংবা দৃষ্টিকটূ দেখায়। সাদা-কালো, গ্রে কিংবা অন্যকোনো ডিপ কালার ব্যবহার করবেন।
  • প্যারাগ্রাফে ফন্ট সাইজ ১২-১৪ এবং সাবহেডিংয়ে ফন্ট সাইজ ১৮-২০ ব্যবহার করলে তা বেশ সুন্দর দেখায়।

সিভি তৈরি অ্যাপ Resume Builder

সিভি তৈরির জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ বা সফটওয়্যার হলো Microsoft PowerPoint ও Microsoft Word। মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার করে দারুণ দারুণ সিভি তৈরি করা যায়।

আপনার যদি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার না থাকে তাহলে মোবাইলেও সিভি তৈরি করতে পারবেন। এজন্য গুগল প্লে স্টোরে অনেক অ্যাপ রয়েছে। এছাড়া Canva, PixelLab অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

ভালো মানের সিভি কোথায় থেকে পেতে পারি

অনেকেই হয়তো নিজে নিজে প্রফেশনাল সিভি তৈরী করতে পারেন না এর জন্য কি কাজ থেমে থাকবে ? না আপনি চাইলে বিশস্ত এবং প্রফেশনাল জায়গা থেকেও আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ITGanj-আইটিগঞ্জ থেকে ভালো মানের সিভি বানিয়ে নিতে পারেন অথবা হোয়াটসঅ্যাপ এ যোগাযোগ করে কথা বলে সিভি বানিয়ে নিতে পারেন

ইতিকথা

চাকরি প্রার্থীদের জন্য নিজের সিভি নিজে লেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন কোনো পদে চাকরির জন্য আবেদন করেন তখন আপনার সিভিটাই আপনার রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে কাজ করে।

আপনি পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউয়ের জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত হবেন কিনা তা আপনার সিভি দেখেই বিবেচনা করা হবে। বুঝতেই পারছেন চাকরি পাওয়ার জন্য সিভি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

এজন্য সঠিকভাবে সিভি লেখার নিয়ম জানতে হবে এবং সিভি লেখার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আর আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সিভিতে কি কি লিখতে হয় তা সম্পর্কে জানাতে পেরেছি। এ বিষয়ে আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Reply