২০২৩ সালের এই সময়ে ব্যাংকিং এর সেবার সব থেকে জনপ্রিয় নাম হলো বিকাশ।যেটি ব্যাংকিং সেবার প্রায় সবকটি স্থানেই নিজের নাম লিখিয়েছে।তাদের সেবার পরিমাণ দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ার ফলে এখন খুব সহজেই কয়েক মিনিটের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে লেনদেন করা যায়। বিশেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে আপনি বিকাশের বিস্তর প্রভাব লক্ষ্য করতে পারবেন।
বর্তমানে বিকাশের বিভিন্ন সার্ভিস চালু রয়েছে।যেমন,বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট, এজেন্ট একাউন্ট।তবে আজকের আয়োজনে আমরা শুধু বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট bkash merchant account নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আপনি হয়তোবা বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট সম্পর্কে কিছুটা জানেন।ব্যবসায়িদের জন্য এই একাউন্টে রয়েছে অনেক সুবিধা।আপনি যদি এই সুবিধা পেতে চান তাহলে আমার সাথে শিখে নিন কিভাবে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে হয়।তো চলুন আজকের আয়োজন শুরু করা যাক।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট কি?
ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য বিকাশ মার্চেন্ট একটি ডিজিটাল প্রকৃয়া।বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে আপনি পার্সোনাল একাউন্টের থেকেও বেশি সুবিধা পাবেন।এই একাউন্টের মাধ্যমে ক্রেতা তার সেবা গ্রহণ করার পর বিক্রেতাকে মোবাইলের মাধ্যমে পে করতে পারে।
অর্থ্যাৎ,আপনি দোকানে গিয়ে কোনো কিছু কিনে সেটার অর্থ সরাসরি না দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনার পার্সোনাল একাউন্ট থেকে বিক্রেতার একাউন্টে খুব সহজেই পাঠিয়ে দিতে পারবেন।
একটি সাধারণ বিকাশ একাউন্টে অনেক লিমিটেশন থাকলেও বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধা অনেক।আর এই সুবিধা পাওয়ার জন্যই ব্যবসায়িরা বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলে থাকে।
আরো পড়ুন: How to open bkash account 2023 – ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে যে ডকুমেন্টস লাগবে
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস লাগবে।নিচে তা দেওয়া হলো;
- পূর্বে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়নি এমন একটি নাম্বার।
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- জাতীয় পরিচয়পত্র /ড্রাইভিং লাইসেন্স/পাসপোর্ট।
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স।
- সচল ব্যাংক একাউন্ট।
- টিন সার্টিফিকেট।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম – bkash merchant account
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা একদম সোজা।আপনি ঘরে বসেই খুব সহজে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে প্রথমে আমার দেওয়া এই লিংকে যেতে হবে। লিংকে প্রবেশ করার আপনি সোজা বিকাশ অফিসিয়াল মার্চেন্ট/এজেন্ট একাউন্ট পেইজে চলে যাবেন।সেখানে আপনি বিকাশ এজেন্ট এবং মার্চেন্ট একাউন্টের দুটো অপশন দেওয়া থাকবে।আপনি সেখান থেকে শুধুমাত্র মার্চেন্ট একাউন্টটি সিলেক্ট করে নিবেন।মার্চেন্ট একাউন্ট সিলেক্ট করার সাথে সাথে আপনার সামনে একটা ফরম চলে আসবে। এরপর সেখানে আপনি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম,ঠিকানা, আর্থিক তথ্যসহ ইত্যাদি বিষয় দিয়ে আবেদন ফরমটি পূরণ করুন। পরবর্তীতে বিকাশ আপনার সকল তথ্য যাচাই করে মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার বিষয়ে যোগাযোগ করবে।
আপনি অনলাইনের পাশাপাশি আপনার নিকটস্থ বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে গিয়েও আবেদন জমা দিতে পারবেন।
মার্চেন্ট একাউন্টের জন্য আবেদন কিভাবে করবো ?
আমরা জানি যে বিকাশ ওয়েবসাইটে গিয়ে মার্চেন্ট একাউন্ট সিলেক্ট করার সাথে সাথেই একটি আবেদন ফরম চলে আসবে।প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।তাই এখন দেখবো কিভাবে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়।
- আপনার দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামঃ এই বক্সে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম দিতে হবে।
- জেলা নির্বাচনঃ দ্বিতীয় ধাপে আপনার জেলার নাম দিতে হবে।অর্থ্যাৎ আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে স্থানে সেই স্থানের জেলার নাম দিবেন।
- এলাকা নির্বাচন করুনঃ এই স্থানে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেই এলাকায় সেটি নির্বাচন করুন।
- যোগাযোগ করবেন যার সাথেঃ এই স্থানে বিকাশ যার সাথে যোগাযোগ করবে তার নাম লিখতে হয়।যেহেতু আপনার নামে একাউন্ট খুলচ্ছেন সেহেতু আপনার সাথে বিকাশ কর্মীদের যোগাযোগ করার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের সাথে মিলিয়ে নিজের নাম লিখে দিবেন।
- ফোন নাম্বারঃ ফোন নাম্বারের স্থানে আপনার নিজের নাম্বার দিয়ে দিবেন।
- অতিরিক্ত তথ্য যা আপনি জমা দিতে চানঃ এই বক্সে আপনি অতিরিক্ত কিছু তথ্য দিতে পারেন।যেমন আপনার এবং আপনার ব্যবসা সম্পর্কে।
- ইমেইল ঠিকানাঃ এখানে আপনার একটি ইমেইল দিয়ে দিবেন।যাতে করে বিকাশ একাউন্ট সম্পর্কিত সকল তথ্য ইমেইলের মাধ্যমে দিতে পারে।
- আপনার কি জাতীয় পরিচয়পত্র আছেঃ আপনার যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে তাহলে এখানে আপনি হ্যা, সিলেক্ট করে দিবেন।আর যদি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তাহলে ‘না’ সিলেক্ট করে দিবেন।
- আপনার কি ট্রেড লাইসেন্স আছেঃ এই স্থানে আপনার ট্রেড লাইসেন্স থাকলে ‘হ্যা’দিবেন আর না থাকলে ‘না’ দিবেন।
- ট্রেড লাইসেন্স নাম্বারঃ আপনার যদি বৈধ ট্রেড লাইসেন্স থাকি তাহলে নিচের বক্সে আপনার ট্রিড লাইসেন্স নাম্বার দিয়ে দিবেন।
- ট্রেড লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখঃ এই স্থান আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ দিবেন।
- আপনার কি ব্যাংক একাউন্ট আছেঃ আপনার যদি ব্যাংক একাউন্ট থাকে তাহলে ‘হ্যা’ সিলেক্ট করুন আর না থাকলে ‘না’ সিলেক্ট করুন।
- আমি রোবট নইঃ পরবর্তী ধাপে আমি রোবট নই এ একটা টিক দিয়ে ক্যাপচা পূরণ করুন।
- সাবমিটঃ সর্বশেষে উপরের সকল তথ্য ঠিক আছে কিনা সেটা চেক করে সাবমিট অপশনে ক্লিক করুন।
সাবমিটে ক্লিক করার পর সফলভাবে আপনার আবেদন ফরমটি বিকাশ মার্চেন্টের জন্য এপ্লাই হয়ে যাবে।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ক্যাশ আউট চার্জ কত ?
আপনি যদি ইতিমধ্যেই বিকাশ মার্চেন্টার হযে থাকেন তাহলে এখন আপনার কাস্টমার কোনো কিছু কিনলে সোজ বিকাশে পে করতে পারবে।এভাবে আপনার একাউন্টে টাকা জমা হতে থাকবে।কিন্তু এখন সেই টাকা কিভাবে তুলবেন? অবশ্যই ক্যাশ আউট করতে হবে।
আপনি জানলে অভাক হতে পারেন বিকাশ মার্চেন্টের জন্য ক্যাশ আউট চার্জ মাত্র ১.৭০%।যেখানে একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য কাটা হয় ১.৮৫%।
তবে আপনি যদি আপনার লেনদেন আরও সামনে বাড়ান তাহলে ভবিষ্যতে আরোও কমেও মার্চেন্ট একাউন্টের ক্যাশ আউট করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: Bkash Cash Out Charge 2023 – বিকাশে ক্যাশ আউট চার্জ।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা কি?
আমাদের পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট আছে তাহলে কেনো মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে হবে যাদের এই প্রশ্নো মনে জেগেছে তারা নিচে দেখুন;
- ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা হয়।কারন মার্চেন্ট একাউন্টে ক্যাশ আউট চার্জ পার্সোনাল একাউন্টের চাইতে একটু কম।
- মার্চেন্ট একাউন্টের আরেকটি সুবিধা হলো এখানে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো লিমিটেশন নেই।অর্থ্যাৎ আপনি যত টাকা খুশি লেনদেন করতে পারবেন।
- আপনি মার্চেন্ট একাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি আপনার ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন।
- টাকা গুনার কোনো কারন নেই আপনি ক্রেতার টাকা সরাসরি আপনার বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে নিতে পারবেন।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর অসুবিধা ?
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও কিন্তু রয়েছে।মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করে শুধুমাত্র পার্সোনাল একাউন্ট বা রিটেইল একাউন্টে লেনদেন করা যায়।অর্থ্যাৎ, পার্সোনাল এবং রিপেইল একাউন্ট ছাড়া আপনি কোনো এজেন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন না।
এছাড়াও মার্চেন্ট একাউন্টের আরেকটি বড় সমস্যা হলো আপনার সরাসরি ব্যাংক গিয়ে টাকা তুলতে হবে।কিন্তু পার্সোনাল একাউন্টে হঠাৎ টাকা উঠানো যায়।
পরিশেষে
আমাদের আজকের আয়োজনে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট bkash merchant account সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা জেনেছি মার্চেন্ট একাউন্ট কি?,একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?,একাউন্ট করার নিয়ম ইত্যাদি।আশা করি আপনার বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ আমাদের পথ কে কতটুকু সহজ করে দিয়েছে বুজতে পারচ্ছেন। এই সেবা ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনার কাস্টমার থেকে টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়াও অনলাইন বিজনেস এর জন্যও কিন্তু মার্চেন্ট একাউন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
FAQ-প্রশ্নোত্তর
ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য বিকাশের কোন একাউন্ট ব্যবহার করা হয়?
উত্তরঃ মার্চেন্ট একাউন্ট।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট কি?
উত্তরঃ ব্যবসায়িক ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য বিকাশ একাউন্ট। যেটা দিয়ে কাস্টমারের টাকা রাখাসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রম করে থাকে।
bKash একাউন্টের ক্যাশ আউট চার্জ কত?
উত্তরঃ ১.৭০℅ অর্থ্যাৎ হাজারে দাঁড়ায় ১৭ টাকা।